বেনজির সাজা পাক প্রধানমন্ত্রীকে
৩০ সেকেন্ড কোর্টে ‘আটক’ গিলানি
দালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর জেল হতে পারত ৬ মাস পর্যন্ত। যেতে পারত প্রধানমন্ত্রিত্ব। শেষমেশ দোষী সাব্যস্ত তিনি হলেনও। তবে ইউসুফ রাজা গিলানির সাজা হল রায় ঘোষণা করে বিচারপতিরা বেরিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত বিচারকক্ষেই থাকতে হবে তাঁকে। বড়জোর তিরিশ সেকেন্ডের এই ‘প্রতীকী সাজা’টুকুই আপাতত ভোগ করলেন পাক প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রিত্ব বা পার্লামেন্টের সদস্যপদ তিনি খোয়াবেন কি না, সে বিষয়টি অস্পষ্টই রেখে দিয়েছে পাক সুপ্রিম কোর্ট। রায় ঘোষণার পরে জরুরি বৈঠকে পাক মন্ত্রিসভা অবশ্য সিদ্ধান্ত নেয় যে, গিলানির ইস্তফা দেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করা হবে।
সুপ্রিম কোর্টের সাত বিচারপতির বেঞ্চের প্রধান নাসির-উল-মুল্ক আজ রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বলেন, “ইচ্ছাকৃত ভাবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করা হল। আমরা লক্ষ করেছি, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ফলে সংবিধানের ৬৩(১জি) ধারা অনুযায়ী তাঁর কিছু গুরুতর শাস্তি হতে পারে।” কোনও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি কোন কোন পরিস্থিতিতে পদ খোয়াতে পারেন এবং তার পদ্ধতি সবিস্তার বলা রয়েছে পাক সংবিধানের এই ধারাটিতে। এ ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা থাকে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার এবং নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু গিলানিকে দোষী সাব্যস্ত করার সময়ে আজ সেই ধারাটির শুধুমাত্র উল্লেখ করেছে সাত বিচারপতির বেঞ্চ। ওই ধারা অনুযায়ী তাঁকে ইস্তফা দিতে হবে, অথবা ওই ধারা প্রয়োগ করা হচ্ছে এমন কথা কিন্তু বলেনি। কাজেই রায়ের কপি সরকারের হাতে এলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
মামলা কথা
কেন আদালত অবমাননায় দোষী সাব্যস্ত হলেন ইউসুফ রাজা গিলানি?
প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরুর নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই নির্দেশ না মানায় আদালত অবমাননার দায়ে পড়লেন গিলানি।
জারদারির বিরুদ্ধে কী অভিযোগ রয়েছে?
ঘুষ নিয়ে সুইৎজারল্যান্ডের ব্যাঙ্কে সেই টাকা জমানোয় অভিযুক্ত পাক প্রেসিডেন্ট। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফের আনা অর্ডিন্যান্সে সেই মামলা বন্ধ হয়ে যায়। মামলা ফের শুরু করে সুইৎজারল্যান্ড সরকারকে চিঠি লেখার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।
কেন মামলা শুরু করেননি গিলানি?
গিলানি ও তাঁর সরকারের দাবি, প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক রক্ষাকবচ রয়েছে। দেশে বা বিদেশে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা শুরু করা যায় না।
গিলানির ভবিষ্যৎ কী?
দোষী সাব্যস্ত হলে সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে সরানোর ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সেই প্রক্রিয়া দীর্ঘ ও জটিল। কোনও ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হননি গিলানি। তাই তিনি ইস্তফা দেবেন না বলে জানিয়েছে পাক মন্ত্রিসভা।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, সুপ্রিম কোর্টের রায় গিলানির অপসারণের একটা পথ খুলে দিয়েছে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত গিলানিকে যদি সরতেও হয়, সেটাও যথেষ্ট দীর্ঘ পদ্ধতি। কোনও পার্লামেন্ট সদস্য অপসারিত হবেন কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার সময় পান ৩০ দিন, নির্বাচন কমিশন পায় আরও ৯০ দিন। কাজেই আগামী চার মাসের মধ্যে গিলানির গদি যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় দূর অস্ৎ।
তবে প্রাথমিক শাস্তি যতই ‘প্রতীকী’ হোক, সুপ্রিম কোর্টের রায় নিঃসন্দেহে গিলানি তথা পাক সরকারের উপরে বড় ধাক্কা। প্রথমত, এই প্রথম কোনও পাক প্রধানমন্ত্রী আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত হলেন। উপরন্তু, আদালত কক্ষে আটকে রেখে কোনও প্রধানমন্ত্রীকে ‘প্রতীকী সাজা’ দেওয়ার নজিরও পাকিস্তানের গণতন্ত্রের ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রত্যাশিত ভাবেই গিলানির ইস্তফা দাবি করেছেন তেহরিক-ই-ইনসাফ প্রধান ইমরান খান এবং পিএমএল (এন) নেতা নওয়াজ শরিফ। ইমরান টুইটারে লিখেছেন, “প্রধানমন্ত্রী তাঁর আইনি ও নৈতিক কর্তৃত্ব হারিয়েছেন।” তদারকি সরকার বহাল করে ফের নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন নওয়াজ। সেই দাবি উড়িয়ে পাক তথ্যমন্ত্রী কামার জামান কাইরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, “পিপিপি এবং শরিকরা বিশ্বাস করে, পদ হারানোর মতো কোনও অপরাধে গিলানি দোষী সাব্যস্ত হননি। আমরা বিবেকের কাছে পরিষ্কার।”
পুত্রকে নিয়ে আদালতে পৌঁছনোর পরে আজ গিলানির দিকে গোলাপের পাপড়ি ছোড়েন তাঁর সমর্থকেরা। অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী রেহমান মালিক-সহ বেশ কয়েক জন মন্ত্রীও তখন ছিলেন আদালতে। ‘আদালত-পর্ব’ মিটে যায় মোটামুটি দশ মিনিটেই। বেরোনোর সময়ে কিছুটা হতাশ গলায় পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা সুবিচার চেয়েছিলাম। এটা যথাযথ রায় হল না।” অ্যাটর্নি জেনারেল ইরফান কাদির এই রায়কে বলেছেন ‘অসাংবিধানিক এবং বেআইনি’। প্রসঙ্গত, পাক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির বিরুদ্ধে সুইৎজারল্যান্ডে টাকা পাচারের মামলা ফের শুরু করতে পাক সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু গিলানি বলেছিলেন, প্রেসিডেন্টের কিছু সাংবিধানিক রক্ষাকবচ রয়েছে, তা তিনি অস্বীকার করতে পারেন না। সংঘাতের শুরু সেখান থেকেই।

মোদীর ভিসায় না
গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ভিসা না দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের নীতির বদল হচ্ছে না বলে জানিয়েছে আমেরিকা। মার্কিন বিদেশ দফতরের মুখপাত্র ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বলেন, “ভিসা নিয়ে আমাদের অবস্থানের বদল হয়নি।” ২০০৫-এ মোদীকে ভিসা দেয়নি আমেরিকা। সেই নীতি বদল করতে অনুরোধ জানিয়ে সম্প্রতি মার্কিন বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিন্টনকে চিঠি লেখেন কংগ্রেস সদস্য জো ওয়ালশ। আমেরিকায় ভারতীয় মুসলিমরা দাবি জানান, মোদীকে নিয়ে ২০০৫-এর নীতির যেন বদল না হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.