তেরঙ্গা উইকেটে বোলার মশা
তেতাল্লিশের সমুদ্রে তিনটি দ্বীপ।
বাকি চল্লিশ লালে লাল, শুধু এই তিনেই তেরঙ্গা ধ্বজা উড়েছিল গত নির্বাচনে। দুর্গাপুর পুরসভায় কংগ্রেসের এই তিন উইকেটের একটি, গত বার বামেদের হাত থেকে পুনরুদ্ধার করা ৯ নম্বর।
‘প্রজ্ঞাপিত এলাকা’ (নোটিফায়েড এরিয়া) থেকে ‘পুরসভা’ (মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন) হওয়ার পরে ১৯৯৭ সালের প্রথম নির্বাচনে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে জিতেছিলেন ডিএসপি-র শিবাজি রোড হাইস্কুলের ইতিহাস শিক্ষক, কংগ্রেসের বংশীধর সাহা। মাঝে ২০০২ সালে এলাকার মানুষ ‘মাস্টারমশাইয়ের’ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। ২০০৭ সালে আবার তাঁকেই ফিরিয়ে আনেন তাঁরা।
বংশীধরবাবু ২০০২ সালে অবসর নিয়েছেন। এখন সকাল-বিকেল কাটে বেনাচিতি পাঁচমাথার মোড়ে দলীয় কার্যালয়ে। পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পরেও সেই নিয়মের ব্যত্যয় হয়নি। ওয়ার্ডের বাসিন্দারা সেখানেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তাঁর দাবি, “কাজ হয়েছে। বাকিও আছে বেশ কিছু।”
ডিএসপি টাউনশিপের হর্ষবর্ধন রোড, রামকৃষ্ণ রোড, এসএন বন্দ্যোপাধ্যায় রোড, কনিষ্ক রোড, আকবর রোড, সিআর দাস অ্যাভিনিউ, সেকেন্ডারি, নঈম নগর নিয়ে ৯ নম্বর ওয়ার্ড। এর মধ্যে বস্তি আছে আকবর রোড, রামকৃষ্ণ রোড, নঈম পথ, কনিষ্ক রোড সংলগ্ন এলাকায়। সিআর দাস অ্যাভিনিউ সংলগ্ন সেকেন্ডারি বস্তিতে বিদ্যুৎ এসেছে। বাকিগুলিতে আসেনি। কাউন্সিলর জানান, এক মাত্র ওই বস্তির পাশে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের লাইন থাকায় বিদ্যুৎ দেওয়া গিয়েছে। অন্যত্র ডিএসপির নিজস্ব লাইন থাকায় তা সম্ভব হয়নি।

৯ নম্বর ওয়ার্ডে এই কুয়োই ভরসা।

১০ নম্বরে বালতি ডোবালে মেলে এমন জল।
ওয়ার্ডবাসীর অভিযোগ, সর্বত্র মশার খুব উপদ্রব। বংশীধরবাবুর বক্তব্য, “পুরসভা থেকে স্প্রে করা হয় না, তাই এই সমস্যা।” তা হলে কি বিরোধী দলের ওয়ার্ডের প্রতি বৈমাত্রেয় ব্যবহার করছে পুরসভা? কাউন্সিলর বললেন, “এটা আমি বলব না। যেমন যেমন বরাদ্দ আসে পুরসভা পাঠায়।” এলাকায় ঘুরে অবশ্য বামফ্রন্টের দখলে থাকা ওয়ার্ডগুলির সঙ্গে এই ওয়ার্ডের বস্তির খুব একটা ফারাক চোখে পড়েনি। সেই পানীয় জলের সংকট, ভাঙা রাস্তা, সংস্কার না হওয়া শৌচাগার। তবে কাউন্সিলরের মতে, এই ওয়ার্ডে বস্তিবাসীর সংখ্যা কম হওয়ায় বরাদ্দও আসে কম।
সিপিএম অবশ্য কাউন্সিলরের এই যুক্তি মানতে নারাজ। দলের মহিলা সমিতির ১ (বি) জোনাল কমিটির সহ-সভানেত্রী লাভলি কাজি বলেন, “এক মাত্র বস্তি এলাকাতেই কাজের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু কাজ তেমন হয়নি। পানীয় জল মিলছে না। জলের অভাবে শৌচাগার ব্যবহার করতে পারছেন না বাসিন্দারা। বিদ্যুৎ যায়নি বলে অবৈধ সংযোগের রমরমা।”
১০ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর মিতা চট্টোপাধ্যায় আবার কপাল চাপড়াচ্ছেন কম লোকসংখ্যা নিয়ে। “মাত্র ৭৯ টি বাড়ি। কাজ দেখাব কি করে?” স্থানীয় বোরো অফিসে বসে কথা বলতে বলতে আক্ষেপ ঝরে পড়ে তাঁর গলায়। কিন্তু বাস্তব কী বলছে?
ওয়ার্ডের নেতাজি সুভাষ রোড বস্তিতে ঢুকতেই কুয়ো। পাশে ভাঙা টিউবওয়েল। কুয়োর জলতল দিন দিন নামছে। কমিউনিটি শৌচাগারের দশা তথৈবচ। বস্তিবাসী কুয়োর পাশে স্নান করেন। সেই জল রা রাস্তায় বয়ে যাওয়ায় দিন কয়েক আগে কুয়োর আশপাশ বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার কাজ করে চলে গিয়েছেন। হয়তো তাঁর প্রাপ্যও পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু কাজটা কি ঠিকঠাক হয়েছে?
নজরে নগর
ওয়ার্ড ওয়ার্ড ১০
• পানীয় জলের সঙ্কট
• বিদ্যুৎ আসেনি সব জায়গায়
• মশার ব্যাপক উপদ্রব
• পানীয় জলের অসহ্য কষ্ট
• শৌচাগারের সংখ্যা অপ্রতুল
• ভাঙা রাস্তা প্রায় সর্বত

