সম্পাদকীয়...
গরম/আর্দ্র
দুঃখ কর অবধান। দুঃখ কর অবধান। অস্বস্তিসূচক বাড়িতেছে। অর্থ কী? কেহ বলিবেন, প্রবল নিদাঘ! কলিকালে সব হয়। পুকুরচুরি বাল্যক্রীড়া মাত্র, শুনা গিয়াছে, আস্ত কালবৈশাখী পর্যন্ত ছিনতাই হইতেছে। কী রূপে, তাহা মহাজাগতিক না হইলেও অন্তত মহাকাশের সংঘটনা তো বটেই। বাতাস দিতেছে, গগনে ঘনঘটা, শিহরে তরুলতা, অথচ, কোথা হইতে কী হইয়া গেল, কিছুক্ষণের ভিতরেই সব উধাও! আকাশ নির্মেঘ। ‘রৌদ্রকরোজ্জ্বল’ বলিলে ক্ষতের উপর লবণসঞ্চারের ন্যায় শুনাইবে, কিন্তু দৃশ্যতই সেই রকম। তাহার সহিত যুক্ত হইয়াছে আর্দ্রতা। জোড়া বাণে পশ্চিমবঙ্গ কাহিল। আশ্চর্য, অস্বস্তি বাড়াইতেছে আর্দ্রতা, অথচ জনতা প্রাণ খুলিয়া গালি দিতেছে গ্রীষ্মকে। গরমকে। এ কী অশিক্ষা যে লোকে ‘হট’ এবং ‘হিউমিড’ এই দুইটি পরিভাষা গুলাইয়া ফেলিতেছে অবিরাম! যেন, পৃথিবীতে বিশুষ্ক গরম বলিয়া কিছু হয় না! জীবনানন্দ চিনাবাদামের ন্যায় বিশুষ্ক বাতাসের কথা লিখিয়াছিলেন। বিশুষ্ক গ্রীষ্মের কথা কি কেহই লেখেন নাই? ঘাম হয় না, কিন্তু হু হু করিয়া হলকার ন্যায় বাতাস বহিতে থাকে! অর্থাৎ, গরম বেশি, আর্দ্রতা কম। গাত্রের পোশাকটি সিঞ্চিত বস্ত্রখণ্ডের ন্যায় চপচপে হইবে না। পথেঘাটে দগ্ধ জনতা এক্ষণে স্বেদসমুদ্রে খাবি খাইতে ব্যস্ত। তাঁহারা এই পর্যন্ত আসিয়া রে রে করিয়া উঠিতে পারেন। ‘গরম’ এবং ‘আর্দ্র’-র ভিতর ফারাক করিবার সময় তাঁহাদের নাই। ক্ষিপ্ত হইয়া তাঁহারা তপন রায়চৌধুরী মহাশয়ের অসামান্য স্মৃতি-‘রোমন্থন’ হইতে সেই গল্পটি স্মরণ করিতে পারেন। সমুদ্রে স্নান করিতে গিয়া এক বঙ্গজন প্রায় ডুবিয়া যাইতেছিলেন। অতিকষ্টে প্রাণ রক্ষার পর তিনি যখন বেলাতটেই শায়িত, সদ্য সংজ্ঞা আসিয়াছে, উঠিবার শক্তি নাই, তখন তাঁহারই এক সুহৃদ যিনি বঙ্গীয় সারস্বতকুলের জনৈক নক্ষত্রও বটেন নিখুঁত বাংলা উচ্চারণে তাঁহাকে ‘ম্রতিউর’ (অর্থাৎ, ‘মৃত্যুর’) এবং ‘অবিয়াহতি’ (অর্থাৎ, ‘অব্যাহতি’) শব্দ দুইটি শুনাইয়াছিলেন। কথিত আছে, কুপিত হইয়া সেই বাক্যবাগীশের অ-বঙ্গীয় স্ত্রী নাকি মুখঝামটা দিয়া বলিয়াছিলেন, ‘টুমি ঠামো, উহাকে একটু ডুড খাইতে দেও’! ‘টুমি ঠামো’-র সেই নির্বিকল্প ভর্ৎসনা ‘হট’ এবং ‘হিউমিড’-এর ফারাককারীর উপরেও বর্ষিত হইতে পারে। ‘হট’ নাকি উহা ‘হিউমিড’, ওই জিজ্ঞাসে কোন জন বলিয়া লোকজন পথেও নামিতে পারেন! কিছু বলা চলিবে না। আক্ষরিকই, মাথা গরম হইয়াছে! তাই বলিয়া কি জ্ঞান দেওয়া যাইবে না? বঙ্গজনতা কি সুযোগ পাইলেই জ্ঞানপ্রদানের সেই সুমহৎ অভ্যাসচ্যুত হইবেন? গ্রীষ্ম যদি বিশুষ্ক না হয়, তখন কী হইতে পারে, তাহার মহত্তম নিদর্শন কে? কে আবার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর! প্রখর গ্রীষ্মের দ্বিপ্রহরে একের পর এক গান লিখিয়াছেন। অগ্নিস্নানেও মঙ্গল খুঁজিয়া পাইয়াছেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ভিতর থাকিয়া পান নাই, নিজ দেহে সেই দুঃসহ তাপকে ধারণ করিয়াই পাইয়াছেন। অবশ্য, তিনি শুধু পঁচিশে বৈশাখ! বঙ্গজনতার অত ভাবিবার, সহিবার সময় নাই। অস্বস্তিসূচক বাড়িতেছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.