|
|
|
|
|
|
|
সিনেমা সমালোচনা... |
|
শরীরকে অস্ত্র করেই কি শিল্পের ওপর প্রতিশোধ পাওলির |
গোঁজামিলের চিত্রনাট্য দেখতে দেখতে প্রশ্ন উঠল সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর মনে |
ইদানীং হয়তো আপনি এসি চালিয়ে ঘুমোন, কিন্তু কয়েক বছর আগেও আপনাকে মাঝরাতে আলো জ্বেলে, মশারির মধ্যে হন্যে হয়ে মশা মারতে দেখা গেছে। আসলে এ রকম ছোট ছোট প্রতিশোধ স্পৃহা আমাদের সবার মধ্যেই আছে। কিন্তু আপনি, আমি সকলেই জীবনের অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিল খেয়ে কিল হজম করতেই অভ্যস্ত। তাই বিক্রম ভট্টের ‘হেট স্টোরি’র গল্পটা আপনার-আমার কাছে অলীকই মনে হবে। ‘হেট স্টোরি’তে পাওলি দাম অভিনীত চরিত্রটার মতো সব কিছুকে দাঁওতে চড়িয়ে বিরাট একটা প্রতিশোধ তিল-তিল করে নেওয়ার কথা না আমরা ভাবতে পারি, না বিশ্বাস করতে পারি।
বিবেক অগ্নিহোত্রী পরিচালিত ‘হেট স্টোরি’র গল্পটা তাই আদপে দুর্বল। একদম শুরুতে দিল্লির মধ্যবিত্ত পরিবারের কাব্যকৃষ্ণা নামের মেয়েটির (পাওলি) সরলতা আর উচ্চাকাঙ্ক্ষার ধরনটা এ যুগের যে কোনও মেয়ের সঙ্গেই বেশ মিলেমিশে যায়। কিন্তু একটা স্ক্যামের স্টিং অপারেশন করে কাগজের প্রথম পাতার খবর করে সাংবাদিক কাব্য নিজের অজান্তেই শিল্পপতি সিদ্ধার্থ ধনরাজগীরের (গুলশন দেবায়া) মতো কেউটের কোটরে হাত ঢুকিয়ে ফেলেছিল। পরিণতিতে সিদ্ধার্থের প্রতিশোধস্বরূপ তার অফিসে বিশাল মাইনের চাকরি পায়, সিদ্ধার্থর নকল প্রেমে ঝাঁপ দেয় এবং শরীর ও মনে সম্পূর্ণ ব্যবহৃত হয়ে সেখান থেকে বিতাড়িত হয়। এই প্রতারণার ধরনটা শিউরে ওঠার মতোই। কত মেয়েকেই তো আমরা হামেশা এমন পরিস্থিতির শিকার হতে দেখি। কিন্তু ‘হেট স্টোরি’তে কাব্যকৃষ্ণা জ্বলে ওঠে অনুরূপ প্রতিশোধের আগুনে এবং সেই আগুনে ধনরাজগীরকে পোড়াতে গিয়ে সে নিজেও পুড়তে থাকে। |
|
হেট স্টোরি
পাওলি, গুলশন |
এ গল্পের মধ্যে দর্শককে টানটান করে বসিয়ে রাখার মালমশলা ছিল ঠিকই। ফর্মুলা ছবির বাইরেরই একটা ছবি ‘হেট স্টোরি’, তবুও ‘হেট স্টোরি’র মধ্যে কোথায় যেন রুচিবোধ, শিল্পবোধের বিরাট অভাব রয়ে গেছে। চড়া কালার স্কিম, চড়া মেক-আপ, চড়া সংলাপ, মান্ধাতার এডিটিং মিলেমিশে সূক্ষ্ম মাত্রাগুলো এমনভাবে হাতছাড়া হয়ে গেল যে শেষ অব্দি বাঙালির বিতর্কিত নায়িকা পাওলি দামকে নিয়ে তৈরি ছবিটা যে নির্দিষ্ট কারণে আলোড়ন তৈরি করেছিল সেই ‘স্পর্শকাতর’ কারণটি ছাড়া আর কিছুই তেমন ছবিটায় খুঁজে পাওয়া গেল না। সেদিক থেকে দেখলে হেট স্টোরি’র কাব্যকৃষ্ণা যেমন নিজের শরীরটাকে হাতিয়ার করে ফেলল, নিজের লড়াইটা লড়তে পাওলিকেও মনে হল নিজের শরীরকে অস্ত্র করে কলা ও শিল্পের ওপর কী যেন একটা প্রতিশোধ নিতে উঠে পড়ে লেগেছেন।
সত্যি বলতে, ছবিটা যতই মোটা দাগের হোক, পাওলির মুখটা, নব্য হেয়ার-কাটিং সহ দেখিয়েছে বেশ সুন্দর, কিন্তু মনে হল বান্দ্রার লিংকিং রোডের ফুটপাথ থেকে কিনে পোশাক পরানো হয়েছে তাঁকেএতই সস্তা সেই সাজ। আর পাওলির শরীর? সেখানে আর কল্পনার কোনও অবকাশই রইল না। বাকি থাকল পাওলির সাহসিকতা। পাওলির সাহসের এখন আর কোনও চড়াই-উৎরাই নেই। ‘ছত্রাক’-এর পর থেকে একেবারে তুঙ্গে উঠেই বসে আছে। তবে পাওলিকে আর যাই হোক, সর্বভারতীয় দর্শক মল্লিকা শেরাওয়াতের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না। কোথাও একটা বাঙালি মননশীলতার ছাপ শেষমেশ পাওলির মুখের মধ্যে থেকেই যায়।
কে জানে পাওলির কাছে ‘হেট স্টোরি’ কত বড় চ্যালেঞ্জ ছিল! ছবি জুড়ে পাওলিকে যথেষ্ট সপ্রতিভ লাগলেও শেষমেশ অভিনয় নিয়ে সন্দেহ থেকে যায় কারণ সাপোর্টিং কাস্টের একজনেরও অভিনয়ের মান বা স্ক্রিন প্রেজেন্স এতটুকু মনে দাগ না কাটায় পাওলির স্বতঃস্ফূর্ততা বোঝার কোনও মানদণ্ডই ছবিটা তৈরি করতে পারল না। অথচ ইদানীংকালে টালিগঞ্জের কোনও নায়িকা বলিউডে এত বড় ব্যানারের ছবির মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করতে পারেননি। পাওলি পেরেছেন। তাঁর অভিনয় ক্ষমতা নিয়েও কোনও প্রশ্ন ওঠে না। তা হলে এই শর্টকাট শরীরী রাস্তা কেন?
তাই ভয় একটাই। চিত্রনাট্য বা পরিচালনার গুণগত মানের কারণে ‘হেট স্টোরি’ অচিরেই আরও একটি অতি যৌন বি-গ্রেড বলিউডি ছবির মতো কালের গহ্বরে হারিয়ে না যায়। |
|
|
|
|
|