দক্ষিণ কলকাতা
উদ্যোগী পুরসভা
পর্দা উঠবে
ত দিন পুনর্বাসনের জটেই আটকে ছিল মঞ্চ নির্মাণের কাজ। তবে সম্প্রতি এই জট কাটাতে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা।
সিআইটি রোডে কলকাতা পুরসভার জমিতে প্রস্তাবিত মঞ্চের জন্য নির্মিত বাড়ির ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে ছড়ানো চামড়ার টুকরো ও আবর্জনার স্তূপ। সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে কুকুর। তার মধ্যেই একতলা জুড়ে চলছে জুতো তৈরির কাজ। কোথাও রয়েছে দোকানঘরও। দোতলা, তিনতলাতেও একই ছবি। একতলার একাংশে কয়েক জন ব্যবসায়ীকে দোকানঘর ভাড়া দিয়েছে পুরসভা। বাকি সবটাই ‘বেদখল’, বক্তব্য পুরসভার।
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুরসভার জমিতেই পুর কর্তৃপক্ষ অনেক দিন আগে বিদ্যাসাগরের নামাঙ্কিত একটি মঞ্চনির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু মূলত পুনর্বাসন সমস্যার জন্যই তা বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু মঞ্চের পরিকাঠামো এবং বহুতল বাড়িটির নির্মাণও অনেকটাই হয়ে গিয়েছে। বাড়িটি ফেলে রাখলে পুরসভারই ক্ষতি। তাই এই প্রকল্প রূপায়ণে পুরসভা বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করবে। অন্য দিকে পুনর্বাসন কী ভাবে করা যায় সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছি।” স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, শহরে এত নাগরিক সমস্যা থাকলেও সাংস্কৃতিক মঞ্চ তৈরি কি পুরসভার কাজ?
শোভনবাবু বললেন, “অনেক আগেই সিপিএম পরিচালিত পুরবোর্ড শহরে মঞ্চ নির্মাণের জন্য বহু টাকা খরচ করে পরিকাঠামো করেছিল। কিন্তু তার পরে কাজ আর এগোয়নি। এই প্রকল্পের জন্য পুরসভার কোনও লোকসান যাতে না হয় সে জন্যই দ্রুত কাজ শুরু করব।”
১৯৯৩-এ এই প্রকল্পটি শুরু হয় এবং ২০০০-এ মঞ্চটির পরিকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়। তার পরে প্রস্তাবিত মঞ্চটি এই অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে চামড়ার স্তূপে দু’একবার আগুনও লেগেছে। অবশ্য ব্যবসায়ীদের তৎপরতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “এই প্রকল্প রূপায়ণে সবচেয়ে বড় অসুবিধে এখানকার জুতো-ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন। পুনর্বাসন ছাড়াও এই প্রকল্পকে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করার কথাও সেই সময়ে ভেবেছিলাম। কিন্তু পরে তা কার্যকর হয়নি।”
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, পুরসভার প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট দফতর প্রায় দু’কোটি টাকা খরচ করে সিআইটি রোডে বিরসুলহাট জুতো বাজারে পুরসভার জমিতেই এই মঞ্চ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই জমিতেই সে সময় প্রায় ন’শো জুতো ব্যবসায়ী ব্যবসা করতেন।
নির্মাণ হওয়ার সময়ে তাঁদের এই জমি থেকে স্থানান্তরিত করা হয়। পরে এই ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের জন্য সি আই টি রোড এবং উল্টোডাঙার কাছে দু’টি জমিও দেখানো হয়। কিন্তু সেখানে এই ব্যবসায়ীরা যেতে চাননি বলে পুরসভার দাবি। এর পরে, পুরসভা এই ন’শো জনের মধ্যে থেকেই ২০ জন ব্যবসায়ীকে দোকানঘর ভাড়া দেয়। বাকি ব্যবসায়ীরা এই বাড়ির সামনে রাস্তা এবং ফুটপাতেই জুতোর ব্যবসা করেন।
পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এক আধিকারিক জানান, এই বাড়ির পেছনের অংশটির দু’টি তল পুরসভার কাছ থেকে একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা কিনেছিল। তবে, এই অংশেও বাড়ির অনেক কাজ বাকি রয়েছে। যে-সব ব্যবসায়ীকে দোকানঘর ভাড়া দেওয়া হয়েছে তাঁরা নিয়মিত ভাড়াও দেন না বলে এই আধিকারিক অভিযোগ করেন।
সিপিআইএমএল পরিচালিত বিরসুলহাট লেদার্স হকার্স ইউনিয়নের সভাপতি দিবাকর ভট্টাচার্য বলেন, “যাঁরা ব্যবসা করছেন তাঁদের পুনর্বাসন প্রয়োজন। সেটি না হওয়া পর্যন্ত এই প্রকল্প আটকে রয়েছে। তবে এখানে কী ভাবে তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়া হবে সেই ব্যাপারে চিন্তা করতে পুরসভাকে জানিয়েছিলাম। এমনকী, অনেকে যাঁরা এখানে পুরসভার কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছেন তাঁরা ভাড়া দেওয়া সত্ত্বেও কোনও পরিষেবা পাচ্ছেন না। পুরসভাকে জানানোর পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” অন্য দিকে আইএনটিইউসি-র বিরসুলহাট লেদার্স অ্যান্ড লেদার গুডস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি প্রমথেশ সেন বলেন, “এখানে যদি মঞ্চ নির্মাণ করতেই হয় তাহলে ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন দেওয়া হোক। তা না হলে এই বাড়িতেই একটি আধুনিক মানের জুতোর বাজার করে দেওয়া হোক। অনেক ব্যবসায়ী তার জন্য টাকা দিতেও রাজি।” কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (বাজার) দেবাশিস কুমার বলেন, “এখানে মঞ্চ তৈরি হলে যাঁদের দোকান আছে তাঁদের পুনর্বাসন অবশ্যই দেওয়া হবে। প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা চলছে।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.