সবুজ গাছ কেটে নেওয়া হচ্ছে ইচ্ছে মতো। এমনই অভিযোগ কুলটি ইস্পাত শহরের বাসিন্দাদের। গাছ কাটায় সেল গ্রোথ ডিভিশনের কুলটি কারখানা কর্তৃপক্ষ জড়িত রয়েছেন বলেও তাঁদের দাবি। কুলটি থানায় এ ব্যাপারে অভিযোগও করেছেন তাঁরা। স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে বন দফতরেও। কোনও ফল না হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী, বনমন্ত্রী ও পরিবেশমন্ত্রীকেও তাঁরা চিঠি পাঠিয়েছেন বলে দাবি বাসিন্দাদের। কারখানা কর্তৃপক্ষ অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সেল গ্রোথ ডিভিসনের কুলটি কারখানার জমিতে শিশু, সেগুন, মেহেগনি, অশ্বত্থ-সহ বেশ কিছু পুরনো মূল্যবান গাছ রয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রায়ই এক দল লোক এই সব গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আগে রাতের অন্ধকারে গাছ কেটে পাচার হত। ইদানীং তা চলছে দিনের বেলাতেই। কারখানার আধিকারিকদের পুরনো বাংলো বাড়িতেও মূল্যবান গাছ কেটে নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি কুলটি থানার অদূরে একটি শতাব্দী প্রাচীন অশ্বত্থ গাছ কাটার সময়ে বাসিন্দারা বাধা দেন। এ নিয়ে বচসা বাধে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, গাছ কাটার তত্ত্বাবধানে থাকা এক ব্যক্তি তাঁদের জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই গাছ কাটা হচ্ছে। এর পরেই দল বেঁধে গিয়ে বাসিন্দারা কুলটি থানায় অভিযোগ জানান। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছ কাটতে আসা লোকজনকে সরিয়ে দেয়। বাসিন্দাদের তরফে সুব্রত সিংহের অভিযোগ, “ওই কারখানার কর্তৃপক্ষ সরাসরি গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত বলে আমাদের ধারণা।” |
কুলটি থানার কাছেই নির্বিচারে কাটা হচ্ছে গাছ। ছবি: শৈলেন সরকার |
উপযুক্ত ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে ওই বাসিন্দারা দুর্গাপুরের ডিএফও-র কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, বন দফতরকে জানিয়েও কোনও ফল হচ্ছে না। তার পরেও একাধিক গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে বলে তাঁদের দাবি। বাধ্য হয়ে পুরো ঘটনাটি মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যের বনমন্ত্রী ও পরিবেশমন্ত্রীকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
দুর্গাপুরের ডিএফও কুমার বিমল বলেন, “আমরা অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছি। প্রাথমিক তদন্তের পরে একটি সবুজ গাছ কাটার প্রমাণও মিলেছে। তবে সময় মতো অভিযান চালানোয় গাছটি গোড়া থেকে কাটতে পারেনি। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি আরও জানান, ইস্কো কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে, আর কোথায় কোথায় তাঁরা সবুজ গাছ কেটেছেন। পাশাপাশি, বন দফতরও শহরের সর্বত্র খোঁজ শুরু করেছে।
কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সবুজ গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কারখানার দায়িত্বে থাকা সেল গ্রোথ ডিভিশনের ডিজিএম কৃষ্ণকান্ত তিওয়ারি। তিনি বলেন, “আমরা কোনও সবুজ গাছ কাটিনি। এক শ্রেণির দুষ্ট লোক অপপ্রচার করছে। বিদ্যুতের আলো যাতে ঠিক মতো ছড়াতে পারে, সে জন্য কিছু সবুজ গাছের ডাল ছাঁটা হয়েছে। এ ছাড়া শহরের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কিছু শুকনো গাছ কাটার অনুমতি নেওয়া হয়েছে বন দফতরের কাছে। সেগুলি কাটা হবে।”
কিছু শুকনো গাছ কাটার অনুমতি দেওয়ার কথা স্বীকার করে ডিএফও জানান, এর পরিবর্তে কিছু গাছ লাগানোর পরামর্শও দেওয়া হয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষকে। সে সব ঠিক মতো মানা হয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। |