অনেক কাজ হয়েছে। বাকিও আছে কিছু।
বংশীধর সাহা,

মাত্র ৭৯টি বাড়ি। কাজ দেখাব কী করে?
মিতা চট্টোপাধ্যায়,

জলের অভাবে শৌচাগারও ব্যবহার করা যায় না।
লাভলি কাজি,

পুরসভায় দরবার করে কাজ বের করে আনি আমরাই।
চিত্রজিৎ দাস,
তখন সকাল ১১ টা। কুয়ো থেকে জল তুলছিলেন সাবিত্রি বাউরি, গীতা সেনরা। তাঁদের খেদ, “জল জমে যাচ্ছে কুয়োর পাশে বাঁধানো অংশে। ঠিকাদার কাজ করেছে। কিন্তু পুরসভার কেউ দেখে নেননি।” তাঁরা জানান, টিউবওয়েলটি বসানোর পর থেকে খারাপ। রাস্তা পেরিয়ে ডিএসপি-র ট্যাপ থেকে খাওয়ার জল নিতে ভোর থেকে লম্বা লাইন পড়ে। পাশেই পাকা নর্দমা শহরের আর পাঁচটা বস্তির মতোই মজা। রাস্তাও এবড়োখেবড়ো।
এই ওয়ার্ডে ‘বস্তিবাসী’ বলতে নেতাজি সুভাষ রোড বস্তির ৭১টি ও আশিস মার্কেট সংলগ্ন বস্তির ৮টি ঘর। কাউন্সিলরের দাবি, দুই বস্তি মিলিয়ে প্রায় তেরোশো ফুট পাকা নর্দমা করা হয়েছে। কমিউনিটি শৌচাগার হয়েছে ৮টি। দু’টি কুয়ো আছে, আরও একটি গড়া হচ্ছে। রানা প্রতাপ রোড, শিবাজি রোড, অশোক অ্যাভিনিউয়ের মতো অধিকাংশ এলাকাই ডিএসপি টাউনশিপের অন্তর্গত। আইনি কারণে সেখানে পুরসভার কিছু করার নেই। তবু ওই সব এলাকাতেও তারা জঞ্জাল সাফাই করে বলে কাউন্সিলরের দাবি।
তৃণমূলের ওয়ার্ড সভাপতি চিত্রজিৎ দাস পাল্টা বলেন, “গত পাঁচ বছরে বলার মতো কোনও উন্নয়ন হয়নি। বস্তিবাসীদের বিপদে আমাদের নেতা কর্মীরাই পাশে থাকেন। তাই দরকারে পুরসভায় না বলে আমাদেরই বলেন তাঁরা। আমরা পুরসভায় দরবার করে কাজ বের করে আনি।”
এ বার কি তা হলে তাঁদেরই সরাসরি দায়িত্ব দেবেন ভোটারেরা? বলবে সময়।
ছবি: বিশ্বনাথ মশান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.