দুশ্চিন্তার কাঁটা বলতে ছিলেন দুই বাঁ হাতি। দুই প্রাক্তন নাইট। ঘরের ছেলের আইপিএল ফাইভ অভিযান হাউইয়ের মতো হু-উ-স করে শুরু হয়েও এখন হঠাৎ গোঁত্তা খেয়ে জীবনদায়ী ওষুধের সন্ধানে। ৫ মে-র অভূতপূর্ব দ্বৈরথের আগেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পুণে ওয়ারিয়র্স টানা দু ম্যাচ হেরে সেমিফাইনালের দৌড় থেকে অনেকটাই লাইনচ্যুত। আর দ্বিতীয় জন ক্রিস গেইল। যিনি শুক্রবার বিকেলে ইডেনে পা রেখে পুরনো টিমকে উপহার দিলেন উপেক্ষা, অবজ্ঞা ও ঔদাসীন্য।
এই বাঁ হাতির ঔদাসীন্য যাতে আজ শনিবার রাতে ইডেনে ঝড়ে রূপান্তরিত না হয়ে নাইটদের দিকে ধেয়ে আসে, সারা দিন তার নীল-নকশার খোঁজেই ব্যস্ত রইল নাইটদের থিঙ্কট্যাঙ্ক। বিরাট কোহলি, ডেভেলিয়ার্সরা আছেন, তবুও গেইল হচ্ছেন গেইল। একবার খেলতে শুরু করলে ‘মারব যেখানে, বল পড়বে সেখানে’ হবেই। বেঙ্গালুরু ম্যাচে গেইল-বধ করা গিয়েছিল কালিসকে দিয়ে, ইডেনে নাইটরা দীক্ষিত স্পিন মন্ত্রে। শুরুতেই গেইলকে ডাগআউটের রাস্তা দেখানোর জন্য গম্ভীর সম্ভবত শুরু করবেন ব্রেট লি-র সঙ্গে সুনীল নারিনকে দিয়ে।
এই মুহূর্তে আইপিএলের পয়েন্ট তালিকা দেখলে বাঁদরের তৈলাক্ত বাঁশে ওঠা-নামার অঙ্কের কথা মনে পড়বেই। অধিকাংশ টিমই এই এক পা উঠছে তো দু’পা নামছে। শেষ চারের ছাড়পত্র পেতে দিল্লি ছাড়া কাউকেই নিশ্চিত মনে হচ্ছে না। সেই বাজারে দুই নম্বরে থাকা নাইটদের সংসারে আপাতত স্বস্তির রোদ্দুর ঝলমল করছে। আট ম্যাচে নয় পয়েন্ট চলে এসেছে যে। আজ আরও দু’পয়েন্ট মানে টাটকা বাতাস টিমে উড়ে বেড়াবে। |
সাদা চোখে দেখলে লিগ টেবলে দুই নম্বরের সঙ্গে চারের লড়াই। বেঙ্গালুরুতে গেইলদের ঘরে মাঠে জিতে এসেছে বলে চলতি ফর্মের নিরিখে দাঁড়িপাল্লা নাইটদের দিকেই হেলে। তবে প্রতিপক্ষ এতটাই ওজনদার যে সামান্যতম পদস্খলন মানেই ইডেনের ছাউনির মতো হুড়মুড় করে ভেঙে পড়তে হতে পারে। কিন্তু প্রস্তুতি নিয়েই আবার সাম্প্রতিকতম সমস্যা। ইডেনের প্র্যাক্টিস উইকেটের সঙ্গে মূল উইকেটের কোনও মিলই খুঁজে পাচ্ছে না নাইটরা। মূল উইকেটেটর পাশেই এতদিন প্র্যাক্টিস হত। হঠাৎই তা বদলে ফেলে প্র্যাক্টিস উইকেট করা হয়েছে মাঠের ধারে। অভিযোগ আউটফিল্ডের ঘাস ছেঁটে ফেলে তা উইকেট বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। জোরো বোলাররা পুরো পেসে বল করতে পারছেন না, বল যখন-তখন লাফাচ্ছে। উইকেট নিয়ে এতটাই অবহেলা যে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন গম্ভীর। মালিদের ডেকে কড়া বকুনিও দিয়েছেন। তবু এসব ভুলে আজ নাইটদের স্লোগান নতুন করে ‘রেডি স্টেডি গো’।
