কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমার অনন্য এক পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন কামতেশ্বরী মন্দির। মন্দিরের আরাধ্য দেবী মা ভবানী। তাই এটি ভবানী মন্দির নামেও পরিচিত। মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা কে, তা নিয়ে মতভেদ আছে। শোনা যায়, সেনবংশীয় রাজা নীলধ্বজ ছিলেন মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন কামতেশ্বরীর ভক্ত। দেবীর নাম অনুসারে রাজ্যের নাম হয় কামতা, রাজধানী হল কামতেশ্বর। সেনবংশীয় আরও দুজন রাজা চক্রধ্বজ ও নীলাম্বর কামতাপুরের শাসক ছিলেন। কারও মতে নীলাম্বরই এই মন্দিরটি তৈরি করেন। কিংবদন্তি, কামতাদেবীর ভক্ত ছিলেন কামতেশ্বর নামে অন্য এক রাজা। যিনি আদি মন্দিরটি তৈরি করেন। তবে ইতিহাসবিদদের মতে, মহারাজা প্রাণনারায়ণের সময় কোচবিহারের বেশিরভাগ মন্দির তৈরি হয়। সুতরাং কামতেশ্বরী মন্দিরের আদি প্রতিষ্ঠাতা মহারাজা প্রাণনারায়ণ। |
বর্তমান মন্দিরটি গড়ে ওঠে ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে। রাজার আদেশে কবি মন্ডল নামে জনৈক ব্যক্তি মন্দিরের নির্মাণ কাজ করেছিলেন। মন্দিরের জন্য মহারাজা প্রচুর ভূসম্পত্তিও দান করেন। তাঁর মন্দির প্রতিষ্ঠার পাথুরে প্রমাণটি রয়েছে পশ্চিমদিকের প্রবেশপথের দরজার ওপরে। মন্দিরের গঠনশৈলী অভিনবত্বের দাবি রাখে। মন্দির প্রাঙ্গণ সুউচ্চ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। উত্তর ও পশ্চিমদিকে রয়েছে দুটি প্রবেশ পথ। মন্দিরটি ৪৫ ফুট উঁচু। পশ্চিম দরজার ওপরে রয়েছে নহবৎখানা। গর্ভগৃহে কাঠের সিংহাসনে দেবী বিরাজিত। এ ছাড়া ভেতরে রয়েছে পালযুগের শিল্প-নিদর্শন। পাথরের বিষ্ণু মূর্তি, সূর্য মূর্তি, ব্রহ্মা ও শিবলিঙ্গ। মূল মন্দিরের উত্তরপূর্ব কোণে রয়েছে শিবমন্দির। মন্দির চত্বরে রয়েছে ভোগ ঘর, হোম ঘর ইত্যাদি। মন্দিরের বিশেষ উৎসবটি হয় মাঘ মাসে। কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট বর্তমানে মন্দিরটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে।
|
বসন্তোৎসবে মাতল বালুরঘাট। যেন এক টুকরো শান্তিনিকেতন। শহরের রাস্তায় রাস্তায় তখন উড়ছে আবির। ঘুরছে গান। ‘আবির নৃত্যালয়’, ‘ছন্দম কলাকেন্দ্র’, ‘নান্দনিক নৃত্যালয়’, ‘সুর মালঞ্চ মিউজিক কলেজ’ এবং ‘স্পন্দন’-এর আয়োজনে বসন্তের রব ছড়িয়ে পড়ল আকাশে বাতাসে। প্রগতি সংঘের মাঠ, নবপ্রভাত, শিব তলি, কলেজ মোড়, থানা মোড়, বালুরঘাট উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অংশ নিলেন ছোটদের সঙ্গে অভিভাবকরাও। নৃত্যপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নৃত্যানুষ্ঠানের মাধ্যমে দোল এবং হোলি উদ্যাপন। বালুরঘাট ফরেস্টের গাছগুলির গায়ে তখন লাল, সবুজ, হলুদ, গোলাপি, বেগুনি আবিরের ছড়াছড়ি। কবিগুরুর সাধের শান্তিনিকেতনে যে ভাবে শিমুল-পলাশের গন্ধে ঘোর লেগে থাকে শান্তিনিকেতনবাসীর, বালুরঘাটবাসীও সে ভাবেই শুষে নিলেন এই দু’দিন বসন্তের সব রং, রূপ, রস ও গন্ধ।
