অভিযুক্ত জুনিয়র ডাক্তারদের নয়, বর্ধমানে সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনায় চার ‘দালাল’কে গ্রেফতার করল পুলিশ। যদিও তাঁরা আক্রমণে যুক্ত ছিলেন না, বরং আক্রান্তদের সাহায্য করেছেন বলে সাংবাদিকদের একটা বড় অংশের দাবি।
গত বুধবার বিকেলে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীর বাড়ির লোকজনকে মারধরের খবর পেয়ে গেলে এক দল মারমুখী জুনিয়র ডাক্তার সাংবাদিক ও আলোকচিত্রীদের উপরে চড়াও হন। মার খান অনেকে। ছ’টি ক্যামেরা লুঠ করা হয়। দুই আলোকচিত্রী এখনও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। রাতেই দুই জুনিয়র ডাক্তারের নামে নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা এখনও অধরা।
পুলিশ যে চার জনকে গ্রেফতার করে, তাঁদের নাম সৌমেন ঘোষ, রাজু দাস, বিষ্ণুপ্রিয় ধারা ও শেখ আলি। শুক্রবার রাতে হাসপাতাল চত্বর থেকেই এঁদের ধরা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। ধৃতদের কেউ ওষুধের দোকানের কর্মচারি, কেউ চায়ের দোকানি। সাংবাদিকদের দায়ের করা অভিযোগে এঁদের নাম ছিল না। |
তবে বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার দাবি, “আসলে হাসপাতালের দালাল চক্রে এরা জড়িত। সে কারণেই সাংবাদিক ও আলোকচিত্রীদের উপরে হামলার সময়ে জুনিয়র ডাক্তারদের সাহায্য করতে এরা এগিয়ে গিয়েছিল। ভিডিও ফুটেজে তা দেখা গিয়েছে।” বর্ধমান আদালতে হাজির করা হলে ভারপ্রাপ্ত সিজেএম ভাস্করজ্যোতি মজুমদার ধৃতদের তিন দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
সরাসরি অভিযোগপত্রে নাম থাকা সত্ত্বে জুনিয়র ডাক্তারদের পুলিশ কেন গ্রেফতার করছে না, সেই প্রশ্নে কিন্তু প্রায় সব রাজনৈতিক দলই সরব। রাজ্যের আইনমন্ত্রী, তৃণমূল নেতা মলয় ঘটক বলেন, “এফআইআরে নাম থাকলে পুলিশের অবশ্যই তাদের ধরার চেষ্টা করা উচিত। অভিযুক্ত জুনিয়র ডাক্তারেরা কেন এখনও গ্রেফতার হননি, সে ব্যাপারে খোঁজ নেব।” সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদারের মতে, “অভিযুক্তদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে সাজা দেওয়া না হলে গণতন্ত্র আহত হবে।” জুনিয়র ডাক্তারেরা গ্রেফতার না হলে রাস্তায় নামার হুমকি দিয়েছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি আজিজুল হক মণ্ডল। বিজেপি এবং সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন-ও অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেফতার দাবি করেছে। |
বুধবার প্রথমে এক রোগীর বাড়ির লোকজন, পরে ঘটনাস্থলে যাওয়া সাংবাদিকদের উপরে চড়াও হওয়ার অভিযোগ রয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে। মৃত রোগীর পরিজন ও সাংবাদিকদের তরফে দু’টি পৃথক অভিযোগ দায়ের করা হয়। সাংবাদিকদের তরফে সুজাতা মেহেরা লিখিত অভিযোগে (মামলা নম্বর ২৩৪) জানান, আনন্দবাজার পত্রিকার আলোকচিত্রী উদিত সিংহের মাথায় রডের বাড়ি প্রথম মারেন জুনিয়র ডাক্তার অভিনব সিংহ। মারধরে যুক্ত ছিলেন শৌভিক বাগ নামে আর এক জুনিয়র ডাক্তারও। ঘটনাস্থলে থাকা সাংবাদিক ও আলোকচিত্রীরা জানান, বেশ কিছু হামলাকারীকে ‘জুনিয়র ডাক্তার’ বলে চিনতে পারলেও, পরিচয় না থাকায় পুলিশকে তাঁদের নাম তাঁরা জানাতে পারেননি।
ধৃতদের আইনজীবীরা আবার এ দিন আদালতে চার জনের গ্রেফতারির যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। এঁদের অন্যতম, বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাসের সন্দেহ, “জুনিয়র ডাক্তারদের আড়াল করতে এবং আগাম জামিন নেওয়ার সুযোগ করে দিতেই এই চার জনকে ধরা হয়েছে। সাংবাদিকদের খোয়া যাওয়া মোবাইল, ক্যামেরা ইত্যাদি ধৃতদের কাছে পাওয়া গিয়েছে বলেও পুলিশ পরে দাবি করতে পারে।” পুলিশ সুপার বলেন, “আমার সঙ্গে দেখা করে কয়েক জন সাংবাদিক-আলোকচিত্রী জানিয়েছেন, এই চার জন সে দিন আক্রান্তদেরই সাহায্য করতে এগিয়ে গিয়েছিলেন। তবে ভিডিও ফুটেজ সে কথা বলছে না। যাই হোক, আমরা ওদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।”
|
কালিয়াগঞ্জ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে শ্বাস কষ্ট হচ্ছিল মায়ের। কিন্তু নার্স এসে ইঞ্জেকশন দিয়েছিলেন তাঁর ১০ দিনের পুত্র সন্তানকে। এই অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ মিলল উত্তর দিনাজপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তদন্তে। শুক্রবার ও শনিবার স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা ওই ঘটনার তদন্ত করেন। তদন্তকারীরা এক চিকিৎসক ও নার্সের কর্তব্যে গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। সেই সঙ্গে, হাসপাতালের অন্য এক নার্সের ভূমিকাও সন্দেহজনক মনে করছেন তাঁরা। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অজয় চক্রবর্তী বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে যে তথ্য উঠে এসেছে সেটা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।” ওই বিষয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস বলেন, “তদন্তের রিপোর্ট খতিয়ে দেখে খুব দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে!” তদন্তে জানা গিয়েছে, চিকিৎসক ভুপেশ বর্মন শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছটুবালা রায় নামে এক মহিলাকে ইঞ্জেকশন দেওয়ার জন্য নার্সদের লিখিত নির্দেশ দেন। কিন্তু ওই নির্দেশ ঠিক মতো পালন করা হল কি না সেই বিষয়ে নজরদারি ছিল না। কিন্তু কর্তব্যরত নার্স শ্বাসকষ্টের ওই ইঞ্জেকশন দিয়েছিলেন ছোটুবালাদেবীর ১০ দিনের শিশুকে। কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ওই চিকিৎসককে অন্যত্র বদলি করায় শনিবার বিক্ষোভ দেখায় কংগ্রেস। |