এগোয়নি তদন্ত
ধর্ষণ-মামলাগুলির হাল দেখতে
আসছে জাতীয় মহিলা কমিশন
পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ মামলায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল কাদেরকে। কিন্তু তাকে ধরা যায়নি। কখনও দেশে, কখনও বা দেশের বাইরে কাদেরের ‘মোবাইল লোকেশন’ জানা গেলেও তদন্ত কার্যত থমকে রয়েছে।
কাটোয়ায় ট্রেন থেকে নামিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযোগকারিণীর দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী দুই অভিযুক্তের ছবি এঁকেছিল পুলিশ। পরে তাদের বাড়ি থেকে ছবিও জোগাড় করা হয়। কিন্তু অভিযুক্তেরা এখনও পুলিশের নাগালের বাইরে।
বরাহনগর থেকে এক ঝুপড়িবাসীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ ও পরে ওই মহিলার মৃত্যুর তদন্তে নেমে পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করে। বেশ কিছু দিন নিজেদের হেফাজতে রেখে লাগাতার জেরা করেও কোনও সূত্র উদ্ধার করতে পারেননি তদন্তকারী অফিসারেরা। ফলে তদন্ত এগোয়নি।
বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক মূক ও বধির কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসক রামকৃষ্ণ সরকার বর্তমানে জামিনে মুক্ত। শনাক্তকরণের সময়ে (টিআই প্যারেডে) অভিযুক্তকে চিনিয়ে দিতে পারেনি ওই কিশোরী, এমনই দাবি পুলিশের। কিশোরীর মায়ের বক্তব্য, মেয়েকে কেন টিআই প্যারেডে হাজির করানো হয়েছে, সেটা তাকে বুঝিয়েই বলেনি পুলিশ।
গত দু’মাসের মধ্যে কলকাতা ও বিভিন্ন জেলায় ঘটে যাওয়া এই মামলাগুলির বতর্মান পরিস্থিতি এক নজরে এমনই। অথচ এই মামলাগুলির হালহকিকৎ খতিয়ে দেখতেই জাতীয় মহিলা কমিশনের একটি প্রতিনিধিদল ২ এপ্রিল রাজ্যে আসছে। দলের নেতৃত্বে থাকবেন, কমিশনের সদস্য সচিব অনিতা অগ্নিহোত্রী। অন্য দুই সদস্য হলেন, নির্মলা সামন্ত ও ওয়ানসুক সিম। দু’দিনের সফরে আগামী সোমবার মহাকরণে তাঁরা মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, কলকাতা পুলিশের সিপি এবং সমাজ কল্যাণ দফতরের সচিবের সঙ্গে বৈঠক করবেন। অনিতাদেবী বলেন, “ধর্ষণের মামলাগুলির তদন্ত কী ভাবে এগোচ্ছে, নিরপেক্ষতা বজায় থাকছে কি না, অভিযোগকারিণীরাই বা কেমন আছেন এগুলো দেখাই কমিশনের মূল লক্ষ্য।” এই নিয়ে মঙ্গলবার থেকেই ব্যস্ততা বেড়েছে পুলিশ মহলে। মামলাগুলির তদন্ত কোন পর্যায়ে রয়েছে জানতে পুলিশ সুপারদের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে স্বরাষ্ট্র দফতর।
মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা এই মামলাগুলি নিয়ে কথা বলার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও দেখা করতে চেয়েছেন। কমিশনের সদস্য সচিব বৃহস্পতিবার বলেন, “আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সময় চেয়েছি। এখনও কোনও জবাব অবশ্য আসেনি।” সিএমও সূত্রে মহিলা কমিশনের চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার করে জানানো হয়েছে, এ নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।”
‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো’র তথ্য বলছে, নারী নির্যাতনের নথিভুক্ত মামলার নিরিখে অন্ধ্রপ্রদেশের স্থান সবার উপরে। তার পরেই পশ্চিমবঙ্গ। ২০১০-এ অন্ধ্রপ্রদেশে ২৭২৪৪টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে, এ রাজ্যে ২৬১২৫টি। সে দিকে তাকিয়েই বিভিন্ন জেলায় প্রথম দফায় ১০টি মহিলা থানা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কিন্তু সেখানেও এত লোকাভাব যে, তদন্ত ঠিক মতো হচ্ছে না বলে অভিযোগ। উপরন্তু পরপর ধর্ষণের ঘটনাগুলিতে মুখ্যমন্ত্রীর নিজের বক্তব্যই পরিস্থিতি জটিলতর করেছে বলে পুলিশেরই একাংশের দাবি।
পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য ছিল, সাজানো ঘটনা। কাটোয়া-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ডাক্তারি পরীক্ষায় কোনও প্রমাণ মেলেনি। এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চক্রান্ত আছে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। বরাহনগরের ক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য ছিল, ওই মহিলার দ্বিতীয় স্বামী টাকা নিয়ে তাঁকে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছেন। খোদ মুখ্যমন্ত্রী এমন অবস্থান নিলে আদৌ কতটা ‘নিরপেক্ষ’ ভাবে তদন্ত করা যাবে, সংশয়ে রয়েছেন পুলিশের একাংশ।
পুলিশ সূত্রই বলছে, বাঁকুড়ায় টিআই প্যারেডের সময় মূক ও বধির কিশোরীকে সাহায্য করার জন্য কোনও বিশেষজ্ঞ ছিলেন না। ফলে কেন তাকে সেখানে হাজির করানো হয়েছে, সেটা বুঝতেই পারেনি সে। তার মায়ের দাবি, মেয়ে না পারলেও তিনি নিজে অভিযুক্তকে চিনিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তা গ্রাহ্য করেনি। জেলা পুলিশের বক্তব্য, কিশোরীর মা যেহেতু ঘটনাস্থলে হাজির ছিলেন না, তাই তাঁর বক্তব্য গ্রহণীয় নয়। কিন্তু একাধিক পুলিশ কর্তা ওই বক্তব্য খণ্ডন করে বলেছেন, মেয়েটিকে যখন হাসপাতালের ফিমেল মেডিসিন বিভাগ থেকে পাশের ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তার মা সেখানে হাজির ছিলেন। ফলে তিনিও চিনিয়ে দিতে পারেন। কাটোয়ায় অভিযোগকারিণী অবশ্য ছবি দেখে দুই মূল অভিযুক্তকে চিনিয়ে দিয়েছিলেন। পুলিশ জানতে পেরেছিল, ওই দু’জনের বাড়ি বীরভূমের লাভপুরে। কিন্তু কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি তারা।
জাতীয় মহিলা কমিশনের তদ্বিরে কি মামলাগুলি ফের গতি পায় কি না, সেটাই দেখার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.