কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে বেশ কয়েক দফা দাবি নিয়ে শনিবার দুপুরে শহরের পথে নামলেন রাজ্যের ছোট ও মাঝারি স্বর্ণব্যবসায়ীরা। বেলা ১১টা থেকে একটা পর্যন্ত স্বর্ণব্যবসায়ীদের মিছিলের জেরে মধ্য কলকাতায় তীব্র যানজট দেখা দেয়।
বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক টগরচন্দ্র পোদ্দার বলেন, “সোনার গয়না তৈরির জন্য উৎপাদন কর এবং পরিষেবা কর মকুব-সহ ১৭ দফা দাবি নিয়ে ধর্মতলায় জমায়েতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তাই শহর এবং শহরতলির সমস্ত স্বর্ণশিল্পীদের আসতে বলা হয়।” বৌবাজার ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার মোড় থেকে নির্মল চন্দ্র স্ট্রিট, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড, এস এন ব্যানার্জি রোড হয়ে মিছিল করে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে সভা করেন স্বর্ণব্যবসায়ীরা। পুলিশের দাবি, মিছিলে আড়াই-তিন হাজার লোক হয়েছিল। স্বর্ণব্যবসায়ীদের অবশ্য দাবি, অন্তত হাজার দশেক লোক মিছিলে যোগ দেয়।
পুলিশ জানায়, সকালে শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশন থেকে বিক্ষিপ্ত মিছিলে স্বর্ণব্যবসায়ীরা বৌবাজারে মিছিলে আসেন। এর ফলে সকাল থেকেই মধ্য কলকাতায় যানজট দেখা গিয়েছে। মিছিলের জেরে ক্রমশ গাড়ির চাপ বাড়ে মহাত্মা গাঁধী রোড, এজেসি বসু রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ বা লেনিন সরণির মতো সংলগ্ন রাস্তাগুলোয়। বেলা ১১টা থেকে একটা পর্যন্ত অবস্থা ছিল সব থেকে সঙ্গীন। বেলা দেড়টার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
পুলিশ সূত্রের খবর, মিছিলের জন্য উত্তরমুখী যানবাহনও ধর্মতলার মুখে যানজটে আটকায়। আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার কাছ থেকে ধর্মতলা যাবেন বলে এ দিন বাসে উঠেছিলেন ওই তল্লাটের বাসিন্দা অনিমেষ দাস। বাসে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের মুখ অবধি পৌঁছতেই ঝাড়া ৪৫ মিনিট লেগে যায় তাঁর। শেষে বাস থেকে নেমে দুপুরে ঠা ঠা রোদ মাথায় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ অবধি হেঁটে ধর্মতলার বাস ধরতে হয় তাঁকে। অনিমেষবাবু বলেন, “ধর্মতলায় জরুরি কাজ। তাই যেতেই হল। আমি তা-ও ৪৫ মিনিট বাসে আটকে থাকার পরে হেঁটে এসে বাস ধরি। তবে আমার বৃদ্ধ বাবা বাসে অত ক্ষণ ঠায় বসে কাহিল হয়ে পড়েছিলেন। উনি নেমে উল্টো দিকে বাড়িই ফিরে যান।”
স্বর্ণব্যবসায়ীদের তরফে অবশ্য সরকার-বিরোধী এই আন্দোলন লাগাতার চলবে বলে জানানো হয়েছে। এর আগে মার্চ মাসে বাজেট-ঘোষণার পরে তিন দিন ব্যবসা-বন্ধ পালন করেছেন তাঁরা। টগরবাবুর কথায়, “শুনেছি, অর্থমন্ত্রী উৎপাদন কর
মকুবের কথা বলেছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের খবর জানি না। ”
রাজ্যেও বেশ কয়েকটি সমস্যার কথা তুলে ধরেন টগরবাবু। তিনি বলেন, “বিভিন্ন পুরসভায় ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আলাদা-আলাদা খরচ। সরকারি কর্মচারীদের কাছ থেকে সোনা ওজনের যন্ত্র (নিক্তি) পেতে আমাদের নানা দুর্নীতির শিকার হতে হয়। আমাদের সচিত্র পরিচয়পত্র নেই বলেও সমস্যা হচ্ছে।” তাঁর অভিযোগ, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বড়-বড় সোনার দোকানের মালিকদের সঙ্গে দেখা করেছেন। কিন্তু আমরা বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও আমাদের সময় দেননি। ” |