সাত দিন আগেই টানা এক ঘণ্টা ধরে আদালতে বিচারপতিদের ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছিল তাঁকে। শুনতে হয়েছিল কলকাতা পুলিশের ‘অকর্মণ্যতা’র কথাও। যে পথ-দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলকাতা হাইকোর্টে দাঁড়িয়ে এ সব কথা শুনেছিলেন পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা, মঙ্গলবার সকালে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় গিয়ে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে সেই ঘটনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীদের সঙ্গে কথা বললেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন অন্য পুলিশকর্তারাও। তবে, তাঁর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীদের কী কথা হয়েছে, সে ব্যাপারে কোনও প্রশ্নের উত্তর না-দিয়েই থানা ছাড়েন পচনন্দা। ডিসি (নর্থ) বিশাল গর্গ বলেন, “আদালত সংক্রান্ত ব্যাপারে যা বলার, পুলিশ কমিশনারই বলবেন।” তবে ঘটনাচক্রে তার আগেই থানা ছেড়েছেন সিপি। পুলিশ সূত্রের খবর, থানার ওসি এবং ট্রাফিক পুলিশের ফেটাল স্কোয়াডের (এফএসটিপি) ওসি-র সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা হয় তাঁর। দুই ওসি-ই তাঁদের বক্তব্য সিপি-র কাছে পেশ করেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ঘটনার সূত্রপাত চিত্ত বসু নামে এক সরকারি বাসচালকের আগাম জামিনের আবেদনকে কেন্দ্র করে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকায় চিত্তবাবুর বাসের ধাক্কায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এর পরে কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেন ওই বাসচালক। তার ভিত্তিতে ৫ মার্চ সংশ্লিষ্ট থানাকে ওই দুর্ঘটনার কেস-ডায়েরি হাজির করতে বলে হাইকোর্ট। কিন্তু ওই দিন কেস-ডায়েরি জমা করেনি থানা। পরের দিন, ৬ মার্চ ফের কেস-ডায়েরি চেয়ে পাঠানো হলেও থানার তরফে সেটি জমা পড়েনি। ৭ মার্চ ওই থানার ওসি-কে কেস-ডায়েরি নিয়ে ফের আদালতে হাজির হতে বলে হাইকোর্ট। কিন্তু সে দিন তাঁর পরিবর্তে ওসি (এফএসটিপি) কেস-ডায়েরি নিয়ে আদালতে হাজির হন। |
আদালত চাওয়া সত্ত্বেও কেন ওসি ঠিক সময়ে কেস-ডায়েরি পাঠাননি, পুলিশ কমিশনারকে তার তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেয় বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। কিন্তু ১৯ মার্চ হাইকোর্টে সিপি-র যে রিপোর্ট জমা পড়ে, তাতে দেখা যায়, তাঁর পরিবর্তে ঘটনার তদন্ত করেছেন ডিসি (নর্থ)। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে বারবার আদালতের নির্দেশ অগ্রাহ্য করার কারণে সিপি-কে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ। গত বুধবার, ২১ মার্চ সে কারণে আদালতে হাজির হয়েই পচনন্দাকে শুনতে হয় কলকাতা পুলিশের ‘অকর্মণ্যতা’র কথা। কিন্তু, এ দিন সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীদের সঙ্গে কী কথা হল পচনন্দার?
পুলিশ সূত্রের খবর, ৫ মার্চ থানার তরফে হাইকোর্টে কেস-ডায়েরি জমা না-পড়ায় তার পরের দিন বিকেলে আদালতের তরফে যোগাযোগ করা হয় ওসি (এফএসটিপি)-র সঙ্গে। সে কারণেই ৭ মার্চ কেস-ডায়েরি নিয়ে তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে তিনি হাইকোর্টে গিয়েছিলেন বলে সিপি-কে জানান ওসি (এফএসটিপি)। থানার ওসি সিপি-কে বলেন, হৃদ্রোগজনিত সমস্যার কারণেই নির্দিষ্ট দিনে কেস-ডায়েরি নিয়ে হাইকোর্টে হাজির হতে পারেননি তিনি। কিন্তু সে কথা সময় মতো তিনি হাইকোর্টকে জানিয়েছিলেন কি না, সে ব্যাপারেও প্রশ্ন করা হয় ওসি-কে। তাঁর হাইকোর্টে উপস্থিত না-হওয়ার জেরেই যে সিপি-কে গত সপ্তাহে ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়, সে কথাও এ দিন জানানো হয় ওসি-কে।
তবে, ওই দুই ওসি-র সঙ্গে কথা বলতে সিপি সদলবল কেন থানায় গেলেন, তা নিয়ে জল্পনা হচ্ছে পুলিশমহলে। |