কম্পিউটার ব্যবহার না করলে ওষুধের বরাদ্দ টাকা দেওয়া বন্ধ!
রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও সুপারদের এই হুঁশিয়ারি দিলেন স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। যদিও এতে কাজের কাজ কতটা হবে, তা নিয়ে স্বাস্থ্যকর্তারাই ধন্ধে। কারণ একাধিক মেডিক্যাল কলেজ ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, কম্পিউটার চালু করার জন্য যে রকম পরিকাঠামো প্রয়োজন, সেটা তাঁদের তৈরিই হয়নি। তাই মান্ধাতা আমলের খাতা-কলমই ভরসা।
স্বাস্থ্য কর্তাদের বক্তব্য, এই মানসিকতার জন্যই তাঁরা ওষুধ কেনায় স্বচ্ছতা আনতে পারছেন না। বছরের পর বছর ওষুধ কেনা বাবদ লক্ষ লক্ষ টাকা কারচুপি হয়। শুধু তা-ই নয়, বহু ওষুধ দেদার পরিমাণে কিনে ফেলে রেখে দেওয়ায় তার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। আবার যে ওষুধের চাহিদা বেশি, সেটা বহু ক্ষেত্রে কেনাই হয় না।
এই অনিয়ম টের পেয়ে ওষুধ কেনাকাটায় রাশ টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নতুন সরকার। স্থির হয়েছিল, কোন ওষুধ কত কেনা হবে, কত মজুত রয়েছে, তার কী দাম, সব কিছুই নথিভুক্ত হবে কম্পিউটারে। সেই ভাবেই ওষুধের অর্ডার দেওয়া হবে। কম্পিউটারে একটি ক্লিকেই যাতে যে কোনও হাসপাতালের যে কোনও ওষুধের স্টক জানা যায়, তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যকর্তারা। উদ্দেশ্য, স্বাস্থ্য ভবনে বসেই গোটা বিষয়টির উপরে নিয়ন্ত্রণ রাখা। স্থির হয়েছিল, প্রথম ধাপে রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই ব্যবস্থা চালু হবে। তার পরে ধীরে ধীরে অন্যত্রও তা অনুসরণ করা হবে।
ফল কী হল?
দেখা গেল, বছর ঘুরতে চললেও কলকাতার দু’একটি মেডিক্যাল কলেজ ছাড়া আর কোথাও এই ব্যবস্থা শুরুই হয়নি। আর যেখানে হয়েছে, সেখানেও কম্পিউটারে কাজ হচ্ছে আংশিক। বিষয়টি দেখে বিরক্ত স্বাস্থ্যসচিব ফের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ এবং সুপারদের ‘স্টোর ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম’ সফটওয়্যার ব্যবহারের কড়া নির্দেশ দেন। কিন্তু তাতেও কাজের কাজ হচ্ছে না বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।
স্বাস্থ্যকর্তারা বার বার বলা সত্ত্বেও কেউ এটা মানছেন না কেন? কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, “ওপর থেকে শুধু নিয়ম চাপিয়ে দিলেই হয় না। তা কার্যকর করার ব্যবস্থাও রাখতে হয়। এ ক্ষেত্রে সব কিছুরই অভাব। সব মেডিক্যাল কলেজেই ওষুধ, সরঞ্জাম ইত্যাদির একাধিক স্টোর। সব জায়গায় দেওয়ার মতো কম্পিউটার পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া কম্পিউটারের প্রশিক্ষণই তো নেই কারওর। সরকারি তরফে একটা ব্যবস্থা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তা এতটাই নিয়মরক্ষার যে কাজের কাজ কিছু হয়নি।”
জেলার এক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের কথায়, “আলাদা ভাবে ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের পদ নেই। হাসপাতালে ব্যবহৃত ওষুধ এবং অন্য চিকিৎসা সরঞ্জামের তালিকা এত বড় যে এক জনকে সারা দিন বসে বসে শুধু সেই কাজই করতে হবে। সেই লোকবল কোথায়?”
স্বাস্থ্যকর্তারা অবশ্য একে ছেঁদো যুক্তি বলেই মনে করছেন। স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস বলেন, “পরিকাঠামোগত সমস্যা কিছু থাকলে তা ধাপে ধাপে মিটিয়ে ফেলা হবে। কিন্তু তার জন্য কাজ শুরু করা যাবে না, এমন নয়। এ বার আমরা গোটা ব্যবস্থাটাই এমন ভাবে করছি, যাতে এর বাইরে কেউ একটা ওষুধও কিনতে না পারেন। ওষুধের অর্ডারই বেরোবে না, কেনা তো পরের কথা।” |