দায়ী আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা
ফুলের আগুন জ্বলেনি বলেই রাজ্য জুড়ে বসন্তের বিলাপ
সন্তে বিভ্রাট!
এই চৈত্রে কৃষ্ণচূড়া নেই। রাধাচূড়া ফুটেছে অনেক কম। পলাশের অবস্থাও তাই। ফুলেরা সব গেল কোথায়? বিজ্ঞানীরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্যই এই অবস্থা। কেবল ফুলেই নয়, আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার ধাক্কা লেগেছে ধান এবং আমেও।
এমনিতে বসন্তের গোড়াতেই কৃষ্ণচূড়া ফুল দিগন্তে আগুন জ্বালে। কিন্তু এ বছর রাজ্যের প্রায় কোথাওই এখনও কৃষ্ণচূড়া ফোটেনি। কুঁড়িও আসেনি। উল্টে গাছ ভরে গিয়েছে কচি পাতায়। কৃষ্ণচূড়া গাছে এ বার বসন্তে লালের বদলে সবুজের সমারোহ। এই ‘পরিবর্তনে’ বিজ্ঞানীরা বলছেন, আবহাওয়াই দায়ী। প্রলম্বিত শীত আর সময় মতো যথেষ্ট গরম না পড়াতেই এই অবস্থা। বটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন অধিকর্তা, উদ্ভিদবিজ্ঞানী দুলালচন্দ্র পাল বলেন, “এই সময় আবহাওয়ায় যে উষ্ণতা থাকার কথা, তা নেই। দুপুরে গরম থাকলেও সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত বেশ ঠান্ডা থাকছে। তার জন্যই কৃষ্ণচূড়া ফুল ফুটতে পারছে না।” আবহাওয়া পরিবর্তনের ফল এ বার হাতেনাতে ফলতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন দুলালবাবু।
গাছ ভরে গিয়েছে কচি পাতায়। ফুল প্রায় নেই। কৃষ্ণচূড়া গাছে সেই ছবি।
কেবল কৃষ্ণচূড়াই নয়, তেমন ফোটেনি রাধাচূড়াও। কোনও গাছে অল্প ফুল এসেছে। উত্তরবঙ্গ হোক বা দক্ষিণবঙ্গে, পলাশও এ বার বেশ পরিমিত। দুলালবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, কৃষ্ণচূড়া নিশ্চয়ই ফুটবে। পরিমাণে কম হলেও ফুটবে, তবে দেরিতে। আবহাওয়ার খেয়ালিপনার কোপ পড়েছে আমেও। শীত ফুরোতে না ফুরোতেই আম গাছ মুকুলে ভরে যায়। বসন্তেই সেই মুকুল গুটিতে পরিণত হয়। আম চাষিদের তখন আতঙ্ক এবং আকাঙ্ক্ষা থাকে কালবৈশাখীর জন্য। কালবৈশাখীর ঝড়ে যেমন কচি আম পড়ে যায়, তেমনই ওই ঝড়ের সঙ্গে আসা বৃষ্টির ফলে আমের বোঁটা শক্ত হয়।
এ বছর কালবৈশাখী এসেছে দেরিতে। সবেমাত্র শনিবার প্রথম দেখা মিলেছে তার। পরিচিত ঋতুচক্রের ধার না ধরে বর্ষা শেষ না হতেই এসে পড়েছে শীত। নিজের সময়সীমা পেরিয়ে শীত গ্রাস করেছে বসন্তকে। এলোমেলো হয়ে গিয়েছে বায়ুপ্রবাহ। তার প্রভাব পড়েছে আমের ফলনে। মালদহে কাশিমবাজারের আম চাষি সাদেক আহমেদ বলেন, “এ বার অনেক গাছেই মুকুল আসেনি। কোনও গাছে আগাম মুকুল এসেছিল। সেই গাছে আমের অনেক গুটি ঝরে গিয়েছে, পোকা লেগে গিয়েছে। আমের ফলন যা হওয়ার কথা ছিল তা হবে না বলেই মনে হচ্ছে।” যে সব গাছে মুকুল আসেনি, তারা কচি পাতা ছাড়তে শুরু করেছে। সে গাছে আর মুকুল আসার সম্ভাবনা নেই। মালদহেরই ছবিলপাড়ার আম চাষি আনোয়ার বিশ্বাস চিন্তিত, “আমের অবস্থা এ বার ভাল নয়। আবহাওয়া সঙ্গ দিচ্ছে না।”
গাছ ভরে গিয়েছে কচি পাতায়। ফুল প্রায় নেই। রাধাচূড়া গাছে সেই ছবি।
দীর্ঘায়িত শীত থাবা বসিয়েছে ধানেও। নদিয়া জেলায় হাঁসাডাঙার চাষি ফকির সাঁতরা ভেবেছিলেন পাটের লোকসান এ বার বোরো ধানে কিছুটা পুষিয়ে নেবেন। কিন্তু তাঁর ধানে যে শিস এসেছে, তা কাঙ্ক্ষিত মাপের তুলনায় অনেক ছোট। যে শিস অন্তত ছয় ইঞ্চি লম্বা হওয়ার কথা, তা চার ইঞ্চির বেশি হয়নি। ফকিরবাবু বললেন, “কালবৈশাখী না হলে ধান হবে কী করে? ধানের গা থেকে শীতই কাটছে না!”
আবহবিদেরাও মানছেন, কালবৈশাখীর সংখ্যা ইদানীং যেমন কমেছে, তার তেজও কমেছে। তার জন্যই ধান চাষে গোলমাল হচ্ছে। একই জমিতে এক একটা ধানের গোছে এক এক সময় শিস আসছে।
সেই শিসও আবার যথেষ্ট ছোট, জানালেন পূর্ব মেদিনীপুরের গোপালপুরের চাষি দেবাশিস ঘোরোই। এ বছর শীত অস্বাভাবিক দীর্ঘ হওয়ার জন্য ধানের চারা তৈরি হতে অনেক সময় লেগেছে। চুঁচুড়া ধান গবেষণা কেন্দ্রের কৃষিবিজ্ঞানী বিজন অধিকারীর পর্যবেক্ষণ, “যে চারা ৪০ থেকে ৫০ দিনে বড় হয়, সেই চারা বড় হতে সময় নিয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ দিন। বয়স্ক চারা রোয়ার ফলেই ধানগাছ বাড়েনি।”

—নিজস্ব চিত্র


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.