পরীক্ষায় টোকাটুকির অভিযোগ নিয়ে হইচইয়ের পরে গুড়গাঁওতে পাওয়া গিয়েছে মেঘালয়ের ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ। আবার রিমোট নিয়ে কাড়াকাড়ির সময় বন্ধুর ঘুষিতে বেঙ্গালুরুতে নিহত হয়েছেন মণিপুরি যুবক। এই দুই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘মূল ভূখণ্ড’ বনাম উত্তর-পূর্বের মধ্যে ফের মাথা চাড়া দিয়েছে বিভাজনের রাজনীতি, বিভেদের অভিমান। ২৪ এপ্রিল মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমার ভাইঝি ডানা সিলভার এম সাংমার অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে মেঘালয় থেকে দিল্লি তোলপাড় হচ্ছে। তদন্তে নেমেছে পুলিশ ও মহিলা কমিশন। আজ, জাতীয় তফসিল জাতি ও উপজাতি কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন মুকুল। ১৮ এপ্রিল বেঙ্গালুরুর আচার্য স্কুল অফ আর্কিটেকচারের ছাত্র ১৯ বছরের রিচার্ড লোইতাম যে ভাবে বন্ধুর ঘুঁষিতে জখম হয়ে মারা গেলেন, তাও উত্তর-পূর্ব মেনে নিতে পারেনি। ফেসবুকেও ডানা-লোইতামের মৃত্যুর ন্যায়বিচার চেয়ে জনমত সংগ্রহের কাজ চলছে। “আমি নিজেই প্রশ্নের উত্তর লিখেছিলাম। টোকাটুকি করিনি। এই পরীক্ষার জন্য ভাল ভাবে পড়াশোনা করেছিলাম,”অ্যামিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ফর্মে নিয়মভাঙা পরীক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ থাকে তাতে আত্মপক্ষ সমর্থনে ওই কথাগুলি লিখেছিলেন ডানা। পরে দরজা ভেঙে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। ডানার উত্তরপত্র ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে গুড়গাঁও পুলিশ। মহিলা কমিশন খতিয়ে দেখছে, কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নিলেন ডানা। কমিশনের তদন্তকারীরা অ্যামিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ উপাচার্য, পরীক্ষাকেন্দ্রে থাকা শিক্ষার্থী ও ডানার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ১০ দিনে রিপোর্ট জমা দেবেন তাঁরা।
|
মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী আজ দিল্লি এসে সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করে সুবিচার দাবি করেছেন। আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ ছাড়াও ডানার পরিবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তফসিল জাতি ও উপজাতিভুক্তদের সম্পর্কে বিরূপ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব রাখার অভিযোগেও মামলা করেছেন। মুকুল সাংমার দাবি, তুরার শেরউড স্কুল ও গুয়াহাটির সেন্ট্রাল আইটি কলেজের মেধাবী ছাত্রী ডানার টুকে পাশ করার প্রয়োজন ছিল না। উত্তর-পূর্বের মেয়ে বলেই পরীক্ষক-পরিদর্শক তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনেন।
সম্প্রতি উত্তর-পূর্বের একাধিক মেয়ে রাজধানীতে শ্লীলতাহানির মুখে পড়ায় দিল্লি বনাম উত্তর-পূর্বের কাজিয়া তুঙ্গে। তার মধ্যেই, ডানা ও লোইতামকাণ্ড উত্তর-পূর্বের বঞ্চনা-প্রসঙ্গ আরও উস্কে তুলেছে। ফেসবুকে লোইতাম ও ডানার মৃত্যুর ন্যায়বিচার চেয়ে শুরু হয়েছে অভিযান। কেউ কেউ লিখেছেন, “ডানার আত্মহত্যা উত্তর-পূর্বের ছাত্রীদের প্রতি বঞ্চনার প্রতিবাদ। এই বিভেদ ঘোচার নয়।”
লোইতামের মৃত্যু ও ছাত্রাবাস কর্তৃপক্ষের গাফিলতির প্রতিবাদে ‘মূল ভূখণ্ড’-এর বিরুদ্ধে মণিপুর, বেঙ্গালুরু ও দিল্লিতে আজ একজোট হন উত্তর-পূর্বের তরুণ প্রজন্ম। লোইতামের মা বিদ্যাবালিদেবী নিজে চিকিৎসক। তিনি, কর্তৃপক্ষ ও ছেলের বন্ধুদের সাফাই মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “কর্তৃপক্ষ এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। কর্নাটক সরকারও চুপ। আমরা বিচার চাই।”
রবিবার ইম্ফলে লোইতামের পাড়ায়, সহস্রাধিক মানুষ মোমবাতি মিছিল করেন। লোইতামের খুড়তুতো বোন আলসি শর্মা দিল্লির যন্তরমন্তরে নীরব প্রতিবাদে নেতৃত্ব দেন। ইন্ডিয়া গেটে সন্ধ্যা ৬টা থেকে জ্বলে ওঠে প্রতিবাদী মোমবাতি। বেঙ্গালুরু টাউন হলে প্রতিবাদ সভা করেন উত্তর-পূর্বের ছাত্রছাত্রীরা। উত্তর-পূর্বের ছাত্র সংগঠন নেসোর তরফেও ‘মূল ভূখণ্ডের’ বিরূপ মনোভাবের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
|