সে এইচআইভি পজিটিভ। শুধু এই ‘অপরাধে’ এক বালকের অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে না। এমনই অভিযোগ উঠেছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এ দিকে, অস্ত্রোপচার না হওয়ায় ছেলেটি ক্রমে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলে হাসপাতাল সুপার অসিতবরণ সামন্তের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন তার বাবা। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা) সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এমন হওয়া উচিত নয়। যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করে এইচআইভি পজিটিভ রোগীদের অস্ত্রোপচার করা যায়। ছেলেটির ক্ষেত্রে তা কেন করা হচ্ছে না, খোঁজ নিয়ে দেখব।”
আট বছরের এই ছেলেটির বাড়ি বাঁকুড়ার কোতুলপুর থানার জয়রামবাটির কাছে মস্বিনাপুর গ্রামে। গত ৫ এপ্রিল পেটের যন্ত্রনা নিয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি হয় সে। তার বাবার অভিযোগ, ছেলে থ্যালাসেমিয়া ও এডসের শিকার। প্লীহা বেড়ে যাওয়ায় গত ১১ এপ্রিল তার অপারেশনের দিন ঠিক হয়েছিল। কিন্তু সেই অপারেশন হয়নি। অস্ত্রোপচার কবে হবে, তা জানতে চেয়ে চিকিৎসকদের কাছ থেকে ছেলেটির বাবা শুধু দুর্ব্যবহার-ই পাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
এডস রোগী এবং এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তিদের স্বার্থে গঠিত বর্ধমানের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি দীননাথ গড়াইয়ের অভিযোগ, রাজ্য সরকার বার বার বলছে, সাধারণ হাসপাতালেই এডস বা এইচআইভি পজিটিভ রোগীদের চিকিৎসা হবে। কিন্তু এই হাসপাতালে এইচআইভি বা এডস রোগীদের অস্ত্রোপচার করতে অনিচ্ছুক চিকিৎসকেরা। অপারেশন দূর, সামান্য চিকিৎসাটুকুও তাঁরা পান না। কারণ, শুধু অজ্ঞতার কারণে এক শ্রেণির চিকিৎসক তাঁদের চিকিৎসা করতে চান না। তাঁর আরও অভিযোগ, “২০০৬ থেকে চলতি বছরের গোড়া পর্যন্ত এই হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করাতে এসেছেন ৪৮ জন এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তি। কিন্তু অস্ত্রোপচার হয়েছে মাত্র দু’জনের। বাকিদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে বা দিনের পর দিন ফেলে রাখা হয়েছে। তাঁদের অনেকেই চিকিৎসা না পেয়ে বাড়িতে মারা গিয়েছেন।”
হাসপাতাল সুপার অসিতবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে ডেপুটি সুপার তাপস ঘোষ বলেন, “রাজ্যের সমস্ত হাসপাতালের মতোই এই হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও এডস রোগীদের অস্ত্রোপচার করতে ভয় পান। আমাদের এখানে এক সময় এই ধরনের রোগীদের অস্ত্রোপচারের জন্য দরকারি ‘পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) ছিল না। অর্থাৎ, যে গ্লাভস বা মুখোশ পড়ে এই ধরনের অস্ত্রোপচার করার কথা তা ছিল না। কিন্তু এখন তো সে সবই রয়েছে। তবু চিকিৎসকেরা কেন অস্ত্রোপচারে রাজি হচ্ছেন না, জানি না। তবে আজ হোক বা কাল, ওই বালকের অপারেশন করতেই হবে।” |