অভিযোগ আর্থিক দুর্নীতিরও
বেহাল দশা, বন্ধ হতে
পারে ৩ মেডিক্যাল কলেজ
রিকাঠামো তৈরি হয়নি বলে গত বছর ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া’ (এমসিআই)-র ছাড়পত্র পায়নি বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ। রাজ্যের নতুন তিন মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে প্রথম বর্ষের ছাত্র ভর্তি শুরু হয়েছিল শুধু কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও মালদহ মেডিক্যাল কলেজে। এক বছর কাটতে না-কাটতেই এই দুই নতুন মেডিক্যাল কলেজের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, আগামী শিক্ষাবর্ষে নতুন মেডিক্যাল কলেজগুলিতে আদৌ আর ছাত্রভর্তি করা যাবে কি না সে বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তারাই আশঙ্কিত। প্রশ্ন রয়েছে সাগর দত্ত ও মালদহ মেডিক্যাল কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের পাঠ্যক্রম চালাতে পারার বিষয়েও।
চলতি বছর এপ্রিলের মধ্যেই এই তিনটি মেডিক্যাল কলেজের অসম্পূর্ণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্তারাই জানাচ্ছেন, কাজের দায়িত্বে থাকা গুরগাঁওয়ের একটি বেসরকারি নির্মাণ সংস্থা এখনও পর্যন্ত মাত্র ২৫% কাজই করে উঠতে পেরেছে। ডিসেম্বরের মধ্যেও কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রথম বর্ষের স্থায়ী ক্লাসরুম ও হস্টেলের কাজ এখনও শেষ হয়নি। ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, ছেলে ও মেয়েদের আলাদা হোস্টেল না-থাকায় একই ভবনে মুরগির খাঁচার মতো ঘরে তাঁদের থাকতে হচ্ছে।
পাশাপাশি, সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও মালদহ মেডিক্যাল কলেজে প্যাথোলজি, মাইক্রোবায়োলজি, কমিউনিটি মেডিসিন, ফার্মাকোলজি এবং ফরেন্সিক মেডিসিনের ঘরই এখনও তৈরি হয়নি। আসেনি কোনও যন্ত্রপাতিও। দ্বিতীয় বর্ষে ওই বিষয়গুলিই পড়ানোর কথা থাকায় তা কী ভাবে সম্ভব হবে জানেন না কেউই। হস্টেলেই ছাত্রছাত্রীদের প্রথম বর্ষের অনেক ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। কিছুই কাজ এগোয়নি সাগর দত্ত কলেজ সংলগ্ন ৫০০ শয্যার প্রস্তাবিত হাসপাতালেরও। এ দিকে, এমসিআইয়ের কর্তারা বলেছেন, আগামী পরিদর্শনে এসে তাঁরা যদি দেখতে পান, দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস নেওয়ার পরিকাঠামো তৈরি হয়নি বা ওই কলেজ সংলগ্ন হাসপাতালে শয্যা বাড়েনি তা হলে ওই নতুন কলেজগুলিকে কাজ চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে না।
হাসপাতাল-নামা
মেডিক্যাল কলেজ প্রকল্পে বরাদ্দ মোট কাজ হয়েছে
সাগর দত্ত ১১৫.৩৬ কোটি ২৫.৫%
মালদহ ৭৭.১৯ কোটি ২৫.৬৮%
বহরমপুর ৮২.২৫ কোটি ২২.১২%
(১২ মার্চ ২০১২ পর্যন্ত)
এর মধ্যে আবার ‘ফিনান্সিয়াল ফ্রড’ বা আর্থিক গরমিলের বিষয়ও ঢুকে পড়েছে। কিছু দিন আগেই ওই সংস্থার প্রেসিডেন্ট তথা সিইও-কে লেখা এক চিঠিতে রাজ্যের মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পুনীত যাদব সংস্থার বিরুদ্ধে সরাসরি আর্থিক তছরুপের অভিযোগ এনেছেন। পাশাপাশি, ২০১০-এ কাজ শুরু করার পর প্রথম বছরে নির্ধারিত কাজের মাত্র সাড়ে চার শতাংশ কাজ শেষ করেই নির্মাণ সংস্থাটি মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশনের হাতে ২৮% কাজের জন্য নির্ধারিত ৭৭ কোটি টাকার বিল পেশ করেছে বলে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
‘চূড়ান্ত অপেশাদার’ বলে সংস্থার পরিচালন সমিতির সমালোচনা করে পুনীতবাবু ওই চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, ১৭ মাসের নির্ধারিত সময়সীমা প্রায় শেষ হতে চললেও সংস্থাটি মেডিক্যাল কলেজগুলির মাত্র ২৫ শতাংশ কাজ করে উঠতে পেরেছে। আর্থিক দুর্নীতির জন্য কেন ওই সংস্থাটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার কারণও দর্শাতে বলা হয়েছে ওই চিঠিতে। স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে ঝামেলার জেরে কিছু দিন আগেই প্রায় এক মাস কাজ বন্ধ রেখেছিল ওই সংস্থা। ফলে মেডিক্যাল কলেজের কাজের গতি আরও কমেছে।
স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ কিন্তু বলছে, নতুন মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে এই সমস্যায় পড়ার জন্য স্বাস্থ্য দফতর, বিশেষ করে মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশনই দায়ী। মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশন নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরে সদ্য জমা পড়া এক তদন্ত রিপোর্টেও তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, গুরগাঁওয়ের সংস্থাটিকে ২৭৩ কোটি টাকার নির্মাণ বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম ভাঙা হয়েছিল। এখন ফাঁপড়ে পড়ে কর্পোরেশনের কর্তারা ওই সংস্থাকে দোষারোপ করে পিঠ বাঁচাতে চাইছেন। কিন্তু কাজ হচ্ছে না দেখেও কেন এত দিন ওই সংস্থাকে বাতিল করা হয়নি, সেই প্রশ্নও এখন উঠেছে। পুনীতবাবুর জবাব, “এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে।”
কাজে গাফিলতির বিষয়ে ওই সংস্থার এক শীর্ষ কর্তা ও কনস্ট্রাকশন ম্যানেজারদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তাঁরা সাফাই দিয়েছেন, প্রথমত, লিবিয়ায় তাঁদের অনেক প্রকল্প চলছিল। সেখানকার রাজনৈতিক অস্থিরতায় সেই প্রকল্পগুলি ধাক্কা খাওয়ায় তাঁরা আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে। ফলে ভারতে তাঁদের বিভিন্ন প্রকল্পে দেরি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, তাঁরা স্বীকার করেছেন, মেডিক্যাল কলেজ তৈরির অভিজ্ঞতা না-থাকায় তাঁদের নকশায় কিছু গোলমাল হয়ে গিয়েছিল।
তৃতীয়ত, যেহেতু তিনটি জায়গাতেই আগে থেকে একটা হাসপাতাল ভবন রয়েছে তাই ওভারহেড তার, জলের পাইপ, বিদ্যুতের তার বাঁচিয়ে, গাছ কেটে জায়গা বার করে খোঁড়াখুঁড়ি করতে সময় লেগেছে। সব মিলিয়ে এমসিআইয়ের পরবর্তী পরিদর্শনের আগে নতুন তিন মেডিক্যাল কলেজ নিজেদের গুছিয়ে উঠতে পারে কি না সেটাই এখন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের অগ্নিপরীক্ষা।

সহ প্রতিবেদন : কিশোর সাহা



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.