সম্পাদকীয়...
তিষ্ঠ ক্ষণকাল
সুপবন বহিতেছে। পাল উড়াইয়া দাও। তাহাতে নাম লেখ শ্রীমধুসূদন। অবশ্য, সেই পালে যদি ছবি থাকে, তাহা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হইলেও ক্ষতি নাই। প্রথম তিনটি বাক্য, অবিকল না হইলেও, বঙ্কিমচন্দ্র উবাচ। চতুর্থটি বিশেষ পরিস্থিতি-জাত। কী সেই পরিস্থিতি, তাহা সুবিদিত। সম্প্রতি মধুসূদনেরই নামাঙ্কিত প্রেক্ষাগৃহে তাঁহার জন্মদিবস পালন-অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপনী চিত্রে রবীন্দ্রনাথের মুখ দেখা গিয়াছে। যৌবনের প্রারম্ভে মধুসূদনের কবিত্বকে অস্বীকার করিয়া রবীন্দ্রনাথের সূচনা। সেই মধু-কবিরই আনন-স্থলে কি না জুড়িয়া বসিল রবীন্দ্রনাথের মুখচ্ছবি! আমার মাঝে তোমারি মায়া জাগালে তুমি কবি, রবীন্দ্রনাথের এই ব্যাকুলতা, অন্য অর্থে, সত্য হইল কি এত দিনে? তেমনই, আক্ষরিকই কি ব্যর্থ হইল মধুসূদনের মিনতি, রেখো মা দাসেরে মনে। তাঁহার কবিত্ব দূরে থাকুক, তাঁহার মুখটিও কি ভুলিল তাঁহারই স্বদেশবাসীগণ? কিন্তু, নিন্দুকগণ, তিষ্ঠ ক্ষণকাল! ছন্দে অমিত্রাক্ষরের প্রবর্ত্তক, জীবনেও চূড়ান্ত নিঃসঙ্গ সাগরদাঁড়ির কবিবরের জন্য একটি সান্ত্বনা আছে। জন্মদিন পালনের ইতিহাস খতাইয়া দেখিলে জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব কালে জন্মদিন পালনের প্রথার সূচনায় ছিল একটি বিশ্বাস জন্মদিনের দিন জাতকের নিকট অশুভ আত্মা আসে। তাহাদের করাল গ্রাস হইতে জাতককে রক্ষা করিবার জন্যই তাহার গৃহে অন্য লোকজনেরা সমবেত হইতেন। আদিতে উপহার আনিবার রীতি ছিল না, জাতককে অশনি সঙ্কেত হইতে আড়াল করাই ছিল জন-সমাগমের সার্থকতা। অতঃপর, দুই হাজার বারো খ্রিস্টাব্দে মধুসূদন দত্তকে আড়াল করিয়া উঠিয়া আসিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই বিচিত্র ঘটনা-চক্রে তিনিও কি তাঁহার অগ্রপথিকের ঋণ শোধ করিলেন কিছু পরিমাণে?
এই পর্যন্ত ঠিক ছিল। প্রশ্ন উঠিবে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কী পাইলেন? অকারণে অকালে তাঁহার ডাক পড়িল। কিন্তু, নিতান্ত ‘অকাল’-ই বা কে বলিবে? জগতে ‘আনবার্থডে’ বলিয়াও একটি বস্তু আছে। বিশ্বাস না হয়, স্বয়ং লুইস ক্যারল সাক্ষী। ‘থ্রু দ্য লুকিং গ্লাস’ গ্রন্থে অ্যালিস দেখিয়াছিল ‘হাম্পটি ডাম্পটি’ একটি বিচিত্র গলাবন্ধ গোছের বস্তু, পরিভাষায় ‘ক্র্যাভাট’ পরিয়া আছে। বেচারা অ্যালিস বুঝে নাই। সে ইহাকে নিতান্ত একটি ‘বেল্ট’ বলিয়া ঠাউরাইয়াছিল। হাম্পটি বুঝাইয়া দিয়াছিল, ইহা একটি উপহার। ‘আনবার্থডে’-র উপহার! ‘আনবার্থডে’! সে আবার কী? অতীব সরল। বছরে জন্মদিন তো একটিই দিন মাত্র, বাকি তিনশত চৌষট্টি (চারি বৎসর অন্তর তিনশত পঁয়ষট্টি) দিনই তো ‘আনবার্থডে’। জন্মদিন নিতান্তই একটি বাৎসরিক অনুষ্ঠান, ‘আনবার্থডে’ তো দৈনিক, কার্যত নিত্য নৈমিত্তিক একটি মজা। সে মজার শেষ কোথায়? সুতরাং, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তেমন একটি ‘আনবার্থডে’, বঙ্গীয় শব্দকল্পে ‘না-জন্মদিন’-এর উপহার লাভ করিলেন বলিলে অ্যালিস আপত্তি করিবে না। কবি সার্বভৌম স্বয়ং মৃদু হাস্য করিবেন হয়তো। না চাহিলে যাহা পাওয়া যায়, তাহার মূল্য আর কে-ই বা তেমন করিয়া বুঝে, তিনি ছাড়া?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.