নয় নম্বর ম্যাচের আগে নাইট শিবিরে আবহ বলতে উইকেট নিয়ে অসন্তোষ। আগের ডেকান ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগি প্রকৃতির উপদ্রবে। ভুলে গিয়ে ফের ঝাঁপিয়ে জয়ের সড়কে ফেরো শনিবারই। বাইপাশের ধারে টিম হোটেলে সকাল-দুপুরের যা পরিবেশ, তাতে পরিষ্কার এই মুহূর্তে স্বস্তির রোদ্দুরে মেঘলা ছায়া বলতে গেইল। গম্ভীর বা বেইলিস, কেউই খুব বড়সড় রদবদলের পক্ষে নন। তবু দু তিনটে বিষয় নিয়ে আলোচনা ঘুরপাক খাচ্ছে নাইটদের থিঙ্ক ট্যাঙ্কে। বিসলা যেমন। টানা সুযোগ পেয়েও দাগ কাটতে ব্যর্থ। একটা ম্যাচ ছাড়া রান নেই। আগে নামালেও বেশিক্ষণ টিকতে পারছেন না। তবু তিনি আজ থাকছেন। আলোচনা রজত ভাটিয়াকে নিয়েও। ইকবাল আবদুল্লা ঢুকলে ভারসাম্য বাড়বে এমন একটা গুঞ্জন আছে নাইট শিবিরে। বিসলার সঙ্গে ওপেন করার কথা গম্ভীরের, তিনে কালিস। চার থেকে ছয়ে মনোজ, সাকিব, লক্ষ্মী। চার বিদেশি বলতে কালিস, লি, সাকিব ও নারিন।
মোদ্দা কথা হল, খুচখাচ ভুল বদলে জেতার অভ্যেস ধরে রাখা। আর নাইটদের প্রতিদ্বন্দীরা? শুরুটা খারাপ হলেও এখন লিগ তালিকায় চার নম্বরে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স নাম, চলতি টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত ‘রয়্যাল’ সুলভ রাজকীয় হাবভাবের নামগন্ধ শুধু গেইল আর ডেভেলিয়ার্সের ব্যাটে। আর চ্যালেঞ্জ? ২০৫ করেও চেন্নাই ম্যাচ হারতে হয়েছে। ট্রফি জেতা অনেক পরের ভাবনা, আপাতত চ্যালেঞ্জ বলতে নাইটদের হারিয়ে শেষ চারের রাস্তা সাফ করা। গত আইপিএলে ম্যাচ জেতালেই সপ্তাহান্তে গেইলকে গোয়ায় ছুটি কাটাতে পাঠাতেন বিজয় মাল্য। এই ম্যাচের আগে সেরকম কোনও লোভনীয় ‘গাজর’ গেইলের সামনে ঝোলানো হতেই পারে।
টিম যে অবস্থাতেই থাকুক, পেশাদার ক্রিকেটের যুগে যোদ্ধাদের প্রত্যয়ী থাকতেই হয়। অন্তত বহিরঙ্গে। গেইল, কোহলি, ডেভেলিয়ার্স—প্রত্যেকে নিজের দিনে এক একজন ম্যাচ উইনার। বোলিংটা সে তুলনায় সামান্য কমজোরি। জাহির ছাড়া সে অর্থে তারকা পেসার নেই, তবে ইডেনের বাইশ গজ গত দুটো ম্যাচে অন্তত যা ইঙ্গিত দিয়েছে, তাতে আগুনে গতি দিয়ে এখানে বিশেষ সুবিধে হবে না। তা যতই বোর্ডের নির্দেশে নতুন উইকেটে খেলা হোক। স্পিনেই ধরা থাকবে ম্যাচ জেতার স্পন্দন। |