সপ্তাহান্তের দুপুরে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন ইয়ালা শহরের বাসিন্দারা। জোরকদমে কেনাকাটা, খাওয়াদাওয়া চলছিল জনবহুল বাজার এলাকায়। তার মধ্যেই ধারাবাহিক বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল উপদ্রুত এলাকা বলে চিহ্নিত দক্ষিণ তাইল্যান্ডের এই শহর। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে তিনটি বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন অন্তত ১১ জন। জখম শতাধিক। তাঁদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। এই বিস্ফোরণের পিছনে সরকার বিরোধী সশস্ত্র কোনও গোষ্ঠীর হাত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তাইল্যান্ড প্রশাসন ও সেনার তরফে জানা গিয়েছে, শনিবার দুপুর বারোটা নাগাদ প্রথম বিস্ফোরণটি হয় ইয়ালার মূল বাণিজ্য এলাকায়। একটি গাড়িতে ওই বোমা রাখা ছিল। পুলিশের ধারণা, মোবাইলের মাধ্যমে দূর থেকে বোমাটি ফাটানো হয়। বিস্ফোরণের জেরে আগুন ধরে যায় সংলগ্ন দোকানগুলিতে। আতঙ্ক যখন একটু কমেছে, ধীরে ধীরে কৌতূহলী মানুষের ভিড় জমতে শুরু করে ঘটনাস্থলে। তখনই ফের এক বার কেঁপে উঠল ইয়ালা। পরিণতি হল আরও মারাত্মক। এ বারেও বিস্ফোরক রাখা ছিল একটি গাড়িতে। তৃতীয় বোমাটি রাখা ছিল একটি মোটরবাইকে। |
বিস্ফোরণে উড়ে যাওয়া গাড়ি থেকে চলছে নমুনা সংগ্রহ। ছবি: এ এফ পি |
কয়েক মিনিটের মধ্যে সেটিও ফেটে যায়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনাস্থলেই মারা যান কয়েক জন। রাস্তাতেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন অনেকে। তাঁদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এলাকায় যায় বম্ব স্কোয়াড, আগুন নেভানোর কাজে নামানো হয় দমকল বাহিনীকে।
সেনাবাহিনীর দক্ষিণ তাইল্যান্ড এলাকার মুখপাত্র প্রামট প্রোমিন বলেন, “ওদের লক্ষ্য ছিল সাধারণ মানুষ। তাই ইয়ালার মূল বাণিজ্য এলাকাটা বেছে নিয়েছিল ওরা।” ইয়ালার ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর মারাত্মক কড়াকড়ি ছিল আগে। কিন্তু ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ আসায় ২০১১-এ নিরাপত্তা আলগা করে দেওয়া হয়।
ইয়ালা, নারাথিওয়াত, পাট্টানি মালয়েশিয়ার সীমান্তে অবস্থিত দক্ষিণ তাইল্যান্ডের এই তিন প্রদেশে ২০০৪ সাল থেকেই বিভিন্ন দাবিতে সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন চালাচ্ছে বেশ কয়েকটি গোষ্ঠী। |
গত কয়েক বছরে বেশ কয়েক বার এখানে সেনাবাহিনী ও সরকার বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ, গাড়িবোমা বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটেছে। জরুরি অবস্থাও জারি হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলির হিসেবে গত আট বছরে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ মারা গিয়েছেন সংঘর্ষে। ২০০৫ সালে ওই তিন প্রদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়। সন্দেহ হলেই গ্রেফতার। তবে তাতে যে কোনও লাভ হয়নি, এ দিনের ঘটনায় তা স্পষ্ট। স্বীকার করে নিয়েছে সেনাবাহিনী এবং প্রশাসনও। তাদের দাবি, শনিবার যে ভাবে জনবহুল এলাকায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে, তা থেকে পরিষ্কার সরকার বিরোধী কোনও গোষ্ঠীরই কাজ হবে। ইয়ালার গভর্নর বলেন, “এখনও জানি না এটা কোন বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর কাণ্ড। তদন্ত চলছে।” |