বিমান দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিল পাকিস্তান। দুর্ঘটনার পিছনে খারাপ আবহাওয়াই দায়ী না অন্য কোনও কারণও ছিল, তা জানতেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি। অন্তর্ঘাত বা ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী রেহমান মালিকও। শুক্রবার সন্ধ্যায় করাচি থেকে ইসলামাবাদ আসার পথে খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে পড়ে রাওয়ালপিন্ডির হুসেনাবাদ গ্রামে ভেঙে পড়ে বেসরকারি ভোজা এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রিবাহী বিমান। মারা যান ১২১ জন যাত্রী-সহ বিমানের ১২৭ জন আরোহী।
দুর্ঘটনার পরেই পাক বিমান মন্ত্রকের পক্ষে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু তাতেই থেমে থাকছেন না পাক প্রশাসকেরা। শনিবার সকালে ইসলামাবাদে পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে যান পাক প্রধানমন্ত্রী। |
সব হারিয়ে। শনিবার ইসলামাবাদে। |
সেখানেই দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটির আরোহীদের দেহ এবং দেহাংশ এনে রাখা রয়েছে। এ দিন ওই ইনস্টিটিউট থেকে বেরিয়েই পাক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি জানান, তিনি ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের জন্য অভ্যন্তরীণ মন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন। গিলানির কথায়, “মর্মান্তিক ঘটনা। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে দুর্ঘটনার কারণ নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। ইতিমধ্যেই বহু মৃতদেহ তাঁদের আত্মীয়দের হাতে তুলে দেওয়া গিয়েছে। তবে আরও মৃতদেহ রয়েছে যা শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। সে সব ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে। তাতে একটু সময় লাগতে পারে।”
একই সঙ্গে পাক প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, যে বিমানসংস্থার বোয়িং-৭৩৭ উড়ানটি ভেঙে পড়েছে, সেই ভোজা এয়ারলাইন্সের কর্ণধার ফারুক ভোজাকে ‘নিরাপদ হেফাজতে’ রাখা হয়েছে। ফারুকের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু করেছেন পাক গোয়েন্দারা। এমনকী, তদন্ত শেষ হওয়ার আগে ফারুকের দেশ ছাড়ার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী রেহমান রেহমান মালিকের কথায়, “এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে। |
হুসেনাবাদ গ্রামের সেই জায়গা। |
আমরা জানার চেষ্টা করছি বিমানটির উড়ানকাল শেষ হয়ে গিয়েছিল কি না, কোনও কারিগরি ত্রুটি ছিল কি না, কোনও ষড়যন্ত্র হয়েছে না অন্য কিছু।” কুড়ি বছরের বেশি পুরনো বিমানটিকে উড়ানের ছাড়পত্রই বা কেন দেওয়া হয়েছিল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি পাক অসামরিক বিমান পরিষেবা সুরক্ষা কমিটির প্রধানকেও দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিমানের ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করে উড়ান সংক্রান্ত তথ্য জানতে তা বিদেশে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই বিমান মন্ত্রকের এক কর্মী জানিয়েছেন, তিনি শুক্রবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটিকে আচমকাই মাটির দিকে তীব্র গতিতে নেমে আসতে দেখেন। ওই কর্মীর মতে, বিমানচালক সম্ভবত অত্যন্ত খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন।
শনিবারও অবশ্য রাওয়ালপিন্ডির হুসেনাবাদ গ্রাম দাঁড়িয়ে রয়েছে দুর্ঘটনার ক্ষতচিহ্ন নিয়ে। সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে বিমানের টুকরো, দেহাংশ, রক্তমাখা কাপড়। ডিজেল আর পোড়া মাংসের গন্ধে কাজ করতে সমস্যায় পড়ছেন উদ্ধারকারীরা। ইসলামাবাদে মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটের ছবিটা আরও করুণ। কফিনের সারির পাশে কেউ অপেক্ষায় ভাইয়ের মৃতদেহের জন্য, কেউ দেহাংশ দেখে চেনার চেষ্টা করছেন পরিজনকে। |