বিধানসভায় শাসক ও বিরোধীদের সম্পর্কের ‘ক্ষতে’ প্রলেপ দিতে উদ্যোগী হলেন স্পিকার। শাসক পক্ষের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের কোনও ‘ক্ষোভ’ বা ‘অভিযোগ’ থাকলে, তা তাঁকে জানাতে অনুরোধ করলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। সভায় জানানোর পাশাপাশি ‘ব্যক্তিগত ভাবে’ও এ বিষয়ে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে বলে বিমানবাবু জানিয়েছেন।
আসন্ন দফাওয়াড়ি বাজেটের পর্যালোচনার জন্য শুক্রবার বিধানসভার কমিটিগুলিকে নিয়ে বৈঠক করেন স্পিকার। মে মাসের মধ্যে কমিটিগুলিকে দফাওয়াড়ি বাজেট সম্পর্কিত সুপারিশ পেশ করতে বলেছেন স্পিকার। কিন্তু ওই কাজ করতে প্রায়শই বিভিন্ন দফতরের অফিসারেরা ঠিকমতো সহযোগিতা করেন না বলে অভিযোগ ওঠে। ফলে, সময়মতো সুপারিশ জমা দিতে অসুবিধায় পড়েন কমিটির সদস্যেরা। এ বার যাতে সেই সমস্যা না-হয়, তার জন্য কমিটিগুলির সঙ্গে সহযোগিতা করতে অফিসারদের কাছেও আবেদন করেছেন বিমানবাবু।
একই সঙ্গে, প্রধান বিরোধী দল সিপিএম-সহ তাদের শরিকদের অভাব-অভিযোগ অনেক সময়ই সভায় শোনা হয় না বলে যে অভিযোগ ওঠে, তা ‘নিরসনে’ স্পিকার এ বার বিরোধীদের বক্তব্য গুরুত্ব দিয়ে শুনতে চাইছেন বলে পরিষদীয় সূত্রের ব্যাখ্যা। গত দু’টি অধিবেশনেই শাসক ও বিরোধীদের তরজা ক্রমশ তুঙ্গে উঠেছে। অধিবেশন বন্ধ থাকাকালীন বিধানসভা চত্বরের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিক সম্মেলন করার উপরে নিষেধাজ্ঞা ঘিরে স্পিকারের সঙ্গে মতানৈক্য হয়েছে বিরোধীদের। সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক প্রদীপ তা-র মরদেহে শ্রদ্ধা জানাতে স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার-সহ প্রধান শাসক দলের কোনও বিধায়কই আসেননি বলে ‘অসন্তোষ’ জানান বিরোধীরা। বাজেট অধিবেশনে সিপিএম বিধায়ক আনিসুর রহমানের একটি মন্তব্য ঘিরে মুখ্যমন্ত্রী বনাম বিরোধীদের বাদানুবাদ বা প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষের সম্পর্কে বর্তমান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্যের ক্ষেত্রেও স্পিকার ‘পক্ষপাতিত্বমূলক’ ভূমিকা নিয়েছেন বলে বিরোধীদের অভিযোগ ছিল। এই ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষিতেই স্পিকারের এ দিনের উদ্যোগকে দু’তরফের সম্পর্ক ‘স্বাভাবিক’ করার চেষ্টা হিসাবে দেখা হচ্ছে।
বৈঠকের পরে এ দিন স্পিকার বলেন, “বিরোধীদের শাসক পক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বা অভিযোগ থাকলে তা সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানাতে বলেছি। সরকারি অফিসারেরা ঠিকমতো সাহায্য না-করলেও জানাতে বলেছি। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বিরোধীদের বলার জন্য বেশি সময় দেওয়ার কথা বললেও যে কোনও বিষয় বা বিল নিয়ে আলোচনার সময় সভায় বিরোধীরা বলতে উঠলেই ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে চিৎকার-হট্টগোল করে তাঁদের ‘বাধা’ দেওয়া হয়। ‘একপেশে’ মনোভাব নিয়ে ভাবে স্পিকার তাদের অভিযোগ ‘নস্যাৎ’ করে দেন বলেও বিরোধীদের অভিযোগ। তাঁর কাছে অভিযোগ জানানোর জন্য স্পিকারের অনুরোধের পরে পরিস্থিতির উন্নতি হয় কি না, তা-ই এখন দেখার। |