জেলাশাসকের হাতে আর্থিক ক্ষমতা, দুই বাম জেলা পরিষদের ডানা ছাঁটল রাজ্য
সিদ্ধান্ত বেআইনি, বলছেন মেঘলাল
দিয়া জেলা পরিষদের আর্থিক ও উন্নয়নমূলক দায়-দায়িত্ব জেলাশাসকের হাতে তুলে দেওয়া হলেও কীভাবে তা জেলার উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করা হবে জেলাপরিষদের সভাধিপতি বা অন্যান্য কর্মাধ্যক্ষ ও নির্বাচিত সদস্যদের ভূমিকা কী হবে, সে বিষয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট কোনও নির্দেশ কিন্তু দেওয়া হয়নি।
জেলাশাসক অভিনব চন্দ্রা বলেন, “সোমবার রাতেই নির্দেশ পেয়েছি। কিন্তু কীভাবে বিষয়টি পরিচালিত হবে, তার কোনও সুনির্দিষ্ট রূপরেখা এখনও পাইনি। সেই অপেক্ষায় আছি।” তিনি বলেন, “উন্নয়নের ক্ষেত্রে যেখানে যেখানে সমস্যা আছে, সেগুলি ভাল করে বুঝে নিয়ে কাজ করতে হবে। সেক্ষেত্রে জেলা পরিষদের সভাধিপতি-সহ অন্যান্যদের পরামর্শ প্রয়োজন।”
এ ভাবে জেলা পরিষদের অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক কাজে সরকারি হস্তক্ষেপে স্বভাবতই ক্ষুব্ধ জেলার বামফ্রন্টের কর্মী-সমর্থকেরা। পুরো বিষয়টি বেআইনি বলে মন্তব্য করেছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি মেঘলাল শেখ। তিনি বলেন, “পুরো বিষয়টি শুধু অনৈতিক নয়, পুরোপুরি বেআইনি। গণতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকর। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পরবর্তী কর্মসূচি দলই ঠিক করবে।”
নদিয়া জেলা পরিষদ বামফ্রন্টের দখলে রয়েছে। ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলাপরিষদের মোট ৪৫টি আসনের মধ্যে বামফ্রন্ট জয়ী হয় ৩৪টি আসনে। দুটি পঞ্চায়েত সমিতিতে জয়ী হয়। সাংসদ ছিল দুজন এবং বিধায়ক সংখ্যা ছিল ১৪ জন। ফলে সাধারণ সভায় বামফ্রন্টের ভোট ছিল ৫২টি।
উল্টো দিকে জেলাপরিষদে কংগ্রেস ও তৃণমূলের সদস্য ছিল ১১ জন। তার মধ্যে কংগ্রেসের চার জন এবং তৃণমূলের ছিল সাত জন। পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূল ৯টি ও কংগ্রেস ৬টি-সহ মোট ১৪ টিতে জয়ী হয় ওই জোট। এ ছাড়া কংগ্রেসের এক জন সাংসদ ছিল। আর কংগ্রেসের এক জন ও তৃণমূলের দুজন-সহ জোটের তিন জন বিধায়ক থাকায় সাধারণ সভায় জোটের ভোট সংখ্যা ছিল ৩০টি।
এর পরে ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে পরিস্থিতির সামান্য বদল ঘটে। বামফ্রন্টের এক জনও লোকসভায় জয়ী না হওয়ায় জেলাপরিষদের সাধারণ সভায় বামফ্রন্টের ভোট সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৫০টি এবং চারটি আসনেই জোট প্রার্থী জয়ী হওয়ায় লোকসভা ভোটের পরে জোটের ভোট সংখ্যা হয় ৩৩টি।
কিন্তু ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটের পরে পরিস্থিতির পুরোপুরি পরিবর্তন ঘটে। বিধানসভার ১৭টি আসনের মধ্যে মাত্র তিনটিতে জয়ী হয় বামফ্রন্ট, ১টি আসনে কংগ্রেস ও ১৩টিতে তৃণমূল কংগ্রেস। ফলে সাধারণ সভায় বামফ্রন্টের ভোট সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৩৯টি।
এরই মধ্যে বামফ্রন্টের দুজন জেলাপরিষদ সদস্য মারা যান। এক জন সদস্য চাকরি পেয়ে পদত্যাগ করেন এবং এক জন করিমপুর বিধানসভা থেকে জয়ী হওয়ায় বামফ্রন্টের বর্তমান ভোট সংখ্যা ৩৫টি।
উল্টো দিকে বিধানসভা ভোটের পরে ১৪টি আসনে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী হয়। উজ্জ্বল বিশ্বাস মন্ত্রী হওয়ায় তাঁর ভোটাধিকার না থাকায় সাধারণ সভায় বর্তমানে জোটের ভোট সংখ্যা ৪৩টি। যদিও সোমবারের বাজেট পেশের সভায় বামফ্রন্টের ২৬ জন ও জোটের ৩৭ জন উপস্থিত ছিলেন।
আর্থিক উন্নয়ন ও উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয় জেলাশাসকের হাতে দেওয়ায় স্পষ্টতই খুশি কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস। জেলাপরিষদের বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের চঞ্চল দেবনাথ বলেন, “৩৪ বছর পরে এবার অপশাসনের আবসান হল। এত দিন জেলার মানুষ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। এর আগেও আমরা একাধিকবার উন্নয়নের স্বার্থে ওদের কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা সেই সুযোগ নিতে পারেনি। এই বাজেট মানলে জেলার মানুষের চরম ক্ষতি হত।”
আর শান্তিপুরের বিধায়ক অজয় দে বলেন, “এ ছাড়া সরকারের হাতে আর কোনও বিকল্প ছিল না। যে বাজেট তৈরি করেছিল, সেটা কোনও ভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়। এর আগেও বিভিন্ন প্রকল্পে ওরা টাকা খরচ করতে পারেনি।”
বিষয়টি কিন্তু কোনও ভাবেই মানতে পারছেন না বামফ্রন্টের কর্মী-সমর্থকরা। তারা ক্ষুব্ধ। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, “আগামীকাল বামফ্রন্টের বৈঠক ডাকা হয়েছে ওই বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমেই পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.