জেলায় লগ্নি বাড়ছে আধুনিক সিনেমা হলে
হালফিলে ভাল বাংলা ছবির টানে হলে ফিরছেন দর্শকেরা। আর সেই সাফল্যে ভর করে গত কয়েক বছর ধরেই কর্পোরেট লগ্নি টানতে শুরু করেছে বাংলা ছবি। কিন্তু তা সত্ত্বেও তার সেই বাজারের বিস্তারে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ভাল সিনেমা হলের অভাব। বিশেষত জেলাগুলিতে। এ বার সেই বাজার ধরতেই বিনিয়োগের ঝুলি নিয়ে পা রাখছেন কুচিনা অ্যাপ্ল্যায়েন্সেস-এর নমিত বাজোরিয়া। এই ক্ষেত্রে আরও বেশি লগ্নি করতে আগ্রহী প্রিয়া এন্টারটেনমেন্টস-এর কর্ণধার অরিজিৎ দত্ত-ও। এই দুই স্থানীয় সংস্থার পাশাপাশি জেলার বাজারকে যথেষ্ট সম্ভাবনাময় বলে মেনে নিচ্ছে পিভিআর, ফেম, আইনক্স, অ্যাডল্যাবস, সিনেম্যাক্সের মতো নামী মাল্টিপ্লেক্স ব্র্যান্ডও। বাংলা ছবির সঙ্গে সঙ্গে সেই বাজারে হিন্দি, এমনকী ইংরেজি ছবিরও চাহিদার কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই লগ্নির ঝুলি উপুড় করতে শুরু করেছে তারা।
কলকাতার বাইরে জেলার বিভিন্ন শহরে লগ্নিতে ইচ্ছুক সংস্থাগুলির মতে, ওই সব অঞ্চলেও উন্নত মানের হলে ছবি দেখার জন্য বাড়তি খরচ করতে পিছপা নন সেখানকার বাসিন্দারা। অথচ অধিকাংশ জেলাতেই তেমন পরিকাঠামো নেই বললেই চলে। তাই সেই ফাঁক ভরাট করতে পারলে মুনাফার মুখ দেখা কঠিন হবে না বলেই মনে করছেন তাঁরা।
আর এই যুক্তিতেই রান্নাঘরের চিমনি তৈরির সংস্থা কুচিনা অ্যাপ্লায়েন্সেস-এর কর্ণধার বাজোরিয়ার ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় রয়েছে রাজ্যের প্রায় সব ক’টি জেলা। রয়েছে মাল্টিপ্লেক্স তৈরির পরিকল্পনাও। তাঁর কথায়, “আগামী দু’বছরে ১৫টি মাল্টিপ্লেক্স গড়তে চাই। প্রাথমিক ভাবে সম্ভাব্য বিনিয়োগের অঙ্ক ৫০ কোটি টাকা।” মধ্যমগ্রাম বা আসানসোল দিয়ে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন তাঁরা।
জেলার বাজারের বিপুল সম্ভাবনা মাথায় রেখে সিনেমা হল গড়ার ক্ষেত্রে আগেই কলকাতার বাইরে পা রেখেছেন অরিজিৎবাবু। বাংলা ছবির বাজার সম্প্রসারিত করতে যে জেলাকেও গুরুত্ব দিতে হবে, তা গোড়া থেকেই উপলব্ধি করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “শুধু শহরে ছবি দেখিয়ে পয়সা উঠবে না। প্রয়োজন জেলা জুড়ে ‘ভদ্রস্থ’ সিনেমা হল।” তিনি মনে করেন, “শুধু ছবি তৈরির জন্য পরিকাঠামোগত সহায়তা দিয়ে লাভ নেই। কারণ, ভাল ছবিরও বাণিজ্যিক সাফল্যের জন্য প্রয়োজন উন্নত মানের সিনেমা হল।” তাঁর দাবি, এ কথা মাথায় রেখেই বীরভূম, বর্ধমান, দক্ষিণ দিনাজপুর-সহ দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন জেলার শহরে হল চালু করেছে প্রিয়া। তাঁর প্রশ্ন, ছবি দেখানোর জায়গাই যদি না-থাকে, তবে সেই সিনেমা তৈরিতে আগ্রহী হবেন কোন প্রয়োজক?
রাজ্যে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হলের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন অরিজিৎবাবু। সংশ্লিষ্ট মহলের তথ্য অনুযায়ী, গত চার-পাঁচ বছরে রাজ্যে সিনেমা হলের সংখ্যা ৮০০ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫০। শুধুমাত্র দর্শকের অভাবেই দরজা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে বহু সিনেমা হল। বার বার প্রশ্ন উঠেছে, একটি বড় সংখ্যক সিনেমার মান পড়ে যাওয়ার কারণেই কি হলমুখো হচ্ছেন না দর্শকেরা? নাকি টিভি-সিডি-ডিভিডির দাপটেই ব্রাত্য প্রেক্ষাগৃহ? এ প্রসঙ্গে অরিজিৎবাবুর অভিযোগ, “রাজ্যে মোট ১৬ হাজার ভিডিও লাইব্রেরি রয়েছে। যার ১০ হাজারই বেআইনি। অথচ সে দিকে ফিরেও তাকায় না প্রশাসন।”
তবে দর্শক টানতে সিনেমা হলের মানও যে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, গত কয়েক বছরে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে মাল্টিপ্লেক্স। এক দিকে যেখানে নিয়ম করে বিভিন্ন সিনেমা হলে তালা পড়েছে, তেমনই বিভিন্ন জায়গায় মাথা তুলেছে ঝাঁ-চকচকে মাল্টিপ্লেক্স। গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা থেকে ঝকঝকে খাওয়ার জায়গা, সিনেমা দেখার স্বাচ্ছন্দ্য থেকে শপিং করার জায়গা মাল্টিপ্লেক্সের এই মেলানো প্যাকেজই হয়ে উঠেছে তার ব্যবসায়িক সাফল্যের তুরুপের তাস। আগামী দিনে এ ধরনের মাল্টিপ্লেক্স বা উন্নত ও আধুনিক সিনেমা হল জেলার মানুষের সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতাও সম্পূর্ণ বদলে দেবে বলে আগ্রহী লগ্নিকারীদের দাবি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.