ইচ্ছেমতো সওয়ারি তোলা থেকে মর্জিমাফিক যত্রতত্র বিচরণ— কলকাতার নাগরিক জীবনে অটোর ‘যথেচ্ছাচারের সংস্কৃতি’ ভাঙতে অবশেষে রাজ্য সরকারের ‘সদিচ্ছা’ দেখা যাচ্ছে। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহেই অটো ইউনিয়নগুলির সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠকে বসছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। মঙ্গলবার মহাকরণে এ কথা জানিয়েছেন তিনি।
রাজ্যে বেআইনি ‘অটো-রাজের’ বিষয়টিও মেনে নেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “অটো নিজের মতো চললে হবে না। তাকে পরিবহণ আইন মেনে চলতে হবে। রাজ্যে ৮০ শতাংশ অটোই বেআইনি। একই নম্বরে তিন-চারটে অটো চলছে।”
এ রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের ফলে তৃণমূল সরকার আসার পরে অটো ইউনিয়নগুলির সঙ্গে রাজ্য সরকারের শীর্ষ স্তরে এটাই হবে প্রথম বৈঠক। আগে বাম জমানাতেও অটোর সর্বাধিক যাত্রীর সংখ্যা থেকে শুরু করে রুটের বিন্যাস নানা বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে গিয়েছিল সরকার। বাস্তবে সে সব নিয়ম কতটুকু কার্যকর করা গিয়েছে? কলকাতার আম-নাগরিকের অভিজ্ঞতা বলছে, অটোয় ক’জন যাত্রী বসবে থেকে শুরু করে কত ভাড়ায় কোন রুটে অটো চলবে, সব ক্ষেত্রেই এক-একটি রুটের ইউনিয়ন নেতারাই শেষ কথা বলে এসেছেন।
এক সময়ে অটোর চলাফেরা নিয়ে এ রাজ্যে যাঁদের কথা ‘শিরোধার্য’ ছিল, সিটু নিয়ন্ত্রিত সেই অটোরিকশা অপারেটর্স ইউনিয়নের সভাপতি কিশোর ঘোষও মানেন, সাবেক কলকাতায় অটোর বিষয়ে কিছুটা শৃঙ্খলা আনা গেলেও সার্বিক ভাবে অটোচালকদের নিয়মে বাঁধার কাজে অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছিলেন তাঁরা। তা হলে নতুন সরকারের পরিবহণমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কী আশা করছেন কিশোরবাবুরা? তিনি বলেন, “আগে সুভাষ চক্রবর্তী বা রঞ্জিত কুণ্ডু পরিবহণমন্ত্রী থাকাকালীনও আমরা চেয়েছি, রাজ্য সরকারই বাসভাড়ার মতো কিলোমিটার-ভিত্তিক অটো-ভাড়া বেঁধে দিক। নতুন সরকার এ বিষয়ে কিছু করুক, সেটাই চাই। তা হলে ভাড়া নিয়ে ইউনিয়নে-ইউনিয়নে ঝুটঝামেলা বন্ধ হবে।” কিশোরবাবুর অভিযোগ, “কিছু কিছু রুটে তৃণমূল ইউনিয়নের অনুগামী অটোরা বেশি ভাড়া হাঁকাচ্ছে।” ‘পরিবর্তনের’ পরে বেশির ভাগ অটো যাঁদের ছত্রচ্ছায়ায় যোগ দিয়েছে, সেই তৃণমূলের অনুগামী আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য কমিটির সভানেত্রী দোলা সেন অবশ্য এ সব অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর পাল্টা দাবি, “বাম জমানায় অটোর দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে কিছুই হয়নি। নতুন সরকার আসার পরেই অটোকে সুশৃঙ্খল করার চেষ্টা শুরু হয়েছে।” রাজ্যে পরিবহণ দফতরের কর্তাদের সঙ্গে ইতিমধ্যে তাঁরাও প্রাথমিক বৈঠকে বসেছেন জানিয়ে দোলাদেবীর দাবি, “পরিবহণমন্ত্রী বদল না-হলে এর মধ্যেই অটো ইউনিয়নের সঙ্গে মন্ত্রীর বৈঠক হয়ে যেত। আমরা সাংগঠনিক ভাবে এই বৈঠকের জন্য প্রস্তুত।” তাঁর কথায়, “আমরা নীতিগত ভাবে অটোর ভাড়া নিয়ে জুলুমের বিরুদ্ধে। আমরা চাই, অটোর ভাড়া সরকারই ঠিক করুক।” মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে অটোচালকদের নিয়ম মানার বিষয়টি সুনিশ্চিত করা হবে বলেও দোলাদেবী আশ্বাস দিয়েছেন।
অটো-শাসনের পাশাপাশি পরিবহণমন্ত্রী অবশ্য রাজ্যে অকেজো বাস ডিপো বা পরিবহণ দফতরে ‘অক্ষম’ কর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়েও উদ্বিগ্ন। ডিপোয় ন্যূনতম লাভ সুনিশ্চিত করতে হবে বলে মন্ত্রী এ দিন বিধানসভায় জানান। আর শারীরিক ভাবে অক্ষম কর্মীদের প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “বিশেষজ্ঞ কমিটি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তির চালকদের দিয়ে যাত্রীদের বিপদে ফেলা যাবে না।” |