কেরোসিন ঢেলে নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে নাচানাচি করছিল মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবক। এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখে ওই যুবককে বাঁচাতে এগিয়ে যান প্রতিবেশী এক বৃদ্ধ। যুবকটি রাস্তার ধারে পড়ে থাকা একটি মোটা লাঠি কুড়িয়ে সটান বৃদ্ধের মাথায় আঘাত করে। ঘটনাস্থলেই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। শনিবার সকালে মালবাজারের যোগেশচন্দ্র চা বাগান এলাকার শ্রমিক কলোনিতে ঘটনাটি ঘটে।
পুলিশ জানায়, মৃতের নাম সোমরা ওঁরাও (৬০)। স্থানীয় বাসিন্দারা আগুন নিভিয়ে বীরেন মুণ্ডা নামে ওই যুবককে আটক করে। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে। মালবাজার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অরিন্দম সরকার বলেন, “ওই যুবকের শরীরের ২৫ ভাগ পুড়েছে। মৃতের পরিবারের লোকজন অভিযোগ দায়ের করেছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।”
চা বাগান এলাকার বাসিন্দারা জানান, এ দিন সকালে ফাঁকা বাড়ি পেয়ে বীরেন রান্নাঘরে বসে গায়ের জামায় কেরোসিন ঢালে। তার পর পাটকাঠিতে আগুন ধরিয়ে লেবার লাইনের রাস্তায় হইচই শুরু করে। আচমকা সে জামায় আগুন লাগিয়ে দেয়। তার পর শুরু করে নাচ। আগুন দেখে আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কিন্তু মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় আগুন নেভোনোর জন্য কেউ তাঁর কাছে যাননি। ওই সময় গাড়া লাইনের প্রবীণ বাসিন্দা সোমরা ওঁরাও সাহস করে এগিয়ে যান। কিন্তু তিনি সামনে যেতেই বীরেন হাতের সামনে পড়ে থাকা লাঠি তুলে সোমরার মাথায় মারে। বৃদ্ধ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মাথা ফেটে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। ওই ফাঁকে স্থানীয় বাসিন্দারা বীরেনকে ধরে ফেলে কম্বল চাপা দিয়ে আগুন নিভিয়ে ক্রান্তি ফাঁড়ির পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশ তাকে মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে। মনোবিদদের একাংশের মতে, ‘স্কিৎজোফ্রেনিয়া’র শিকার হলে অনেক সময় এই ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকেন অনেকে। চিকিৎসকদের একাংশের মতে, ‘বাই পোলার ডিসঅর্ডারে’র কারণেও এই ধরনের আচরণ করে থাকতে পারেন। কিন্তু এই যুবকটির ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছে, তা তাঁর মানসিক রোগ নির্ণয়ের পরেই বলা যেতে পারে। মালবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বিজয় মুণ্ডা বলেন, “বীরেন দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগে ভুগছে। কিন্তু এর আগে কখনও গায়ে আগুন দেয়নি। এলাকার কেউ ভাবতে পারছে না এমনটা ঘটবে।” স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বীরেনের স্ত্রী চা শ্রমিক। তাঁদের দুই সন্তান আছে। ঘটনার সময় স্ত্রী ও সন্তানেরা বাড়িতে ছিলেন না। এক বছর আগে বীরেন কাজের খোঁজে ভিন্ রাজ্যে যায়। সম্প্রতি সেখান থেকে ফিরে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। মাঝেমধ্যেই তাকে ফাঁকা রাস্তায় চিৎকার করে বেড়াতে দেখা গিয়েছে। |