অবশেষে আশঙ্কা সত্যি প্রমাণ করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিদেশি লগ্নিতে তৈরি রাজ্যের প্রথম টেলিকম যন্ত্রপাতি তৈরির সংস্থা নোকিয়া-সিমেন্স নেটওয়ার্ক (এনএসএন)। মৌখিক ভাবে কর্মীদের জানানো হয়েছে স্বেচ্ছাবসর দেওয়ার কথা। এনএসএন-এর তরফে দাবি, বিশ্ব জুড়ে সংস্থা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসেবেই ভারতে এই পদক্ষেপ। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, স্বেচ্ছাবসর পরিকল্পনা নিয়ে প্রস্তুত কর্তৃপক্ষ। যে কোনও দিন ঝুলতে পারে নোটিস।
নোকিয়া-সিমেন্স নেটওয়ার্ক-এ কর্মীদের চাকরির গড় মেয়াদ ১৫-১৮ বছর। ওই সূত্রটি জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত যে স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প চূড়ান্ত হয়েছে, তাতে দেড় থেকে দু’বছরের বেতন প্যাকেজ পাবেন কর্মীরা।
গত এক বছরের বেশি সময় ধরে অনিশ্চয়তার অন্ধকারে দিন কাটাচ্ছিলেন সন্টলেক সেক্টর ফাইভে সংস্থার কারখানার কর্মীরা। উৎপাদন প্রায় বন্ধ থাকায় ৮০ জন কর্মীর বিশেষ কোনও কাজই ছিল না। তবে আয় না-থাকলেও, ব্যয়ের বহর কমেনি। নিজেদের জমিতেই কারখানার ভাড়া গুনতে হচ্ছে মাসিক ৫০ লক্ষ টাকার মতো। রয়েছে কর্মীদের বেতন ও অন্য সুযোগ-সুবিধা বাবদ খরচের চাপ। সব মিলিয়ে যা মাসে ১ কোটি টাকার কাছাকাছি। অথচ লোকসানের এই বোঝা হাল্কা করতে ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও পরিকল্পনা তৈরি হয়নি।
তবে এত অনিশ্চয়তা নিয়েও আশায় বুক বেঁধেছিলেন কর্মীরা। কারণ কয়েক মাস আগেই বিধানসভার স্থায়ী কমিটি কারখানা ঘুরে গিয়ে রিপোর্ট দিয়েছেন। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকও করেন কারখানার প্রতিনিধিরা। কর্মীদের মতে, রাজ্য সরকার কারখানার জমি নিয়ে চাপ দিলে কিন্তু পরিস্থিতি বদলাতে পারত। কারণ ১৯৮৭-তে জলের দরে রাজ্যের কাছ থেকেই জমি পায় জার্মান বহুজাতিক সিমেন্স। সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ তখনও ফাঁকা মাঠ। বৈদ্যুতিন ও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প গড়ার লক্ষ্যে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সরকার সিমেন্স ইন্ডিয়াকে ১১ একর জমি দেয়। রাজ্যের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, এই জমি উৎপাদন শিল্পেই ব্যবহার করার কথা।
অথচ ২০০৭-এ সিমেন্স ও নোকিয়ার যৌথ উদ্যোগ এনএসএন তৈরির সময়ে ওই ১১ একরের মালিকানা সিমেন্সের হাতেই থেকে যায়। পরে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনায় ঠিক হয়, ওই জমিতে তথ্যপ্রযুক্তি পরিকাঠামো গড়বে সিমেন্স। আর সেখানেই ঠাঁই পাবে এনএসএন। সিমেন্স অবশ্য কথা রাখেনি। উল্টে প্রতি বর্গফুটে ৫০ টাকা হারে ভাড়া নিচ্ছে এনএসএন-এর কাছ থেকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এর মধ্যেই গত ২০১০-’১১ সালে সংস্থার আয় কমে ৫%। গত বছরের শেষেই তাদের তরফে জানানো হয়, পুনর্গঠনের পথে হাঁটছে সংস্থা। এতে বিশ্ব জুড়ে ধাপে ধাপে ছাঁটাই হবেন ১৭ হাজার কর্মী। যার মধ্যে রয়েছে ভারতও। আর যে দুই সংস্থার যৌথ প্রয়াসে এ রাজ্যে এনএসএন-এর পথ চলা শুরু, সেই নোকিয়া ও সিমেন্সও জানিয়ে দেয় সংস্থায় নতুন করে আর টাকা ঢালবে না তারা। |