সব কিছু ঠিকঠাক চললে বছর খানেকের মধ্যেই ফুলবাড়ি ব্যারাজের জলে মিলবে মৌরলা, ট্যাংরা, সরপুঁটি। খলসেও! সে জন্য উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য মৎস্য দফতর। হাতে নেওয়া হয়েছে পরিকল্পনাও। একইসঙ্গে তরাই ও ডুয়ার্সের নদীনালা থেকে হারিয়ে যাওয়া ওই সব সুস্বাদু মাছ ফেরাতে আসরে নেমেছেন মৎস্য দফতরের আধিকারিকেরা। মৎস্য দফতর সূত্রের খবর, আগামী বর্ষায় কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলার বিভিন্ন নদী ও পুকুরে ওই সমস্ত মাছের চারা ছড়ানো হবে। এমনকী, এই সমস্ত মাছের চারা তৈরির ব্যাপারে মৎস্যজীবীরা যাতে উদ্যোগী হতে পারেন, সেই ব্যাপারেও সাহায্য করবে মৎস্য দফতর। দফতরের শিলিগুড়ির উপ অধিকর্তা তিমিরবরণ মণ্ডল জানিয়েছেন, ওই পরিকল্পনা সফল করে তুলতে কোচবিহার, দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি জেলার জন্য এই প্রকল্পে প্রায় ৪৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বিরল প্রজাতির মাছ চাষ ও সংরক্ষণ নিয়ে ওই তিন জেলাতে মৎস্যজীবীদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিমিরবাবু। উত্তরবঙ্গের এই তিন জেলায় বর্ষা দীর্ঘস্থায়ী। রাজ্যের অন্যত্র বর্ষা মোটামুটি ভাবে ৩-৪ মাস স্থায়ী হলেও উত্তরবঙ্গে প্রায় ৫-৬ মাস ধরে বৃষ্টি চলে। ফলে এখানে নদী-নালায় গ্রীষ্মের তিন মাস ছাড়া সারা বছর জল থাকে। কয়েক দশক আগেও বর্ষায় এই তিন জেলার অঢেল খলসে, ট্যাংরা, দেশি মাগুর মিলত। পুকুরে পুকুরে সরপুঁটি, মৌরলা পাওয়া যেত। তোর্সা নদী বোরোলি মাছের জন্য বিখ্যাত হলেও এই তিন জেলার প্রায় সব নদীতেই অঢেল বোরোলি মাছের দেখা মিলত। বাজারে মাছের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে কিছু মৎস্যজীবী মাছ শিকারের জন্য নদীতে বিষ ঢালা, জলের মধ্যে তড়িৎ প্রবাহ চালানো, মশারি দিয়ে মাছ ধরার মতো বেআইনি পদ্ধতি অবলম্বন করায় মাছ নদীনালা থেকে উধাও হতে শুরু করে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি এমন যে এখন ভরা বর্ষায় কিছু এলাকায় ট্যাংরা, বোরোলি, সরপুঁটির দেখা মিললে খলসে প্রায় দুর্লভ হয়ে পড়েছে। বরফে চাপা দেওয়া মৌরলাই মেলে বেশির ভাগ বাজারে। বহুমূল্য হয়ে পড়েছে দেশি মাগুর। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন মৎস্যজীবীরাই। বছরের কয়েক মাস পুঁটি, বোয়াল, শোল মাছ বিক্রি করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় মৎস্যজীবীদের। পেশা হারানোর সঙ্কটে পড়ে বহু মৎস্যজীবী দিনমজুরিতে নেমে পড়েছেন। অনেকে কাজের খোঁজে ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে বাজারে মাছের জোগাড় বাড়ানো এবং দুলর্ভ প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনতে গত কয়েক বছর ধরেই উদ্যোগী মৎস্য দফতর। গবেষণার ফলে ইতিমধ্যেই সরপুঁটি এবং দেশি মাগুরের কৃত্রিম চারা তৈরির কাজে সাফল্য এসেছে। বোরোলি, মৌরলার মতো মাছের কৃত্রিম চারা তৈরির কাজে গবেষণা চলছে। তবে নদীনালায় ওই সমস্ত মাছের চারা ছেড়ে বাজারে জোগাড় কিছু বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন মৎস্য দফতরের আধিকারিকেরা। উপ অধিকর্তা জানান, এই কাজে জেলা ভিত্তিক অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলা পাচ্ছে সাড়ে ৯ লক্ষ টাকা করে। দার্জিলিং পাহাড়ের ২০০টি ঝোরায় দুর্লভ প্রজাতির চারা ছাড়ার জন্য সাড়ে ১২ হাজার টাকা করে বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ টাকার যাতে অপচয় না-হয় সেজন্য মৎস্যজীবীদের সচেতন করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।সে জন্য ইতিমধ্যেই এই তিন জেলাতেই প্রতি ব্লকে শুরু হয়েছে মৎস্যজীবী দিবস উদযাপন অনুষ্ঠান। উপ অধিকর্তা বলেন, “ওই অনুষ্ঠানে মৎস্যজীবীদের বেআইনি পদ্ধতিতে মাছ ধরতে নিষেধ করা হচ্ছে। বেআইনি ভাবে ধরার জন্য যে বিরল মাছ হারিয়ে যাচ্ছে সেটাও বোঝানো হচ্ছে।” বাছাই মাছ চাষিদের নিয়ে জেলা স্তরেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। |