রাজ্যের বাজেট প্রস্তাবকে অনিশ্চিত এবং অসম্পূর্ণ বলে মন্তব্য করলেন বামফ্রন্ট সরকারের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত। তাঁর দাবি, এ বছর রাজস্ব আদায় কেন কম হল, তার যেমন কোনও ব্যাখ্যা নেই, একই ভাবে আগামী বছর কত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে তারও কোনও উল্লেখ নেই এই বাজেটে। অথছ বাজেট ভাষণে এগুলি আবশ্যিক ভাবে থাকা উচিত ছিল।
শুক্রবার, বিধানসভায় বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তিন দশক পরে রাজ্যে এই প্রথম অ-বাম বাজেট দেখেছে রাজ্যবাসী। শনিবার, সেই বাজেট সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে অসীমবাবু তাঁর দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন। অসীমবাবুর দাবি, যে সব ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে, সেগুলিতেই বরাদ্দ কম করা হয়েছে। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি কী ভাবে হবে, তার কোনও দিশা নেই।
কোন কোন ক্ষেত্র? প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী জানান, সেচ, জলপথ, ক্ষুদ্র সেচ, ক্ষুদ্র শিল্প, গ্রামোন্নয়নের মতো ক্ষেত্রগুলিতে বাজেট বরাদ্দ বিশেষ বাড়ানো হয়নি। কোথাও কমিয়েও দেওয়া হয়েছে। অথচ রাজ্যের আর্থিক অগ্রগতির পাশাপাশি এই সব ক্ষেত্রেই সব থেকে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। অমিতবাবু অবশ্য শুক্রবারই বাজেট পেশের পর অধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে বিধানসভায় জানান, তিনি যে বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছেন তাতে রাজ্যে ১০ লক্ষেরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। যার মধ্যে ৭ লক্ষ হবে কৃষি ও গ্রামোন্নয়নে। বাকি ৩ লক্ষেরও বেশি কর্মসংস্থান হবে ক্ষুদ্র ও অন্যান্য শিল্প ক্ষেত্রে। অমিতবাবুর পেশ করা এই তথ্য অসীমবাবুকে জানালে তিনি বলেন, “বাজেটে এর উল্লেখ থাকা উচিত ছিল।”
চলতি অর্থবর্ষে (২০১১-১২) রাজ্য সরকার রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি ৩০ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছিল। ২০১০-১১ সালের মোট যে ২১ হাজার ১২৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছিল, তা বেড়ে ২৭ হাজার ৬৯০ কোটি টাকায় দাঁড়াবে বলে ধরা হয়েছিল। বাস্তবে বছর শেষে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৪ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা। অসীমবাবু এ দিন জানান, এ বছর যা রাজস্ব আদায় হয়েছে তা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেকটাই কম। তাঁর দাবি, ৩০ শতাংশের জায়গায় মাত্র ১৮ শতাংশের ঘরে রাজ্য সরকার পৌঁছাতে পেরেছে। ঘাটতি থেকে গিয়েছে ২ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। অসীমবাবুর প্রশ্ন, “এই ঘাটতি মেটানো হবে কী করে?” কেন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো গেল না, তার ব্যাখ্যা বাজেট ভাষণে থাকা উচিত ছিল বলে তিনি মনে করেন। অসীমবাবু বলেন, “২০১০-১১ অর্থবর্ষে বাম সরকার তার আগের আর্থিক বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ রাজস্ব আদায় বাড়াতে পেরেছিল। সেখানে নতুন সরকার করেছে ১৮ শতাংশ। আমাদের থেকে অনেকটাই কম।”
তবে অর্থ দফতরের এক কর্তা বলেছেন, নতুন সররকার ক্ষমতায় আসার আগে গত মার্চ মাসে বাম সরকারের হয়ে অসীমবাবু যে আর্থিক বিবরণী পেশ করেছিলেন, তাতে এ বছর রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি ৪০ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল। ওই কর্তা বলেন, “ওই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হত কী না, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিলই। নতুন অর্থমন্ত্রী তবু খানিকটা রক্ষণশীলতার পরিচয় দিয়ে তা কমিয়ে ৩০ শতাংশ করেছিলেন।” রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে আগামী অর্থবষের্র জন্য অমিতবাবু সেই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ২৫-২৬ শতাংশের মধ্যে রেখে ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন বলে অর্থ দফতরের কয়েক জন শীর্ষ কর্তা মনে করছেন।
রাজস্ব বৃদ্ধি কেন কমল, তার ব্যাখ্যা অমিতবাবু দিয়েছিলেন। বিশ্বজুড়ে মন্দায় রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে তিনি দাবি করেন। অসীমবাবু সেই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, মন্দা চললেও অনেক রাজ্যেরই রাজস্ব আদায় বেড়েছে ২২-২৩ শতাংশ।
এ বছরের বাজেটে অন্যতম চমক নতুন করে রাজ্যে প্রবেশ কর নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত। ১৯৯৫ সালে বাম আমলেই এই কর তুলে দেওয়া হয়েছিল। বিল এনে সেই প্রবেশ কর ফিরিয়ে এনেছে নতুন সরকার। বিভিন্ন মহলের আশঙ্কা, এই কর ধার্য হলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি হবে। রাজ্য কেন এই কর ফিরিয়ে আনল, সে সম্পর্কে বিশদে মন্তব্য করতে চাননি অসীমবাবু। তবে তিনি জানান, এই ধরনের কর আদায়ের ক্ষেত্রে নানা হয়রানি ও অস্বচ্ছতা তৈরি হচ্ছিল বলেই তা তুলে দেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। শেষ বার প্রবেশ কর থেকে রাজ্যের ৮০০ কোটি টাকার মতো আদায় হয়েছিল বলেও অসীমবাবু এ দিন জানান। |