আলিপুর আদালতে বিচারকের সামনে শনিবার দেবলীনা চক্রবর্তী তাঁর হাতের লেখার নমুনা দিলেন। দু’বছর আগে দক্ষিণ শহরতলিতে পাঁচ জন মাওবাদী নেতাকে গ্রেফতার সংক্রান্ত মামলায় তথ্যপ্রমাণ হিসেবে দেবলীনার হাতের লেখার ওই নমুনা কাজে লাগবে বলে সিআইডি সূত্রের খবর। এ দিন আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে দেবলীনাকে হাজির করানো হয়েছিল। তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ করে বিচারক দেবলীনাকে ৫ মে পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে এ দিনই আলিপুরের ষষ্ঠ বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সুস্মিতা চৌধুরীর এজলাসে দেবলীনার আইনজীবী শুভাশিস রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি আদালত কক্ষে মোবাইলে ছবি তুলেছেন। আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (এসিজেএম) এস এন শাহনওয়াজ হোসেনের কাছেও এই অভিযোগ পৌঁছয়। তিনি আদালতের কাজ শেষ হওয়ার পরেও ওই আইনজীবীকে থেকে যেতে বলেন। সন্ধ্যায় সিজেএম সুস্মিতাদেবী এবং শুভাশিসবাবুর সঙ্গে কথা বলার পরে বিষয়টির নিষ্পত্তি ঘটে।
২০১০ সালে দক্ষিণ শহরতলি থেকে মধুসূদন মণ্ডল-সহ পাঁচ মাওবাদী নেতাকে গ্রেফতার করেছিল সিআইডি। মধুসূদনের কাছ থেকে একটি চিঠি উদ্ধার হয়। সিআইডি-র দাবি, সেই চিঠিতে ‘দেবু’ বলে এক জনের নাম ছিল। সিআইডি-র অভিযোগ, দেবলীনা চক্রবর্তীই ‘দেবু’ নামে ওই চিঠি লিখেছিলেন। ওই বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের জন্য দেবলীনাকে নিজেদের হেফাজতে নিতে সিআইডি আদালতে আবেদন করে। এর আগেও অবশ্য সিআইডি দেবলীনার হাতের লেখার নমুনা নিয়েছিল। আদালতের নির্দেশে গত ১২ এপ্রিল দেবলীনাকে নিজেদের হেফাজতে নেয় তারা। সম্প্রতি নোনাডাঙার বস্তি উচ্ছেদের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখানোর সময় কলকাতা পুলিশ দেবলীনা চক্রবর্তী-সহ সাত জনকে ৮ এপ্রিল গ্রেফতার করেছিল।
এ দিন আলিপুরের ষষ্ঠ বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে হাজির করানো হয় দেবলীনাকে। সিআইডি আবেদনে জানায়, তারা চায় বিচারকের সামনে হাতের লেখার নমুনা দিন দেবলীনা। সিআইডি আদালতে জানায়, ওই নমুনা পাওয়ার পরে তারা হস্তাক্ষর বিশারদের কাছে মতামতের জন্য পাঠাবে।
বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাতের লেখার নমুনা দেওয়ার পরে সিআইডি দেবলীনাকে হাজির করায় আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট এস এন শাহনওয়াজ হোসেনের এজলাসে। সেখানে দেবলীনার আইনজীবী শুভাশিস রায় তাঁর মক্কেলের জামিনের আবেদন করেছিলেন। ওই আইনজীবী বিচারককে জানান, যে উদ্দেশ্যে সিআইডি দেবলীনাকে হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছিল, সেই উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে। তাঁর মক্কেলের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করা হোক।
সরকারি আইনজীবী উদয়নারায়ণ চৌধুরী বিচারককে জানান, মধুসূদন মণ্ডল-সহ ধৃত পাঁচ মাওবাদী নেতার জবানবন্দিতে দেবলীনা চক্রবর্তীর নাম রয়েছে। দেবলীনার বিরুদ্ধেও বেআইনি কার্যকলাপ এবং দেশদ্রোহিতার অভিযোগ করেছে পুলিশ। ওই মামলার চার্জশিট ২০১০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর আদালতে পেশও করেছে পুলিশ। তাই অভিযুক্ত জামিন পেতে পারেন না।
পাল্টা সওয়াল করে শুভাশিসবাবু আদালতে জানান, ওই চার্জশিটের কোথাও দেবলীনা চক্রবর্তীর নাম নেই। এমনকী, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগও করেনি পুলিশ। সরকারি আইনজীবী তা শুনে বিচারককে বলেন, পুলিশ শীঘ্রই ওই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট
পেশ করবে।
অন্য দিকে, কয়েকটি মহিলা সংগঠন দেবলীনার বিরুদ্ধে ওঠা মাওবাদী-যোগের অভিযোগ ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেছে। ওই সংগঠনগুলির তরফে শর্মিষ্ঠা চৌধুরী বলেন, “নন্দীগ্রামে আন্দোলন করার জন্য তৃণমূলের অনেক নেতার বিরুদ্ধেও অভিযোগ ছিল। আর এখন তো সরকার বাম আমলের মিথ্যা মামলাগুলি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেবলীনার বিরুদ্ধেও মিথ্যে মামলা করা হয়েছিল। সেটি এখন সত্যি হচ্ছে কী ভাবে?” |