এ বার ধোনি-বধ সম্পন্ন
অধিনায়ক সৌরভের হাতে
ব্যাটসম্যান সৌরভ বনাম ব্যাটসম্যান ধোনি লড়াইয়ে কোনও ফুলকি তৈরি হল না।
অধিনায়ক সৌরভ বনাম অধিনায়ক ধোনি লড়াইয়ে সৌরভকে জিতিয়ে পুণের মাঠে রংমশাল জ্বেলে দিলেন তাঁর দুই বিদেশি ক্রিকেটার। জেসি রাইডার এবং স্টিভন স্মিথ। আইপিএলের পাঁচ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম ধোনিকে হারালেন অধিনায়ক সৌরভ। রাত সাড়ে এগারোটার সময় স্টিভন স্মিথের ছক্কায় সাত উইকেটে ম্যাচ জেতার পর পুণের ক্রিকেটভক্তদের উৎসব করার ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে যেন তাঁদের কাপ জেতাই হয়ে গিয়েছে। পুণের বাঙালিরা চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছেন, “পয়লা বৈশাখের সেরা উপহার। দাদা ধোনিকে হারিয়ে দিয়েছে, ব্যস।”
পুণে ওয়ারিয়র্সের এ বারের আইপিএল অভিযানে তাদের অধিনায়কের অন্যতম দুই প্রধান ঘোড়া হলেন রাইডার এবং স্মিথ। রাইডার রান করতে পারছিলেন না বলে যেমন চাপ তৈরি হচ্ছিল। সৌরভ কিন্তু বাঁ হাতি ওপেনারকে সমর্থন করে যাচ্ছিলেন। ম্যাচের আগের রাতেও হোটেলে বসে বলেছিলেন, “না, রাইডারকে বসাবো না। ও ঠিক রান করবে।” এ দিন রাইডারের ৫৬ বলে ৭৩ দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, ব্যাটের ধার তাঁর কমে যেতে পারে। আগের মতো স্পিনারকে ওড়ানোর দৃশ্য দেখতে না পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কের ধার কমে না। মগজাস্ত্রে এখনও তিনি অনেক বাঘা বাঘা সেনাপতি ঘায়েল করতে পারেন। মুম্বইতে অল্প রানের পুঁজি নিয়ে বাজি জিতেছিলেন। এ দিন জিতলেন পরে ব্যাট করে দেড়শোর ওপর রান তাড়া করে। যা আরও মনোবল বাড়িয়ে দেবে পুণের যোদ্ধাদের। এত দিন একটা ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছিল যে সৌরভের টিমের বোলিংটাই অস্ত্র। ব্যাটিং দরের নয়। এ দিন জেতাল ব্যাটিং। রাইডার রান পেলেন। স্মিথ প্রথম থেকে রান করে আসছেন। এ দিন শেষ ওভারে যেমন করতে হত ১০ রান। স্মিথ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে প্রথম দু’বলে মেরে তুলে দিলেন। প্রথম বল ফাইন লেগ দিয়ে বাউন্ডারি। দ্বিতীয় বল কভারের ওপর দিয়ে ছক্কা। পুণের ডাগ-আউটে এমন বাঁধনহারা উচ্ছ্বাস শুরু হল সঙ্গে সঙ্গে যে, মনে হতে বাধ্য কোনটা বেশি করা তাঁরা জিততে চান? দাদা বনাম ধোনি নাকি দাদা বনাম খান? দেখেশুনে তো মনে হচ্ছে দু’টোই সমান সম্মানরক্ষার।
তখনও চলছে লড়াই। বর্তমান ও প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের দ্বৈরথে
শেষ হাসি হাসলেন প্রাক্তনই। শনিবার পুণেয়। ছবি: এ এফ পি
পুণের পরের স্টেশন ক্রিস গেইলের বেঙ্গালুরু। অধিনায়ক সৌরভ কিন্তু সেখানে পৌঁছচ্ছেন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস নিয়ে। এক-এক সময় বেশ অবাকই লাগছিল। কোথায় সৌরভের নিজের শহর কলকাতা! আর কোথায় তিনি বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে খেলতে এসেছেন। তা-ও চল্লিশ ছুঁই ছুঁই বয়সে। চার বছরের ওপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। সৌরভকে মনে করিয়ে দেওয়ায় তৎক্ষণাৎ বলে দিলেন, “তৃতীয় আইপিএল-টাও তো আমি পুরো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে থেকে খেলেছিলাম।” বরাবর এই অকুতোভয়, হার না মানা মনোভাবটাই তাঁর সেরা কবচ।
