|
|
|
|
অণ্ণা-স্রোতে ভাটার টানে খুশি কংগ্রেস, অন্য দলও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
প্রথমে মুম্বই। তার পর দিল্লি। তিন মাসের ব্যবধানে একটা ছবি দেখতে পেল গোটা দেশ আগের মতো ভিড় টানতে পারছেন না অণ্ণা হজারে। তাঁর সভা ঘিরে সেই পরিচিত উচ্ছ্বাসও উধাও। একটা সময় যাঁকে ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক ভাবা হচ্ছিল, তাঁর সভায় ভাটার টান। অণ্ণার জনপ্রিয়তার সূচকের এই রাতারাতি পতনে কংগ্রেস-বিজেপি-মমতা-মুলায়ম সব রাজনৈতিক শিবিরই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে। অনেকটাই আশ্বস্ত গোটা রাজনৈতিক ব্যবস্থা।
গত বছর যন্তর-মন্তর বা রামলীলা ময়দান যে ভাবে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এই প্রবীণ সমাজকর্মী, তাতে ঘুম ছুটে গিয়েছিল দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতাদের। রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা তৈরি হয়ে আম-জনতার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিলেন অণ্ণা। তাঁকে গুরুত্বহীন করে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ফেরানোর চেষ্টাও করেছেন রাজনৈতিক নেতৃত্ব। কিন্তু তখন সে ভাবে লাভ হয়নি। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে অণ্ণার পরপর দু’টি সভার চেহারা দেখে এখন অনেকটাই নিশ্চিন্ত রাজনৈতিক নেতারা। আজ সংসদেও তার প্রতিফলন দেখা গেল।
দু’দিন আগে যন্তর-মন্তরে অণ্ণায় সভায় তাঁর সঙ্গীরা যে ভাবে সাংসদদের উদ্দেশে অপশব্দ ব্যবহার করেছেন, আজ সেই ‘ঔদ্ধত্যে’র জবাবে সতর্কবার্তা পাঠাল সংসদ। কিন্তু অণ্ণা বা তাঁর সঙ্গীরা যাতে ‘বীরের’ মর্যাদা না পান, তাই কৌশলগত কারণে লোকসভার স্পিকার মীরা কুমার নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করলেন না। বিশেষাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পথেও হাঁটলেন না। নাম না করে ‘টিম-অণ্ণা’কে বার্তা দিতে গিয়ে স্পিকার শুধু বললেন, “গোটা দেশের দৃষ্টিভঙ্গি সংসদে প্রতিফলিত হয়। তাই সংসদের মর্যাদা খাটো করতে পারে, এমন মন্তব্য অভিপ্রেত নয়।”
সরকারের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “সংসদ আজ ‘টিম-অণ্ণা’র বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা ফের সহানুভূতি কুড়িয়ে প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা চালাতেন। সেটা আঁচ করেই আজ সংযত প্রতিক্রিয়ার পক্ষপাতী ছিল কংগ্রেস। শরিক ও সমর্থকদের সে কথা বোঝানোও হয়।” তার পরেই আরজেডি-র রঘুবংশ প্রসাদ সিংহরা ‘টিম-অণ্ণা’র বাড়বাড়ন্তের জন্য বিজেপিকে কটাক্ষ করেন। রঘুবংশদের বক্তব্য, অণ্ণাদের বিরুদ্ধে কোনও নিন্দাপ্রস্তাব পাশের প্রয়োজন নেই। এক সাংসদের কথায়, “পাগলের কথায় কী এসে যায়!”
গত বছর অণ্ণা যখন দেশ জুড়ে কংগ্রেস বিরোধিতার মুখ হয়ে উঠেছেন, তখন তাঁর হাত থেকে রাশ ছিনিয়ে নিতেই রথযাত্রায় বেরিয়েছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। কংগ্রেসও তখন অণ্ণার আক্রমণের অভিমুখ তাদের দিক থেকে ঘুরিয়ে গোটা সংসদের বিরুদ্ধে সুকৌশলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। দিগ্বিজয় সিংহের মতো নেতারা আরএসএস-বিজেপির সঙ্গে অণ্ণার ঘনিষ্ঠতার প্রসঙ্গ বারবার তুলে অণ্ণাকে বিচ্ছিন্ন করার কৌশল নেন। সেটা সামলাতে গিয়ে অণ্ণা যে ভাবে আরএসএসের বিরুদ্ধে সরব হন, তাতে রুষ্ট হন মোহন ভাগবতরা। তার পরেই মুম্বইয়ের সভায় আরএসএস অণ্ণাকে সমর্থন করেনি। তাঁর সভা সফলও হয়নি।
শুধু কংগ্রেস বা বিজেপি নয়, সে সময় দিল্লিতে এক সংবাদমাধ্যমের ‘সেরা রাজনীতিক’-এর পুরস্কার নিতে এসে মঞ্চে অণ্ণার মুখোমুখি হয়েই সেখান থেকে চলে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অণ্ণার সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করেননি মমতা। আজ সংসদে শুধু কংগ্রেস বা বিজেপিই নয়, মুলায়ম-শরদ যাদব-ডিএমকে-এডিএমকে-বিএসপি-সহ সকলেই একযোগে অণ্ণা ও তাঁর সঙ্গীদের আচরণের তীব্র সমালোচনা করেন।
অণ্ণার বিরুদ্ধে বিজেপি-সহ সংসদের প্রায় সব দলের সম্মিলিত বিরোধিতা থেকে ফায়দা তুলতে চাইছে কংগ্রেস। গোটা সংসদ অণ্ণার বিরুদ্ধে এককাট্টা হলে তাদেরই লাভ। কারণ, লোকপাল ও দুর্নীতির প্রশ্নে অণ্ণা মূলত কংগ্রেসকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে সংসদে ‘টিম-অণ্ণা’র বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা দিয়ে কংগ্রেস সব দলকেই পাশে টানতে চাইছে।
কিন্তু কিছুটা বিপাকে বিজেপি। গত কাল লোকসভায় সুষমা স্বরাজ যে ভাবে অণ্ণাদের আক্রমণ করেছেন, তা নিয়ে তাঁর দলের মধ্যেই মতান্তর রয়েছে। অণ্ণাকে অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়ার ব্যাপারে আডবাণী-অরুণ জেটলি বা সুষমাদের মধ্যে কোনও মতভেদ নেই। বরং এঁরা সকলেই মনে করেন, অণ্ণাকে অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়ে কংগ্রেস বিরোধিতার রাশ বিজেপির হাতেই থাকা উচিত। কিন্তু সংসদে অণ্ণার বিরুদ্ধে সরব হতে গিয়ে কংগ্রেসকে বাড়তি সুবিধা করে দেওয়ার মধ্যে কৌশলগত ত্রুটি রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
ঘনিষ্ঠ মহলে অরুণ জেটলিও জানিয়েছেন, অণ্ণা যখন কংগ্রেসের দুর্নীতির প্রসঙ্গ তোলেন, তখন মধ্যবিত্তদের মধ্যে তার প্রভাব পড়ে। সেটি বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক। এই পরিস্থিতিতে অণ্ণার বিপরীত মঞ্চে থাকলে ভোট ময়দানে খেসারত দিতে হতে পারে। |
|
|
|
|
|