অথচ পালটে দেওয়ার সুযোগ ছিল’ (১০-৪) শীর্ষক নিবন্ধে অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় সমাজের একটি মৌলিক সমস্যার কথা ব্যক্ত করেছেন। তাঁকে ধন্যবাদ। তাঁর বিশ্লেষণের কিছু অংশের সঙ্গে কিঞ্চিৎ ভিন্ন মত পোষণ করে লিখছি।
২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের পট পরিবর্তনের ফলে খেলাটা পালটে দেওয়ার সম্ভাবনা প্রকৃতপক্ষে ছিল না। কারণ, গোড়ায় গলদ। গুণগত পরিবর্তন সাধনের জন্য যে গুণাবলিতে সম্পৃক্ত হতে হয়, তা অর্জিত হয়নি ‘পরিবর্তনে’র কান্ডারি মমতার মধ্যে বা সমাজের ব্যাপক অংশে। বাইরের পরিবেশ দেখে মনে হয়েছে ডিমে তা দেওয়া হচ্ছে, নতুন প্রাণ আসবে। আসলে ডিমটাই তো সঠিক গুণমানের নয়। ক্ষমতায় আসার জন্য নেত্রী নানা রকমের কৌশল অবলম্বন করেছেন নীতিকে বিসর্জন দিয়ে। অনেক কিছুর মধ্যে দু’একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। যেমন, জঙ্গলমহলে যৌথবাহিনী প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলেন, কিন্তু ক্ষমতায় এসে তা করেননি। বলেছিলেন, মাওবাদী বলে কিছু নেই। ক্ষমতায় এসে বলেছেন, মাওবাদী কারা এবং কারা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন সব তিনি জানেন। নীতিহীন কৌশলে সাময়িক ফললাভ হতে পারে, কিন্তু তাতে সমাজের মৌলিক কোনও লাভ হয় না। নীতিহীনতার জন্যই আশির দশকের মাঝামঝি থেকে সি পি এম-এ ঠিকাদার দুষ্কৃতীরা আশ্রয় পেয়েছিল। বর্তমান শাসক দলে প্রথম থেকেই তারা প্রবল দাপটে আশ্রয় ও প্রশ্রয় পেয়েছে। |
মানুষের সমর্থন ছিল সি পি এম-এর অপসারণে। অথবা বলা যায়, সি পি এম নামধারী বেশ কিছু মানুষকে ক্ষমতা থেকে সরানোতে। কিন্তু মানুষের মনন তো সংগঠিত হয়নি নতুন মূল্যবোধযুক্ত সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে। যেখানে দারিদ্র, শোষণ, বঞ্চনা, অবদমন, দখলদারি, হিংসা দ্রুত কমবেথাকবে বহুত্বের সুষম সমন্বয়। বিগত তিরিশ বছরে তার চর্চা হয়নি। সে নিয়ে বৃহৎ কোনও আন্দোলনও হয়নি। কোনও প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল সে কাজ করেনি। যেমন, ধর্মবোধের উপর কোনও বিরূপতা না রেখেই বলছি, সি পি এম শাসন যত দীর্ঘায়িত হয়েছে, পাড়ায় পাড়ায় শনিমন্দির তত বেড়েছে। ধর্মবোধ এবং তার চর্চা মানুষের মননে উন্নতি আনে, শান্তি দেয়। কিন্তু পুজোআর্চা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অসহায় মানুষের একটা নির্ভরতার ক্ষেত্র। সি পি এম নেতারা সেই ভরসা দিতে পারেনি অতি নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের মধ্যে। তাদের দুর্দশামোচনের জন্য প্রকৃত অর্থে সমাজ পরিবর্তনের কোনও স্বপ্ন দেখাতে পারেনি অথবা বলা যেতে পারে, সেই কাজ সফল করতে তাদের অনীহা ছিল। কারণ, তার জন্য যা করতে হবে তাতে তাদের ক্ষমতাসর্বস্ব সুবিধাবাদী রাজনীতির অবলুপ্তি ঘটবে।
সি পি এম সরকার অপসারিত হয়েছে। কিন্তু সমাজশরীরের গভীরে রয়েছে অসুখের অস্তিত্ব। তাই সে বারবার জানান দেবেই। আর ভয়ঙ্কর ভাবে দিচ্ছেও। এ যেন, পাড়ার দোকান থেকে কিনে প্যারাসিটামল খেয়ে প্রচণ্ড কাঁপুনির জ্বর, গা-হাত-পা ব্যথা কমেছে, কিন্তু প্রকৃত রোগটা থেকে গেছে গভীরে। সমাজব্যবস্থাটার চিকিৎসা চাই। আমাদের অনেকে মিলে তা করতে হবে।
মৃগেন্দ্রনাথ গাঁতাইত। শ্রীপুর পূর্ব, বোড়াল, কলকাতা-১৫৪
|
পরিবর্তন! অতঃপর? রাজভবন, ২০১১ |
ফের পরীক্ষা!
ফে
র ভূগোল পরীক্ষা দুই স্কুলের পড়ুয়াদের’ (আ ব প ২৪-৪-১২) শিরোনামে প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আমি জানাতে চাই যে, ‘...ওদের পক্ষে এক দিকে ভালই হয়েছে। আগের পরীক্ষায় যদি কেউ খারাপ করে থাকে, তা হলে এ বার ভাল করতে পারবে।’ এই কথা আমি কখনওই বলিনি। আমি জানি যে একটি বোর্ডের পরীক্ষার প্রায় দুই মাস পরে, হঠাৎ এক সপ্তাহের মধ্যে আবার একটি পরীক্ষার জন্য নিজেকে পুনরুদ্যমে তৈরি করা কতটা কঠিন। কিন্তু যখন আমরা নিরুপায়, তখন আমাদের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হল ছাত্রীদের মনে যাতে কোনও সংশয় বা নেতিবাচক চিন্তাধারা না আসে সেটা দেখা, ও তাদের মনোবল বাড়ানোর জন্য তাদের উৎসাহ দেওয়া। সুতরাং আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত বোধ করলাম, এই দুঃসময়ে আমাদের ছাত্রীদের মানসিক দৃঢ়তা দেখে। অভিভাবকদেরও আমি বলেছিলাম যে, ‘আপনারা ধরে নিচ্ছেন কেন যে, তারা এ পরীক্ষায় অসফল হবে?’
দেবী কর। ডাইরেক্টর, মডার্ন হাই স্কুল ফর গার্লস, কলকাতা
প্রতিবেদকের জবাব: অধ্যক্ষার সঙ্গে টেলিফোনের কথার ভিত্তিতেই তাঁকে উদ্ধৃত করেছি। যদি উনি বলেন ‘ও কথা বলিনি’, তা হলে প্রতিবেদক নিরুপায়।
|
আজকাল বেশ কিছু দিন যাবৎ পথেঘাটে একটা নতুন স্টাইল দেখা যাচ্ছে। নিচু ক্লাসের স্কুলছাত্র থেকে উঁচু ক্লাসের ও সম্ভবত কলেজেরও কিছু যুবক এবং অফিসযাত্রী পিঠে বস্তা (বস্তাই বলব) নিয়ে চলাফেরা করছে। হাত দুটো মুক্ত থাকাতে তারা বেশ স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল বোধ করছে। কিন্তু ভিড় বাসে-ট্রেনে তাদের সহযাত্রীদের যে কী অসুবিধে হচ্ছে, তা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই বুঝছেন।
তপনকুমার মল্লিক। রিষড়া, হুগলি |