পুণের নতুন তৈরি সুব্রত রায় সহারা স্টেডিয়ামে ব্যাটসম্যান হিসেবে অবশ্য ধোনি-সৌরভ দু’জনেই কেমন নিষ্প্রভ রইলেন। ধোনি করলেন ২৮ বলে ২৬। স্ট্রাইক রেট অবিশ্বাস্য রকম কম। ৯২.৮৫। হালফিলে ব্যাটিং ধরন অনেক পাল্টে ফেলেছেন ধোনি। তাতেও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর ১০০-র নীচে স্ট্রাইক রেট খুঁজে পাওয়া কঠিন। আগের ম্যাচেই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে যে তাঁরা ২০৫ রান তাড়া করে হারালেন সেখানে ধোনি করে এসেছেন ২৪ বলে ৪১। স্ট্রাইক রেট ১৭০-এর ওপর।
আর সৌরভ নিজে এ দিন ওপেন করতে না এসে পাঠালেন রবিন উথাপ্পাকে। তিন নম্বরে যখন তিনি ব্যাট করতে এলেন পুণে তিন ওভারে ৩১-১। ক্রিকেটজীবনে এ রকম পরিস্থিতি থেকে কত বার তিনি সঙ্গী ব্যাটসম্যানের সঙ্গে পার্টনারশিপ গড়ে জয়ের মঞ্চ তৈরি করে দিয়ে গিয়েছেন! চেন্নাই ম্যাচটা যেহেতু তাঁর কাছে ব্যক্তিগত সম্মানরক্ষারও মনে হয়েছিল, আজ ব্যাট হাতে সেই যোদ্ধা সৌরভকে দেখা যাবে। মোটামুটি এগোচ্ছিলেনও ভাল। কিন্তু দেরিতে দৌড় শুরু করে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনলেন। এমনিতেই মোহালি ম্যাচ থেকে তিনি ঘাড়ের যন্ত্রণায় ভুগছেন। এ দিন সকালে উঠেও দেখেন ব্যথাটা হচ্ছে। কিন্তু ছুটকো ঘাড়ের যন্ত্রণায় দাদা বনাম ধোনি লড়াই থেকে কী করে তিনি ইস্তফা দিয়ে দেন! হোটেলে টানা শুশ্রুষা করিয়ে মাঠে চলে আসেন।
জয়ের কারিগর। স্মিথ এবং রাইডার। ছবি: পিটিআই
ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজের উইকেট বাঁচাতে চাওয়া আর শূন্য দৃষ্টি নিয়ে জায়েন্ট স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা সৌরভ। তখনকার মতো দেখে মনে হয়েছিল, এটাই হয়তো ম্যাচের ছবি হয়ে থাকল। সেই এক করুণ ছবি। আইপিএলে যা বরাবর ঘটে এসেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কী সব শৃঙ্গ জয় করেছেন তিনি। দেশের মাটিতে স্টিভের বিশ্বজয়ী অস্ট্রেলিয়ার বিজয়রথ থামিয়ে দেওয়া। মিনি বিশ্বকাপে রানার্স। বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা। পাকিস্তানকে পাকিস্তানে হারানো। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টেস্ট সিরিজ ড্র রেখে ফিরে আসা। ন্যাটওয়েস্ট জিতে লর্ডসের ব্যালকনিতে জামা খুলে ওড়ানো। কিন্তু এই একটা স্টেশন অজেয় থেকে গেল। ধোনিকে আইপিএলে হারানো। নতুন শহরের জার্সি গায়ে চাপিয়েও চিত্রনাট্য বদল করতে পারলেন না।
কে জানত, ক্রিকেট-বিধাতা বাংলা নববর্ষের দিনটাকেই বেছে রেখেছিলেন অধিনায়ক সৌরভের এত কালের অধরা স্বপ্ন সফলের জন্য। সৌরভ-ভক্তদের সেরা উপহার দেওয়ার জন্য। ধোনিকে হারানোর স্লোগান যে কবে থেকে তাঁরা তুলে আসছেন। আজ তা সফল হল। কে জানত কলকাতা থেকে দূরে নতুন শহরের জন্যই তোলা ছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে পরাভূত করার চিত্রনাট্য! কে জানত, পূর্বাঞ্চলের সৌরভ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার চার বছর পর ফের উদয় হবেন। প্রচলিত সমস্ত ধারণাকে ভেঙে দিয়ে এ বার উদয় হবেন পশ্চিমের আকাশে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.