|
মালদহ জেলার বামনগোলা থানার মদনাবতী গ্রামের মেঘডুমরা পুকুরপাড়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঐতিহাসিক ‘কেরি মেলা’। বাংলা হরফের ছাপাখানার জনক উইলিয়ম কেরির পুত্র পিটার কেরির সমাধিতে পুষ্পার্ঘ দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অঞ্চলের বিশিষ্ট বাসিন্দারা। দশ দিনের এই মেলায় নানা রকম জিনিসের পসরার পাশাপাশি বসেছিল সার্কাসের তাঁবু, জাদুখেলার আসর। এ ক’দিন ধরে মেলার মঞ্চে কেরি সম্পর্কে আলোচনা ও কবিতা পাঠ হয়। মেঘডুমরা পুকুর পাড়ের নীলচাষের ধ্বংসস্তূপ আজও নীরবে বলে চলে নীল চাষের কাহিনি ও উইলিয়ম কেরির কীর্তি।
|
নাটক মানুষকে দায়বদ্ধতা, বন্ধুত্ব শেখায়। সম্প্রতি এমনই একটা নাটক ‘চেনামুখ’ অনুষ্ঠিত হল আলিপুরদুয়ার জংশন রেলওয়ে ইনস্টিটিউট হলে। পরিবেশনায় আলিপুরদুয়ারের ‘সংঘশ্রী যুব নাট্য সংস্থা’। নাটকটিতে ১৯৪৬-এ ঢাকায় নোয়াখালির দাঙ্গার ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে মৃত্যুপথযাত্রী অন্নদাচরণের বয়স নব্বইয়ের ঊর্দ্ধে। বাবুপুর গ্রামে বাস ছেলে ধীরেন ও বউমা কমলাকে নিয়ে। জাতিদাঙ্গায় বিধ্বস্ত ধীরেন ও তাঁর স্ত্রী কমলা গ্রাম ছেড়ে পালাতে পারে না মুমূর্র্ষু পিতার জন্য। দীর্ঘ দিন রোগ ভোগের পর পিতার মৃত্যু হয়। তখন ধীরেনের ছোটবেলার মুসলিম বন্ধু জামাল হাজার প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বন্ধুর মৃত পিতার হিন্দুমতে অন্ত্যে ষ্টি ক্রিয়ার দায়িত্ব নেয়। বন্ধুর হাতে বাবার শেষকৃত্যের দায়িত্ব দিয়ে ধীরেন স্ত্রীকে নিয়ে রাতের অন্ধকারে পাড়ি দেয় সীমান্তের পথে। এই ভাবে নাটকে উঠে এসেছে সম্প্রীতির নিদর্শন।
|
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন দিক অনুসন্ধান করে প্রকাশিত হয়েছে ভারততীর্থ উত্তরবঙ্গ। বিশ্বকবির জন্মের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে কবির ‘ভারততীর্থ’ কবিতার নামটিতে গ্রন্থের নামকরণ করা হয়েছে। সংকলিত প্রবন্ধের সংখ্যা ১৮টি। প্রবন্ধগুলি আধুনিক কালের এবং ঔপনিবেশিক শাসন ও উত্তর ঔপনিবেশিক শাসন পর্বের। সেই জন্য উত্তরবঙ্গের উত্তরাংশের আলোচনা গ্রন্থটিতে গুরুত্ব পেয়েছে। উত্তরবঙ্গ সম্পর্কিত নানা তথ্যে গ্রন্থটিকে সমৃদ্ধ করেছেন লেখক-লেখিকারা। সম্পাদনা করেছেন ড. আনন্দগোপাল ঘোষ এবং ড.অসীমকুমার সরকার।
|
উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের মালগাঁও-তে বাড়ি কিশোরটির। নাম মহম্মদ শাহিদ। বাবার সঙ্গতি নেই ছেলেকে পড়ানোর। হাল ছাড়তে নারাজ ছেলে। ছুটির দিনে রিকশা চালিয়ে অর্থ উপার্জন করে সে। এ ভাবে পড়াশুনোর খরচ জোগাড় করে এই ছাত্র। লড়াইকে পাথেয় করে প্রতিষ্ঠিত হতে চায় সে। ডারউইনকথিত ‘স্ট্রাগল ফর একজিসটেন্স’ বোধহয় একেই বলে। |