লিজের জমি বন্ধকেও প্রশ্ন
ঋণের টাকা আদায়ে লক্ষ্মণের সংস্থাকে এ বার ব্যাঙ্কের নোটিস
কের পর এক সমস্যায় জড়াচ্ছে জেলবন্দি প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘আইকেয়ার’। জমি বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েও ঋণের একাংশ শোধ না করায় ওই সংস্থার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার হুঁশিয়ারি দিয়ে নোটিস পাঠিয়েছে ব্যাঙ্ক। ৭ বছর আগে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কলকাতার একটি শাখা থেকে মোট ২২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিল লক্ষ্মণবাবুর সংস্থা। সেই ঋণ বাবদই ১০ কোটি ১৬ লক্ষ ৪৫ হাজার ৯০২ টাকা বকেয়া রয়েছে। ৬০ দিনের মধ্যে সেই টাকা শোধ করার জন্য ‘আইকেয়ার’কে চরমপত্র পাঠিয়েছে ব্যাঙ্ক। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঋণ শোধ না হলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
আইকেয়ারের বন্ধক রাখা জমির ‘স্বত্ব’ নিয়েও আবার প্রশ্ন উঠেছে। সাংসদ থাকাকালীন হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদেরও (এইচডিএ) চেয়ারম্যান ছিলেন লক্ষ্মণবাবু। এইচডিএ-র অধিগৃহীত জমি একর-প্রতি নামমাত্র এক টাকায় ৯৯ বছরের জন্য নিজের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে লক্ষ্মণবাবু ‘লিজ’ পাইয়ে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এই অভিযোগ করে এইচডিএ-এর বর্তমান চেয়ারম্যান, তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, “এমনকী নিজের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ব্যাঙ্ক ঋণের জন্য এইচডিএ-র তরফে ‘নো-অবজেকশন সার্টিফিকেটে’রও ব্যবস্থা করেছিলেন লক্ষ্মণবাবু। জনস্বার্থের কথা বলে আইকেয়ারকে জমি লিজ দেওয়া হলেও ওই সংস্থা বেসরকারি কলেজ খুলে মোটা টাকা ফি নিয়ে রীতিমতো ব্যবসাই করেছে।” শুভেন্দু জানিয়েছেন, যেহেতু আইকেয়ারের বন্ধকী জমি তাদের নয়, এইচডিএ লিজ দিয়েছিল মাত্র, তাই ওই জমি বা সম্পত্তি যাতে নিলাম করা না হয়, সে জন্য ব্যাঙ্ক-কে চিঠি দেবে এইচডিএ। চেয়ারম্যান থাকাকালীন লক্ষ্মণবাবু আর কী কী নিয়মবিরুদ্ধ কাজ করেছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং আইনজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ।
একেই সংস্থার কর্ণধার লক্ষ্মণবাবু নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে এখন জেলবন্দি। ‘আইকেয়ার’ পরিচালিত হলদিয়ার বেসরকারি মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। পরিকাঠামোর প্রশ্নে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া স্বীকৃতি প্রত্যাহার করায় এখন অনুমোদনহীন ভাবেই মেডিক্যাল কলেজ চালাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। শিক্ষাবর্ষ নষ্টের আশঙ্কায় অর্ধেক ছাত্রছাত্রীই অবশ্য কলেজে আসা বন্ধ করেছেন। মাসে মাসে তাঁদের কাছ থেকে যে ফি আদায় হত, তা-ও অনেকাংশে বন্ধ। ফলে এমনকী শিক্ষক-আধিকারিকদের বেতনও আটকে যাচ্ছে। ডেন্টাল কলেজটি সম্পর্কে ডেন্টাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার মনোভাব নিয়েও উদ্বেগে পড়ুয়া ও শিক্ষক-আধিকারিকরা। আইকেয়ার পরিচালিত আরও একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘হলদিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’তেও মহার্ঘভাতা না পেয়ে আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষক-আধিকারিকরা।
মূলত এই কলেজগুলি গড়ার কথা জানিয়েই ২০০৫-এ তিন দফায় ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছিল বলে আইকেয়ার সূত্রে জানা গিয়েছে। এ জন্য সংস্থার হাতে থাকা ২৪.৬২ একর এবং ৩৬.৯৮ একর পরিমাণের দু’টি জমিও বন্ধক রাখা হয়েছিল। সুদ-সহ এই ঋণ-খাতে ইতিমধ্যে ২৪ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা তাঁরা শোধ করেছেন বলে দাবি আইকেয়ার কর্তৃপক্ষের। কিন্তু তার পরেও বকেয়া রয়েছে ১০ কোটি টাকারও বেশি। গত ৭ মার্চ সেই বকেয়া টাকা শোধের জন্যই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ চরমপত্র দিয়েছেন। ‘আইকেয়ার’-এর সিইও অঞ্জন সেন শনিবার স্বীকার করেন, “আমরা কয়েক দিন আগে ব্যাঙ্কের ওই চিঠি পেয়েছি।” তবে ঋণের টাকা কতটা শোধ করা যাবে, সে নিয়ে অঞ্জনবাবু নিজেই সংশয়ে। তাঁর বক্তব্য, “এখনই এত টাকা শোধ করা সম্ভব নয়। কিছু পরিমাণ টাকা শোধ করা হবে বলে ব্যাঙ্ক-কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।” পুরো টাকা না পেলে যদি ব্যাঙ্ক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে? অঞ্জনবাবু সেই ‘আশঙ্কা’ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.