গতির যুদ্ধে আজ দুই অস্ত্র টোলগে আর চিডি
ন্দীপ নন্দীর বাইকের পিছনে চেপে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুর সামনে অদৃশ্য হয়ে গেলেন টোলগে ওজবে।
ইডেনের সামনে এ বার ট্যাক্সি ধরার জন্য দাঁড়ানো। কিছু পথচারী চিনল, কিছু চিনল না।
বাইক থেকে ট্যাক্সি, রাজপথে দ্রুত যান বদলের মতোই মাঠের ভিতর অকস্মাৎ রাস্তা বদলাতে পারেন টোলগে। উইঙ্গার থেকে হঠাৎ স্ট্রাইকার হয়ে যান। বার্সেলোনার ভিয়া বা পেড্রো যে স্টাইলে খেলেন। উইং দিয়ে হঠাৎ ইনসাইড কাটে ভিতরে ঢুকে পড়া।
শেষ বসন্তে দুই বিদেশি কোচের যুদ্ধমিছিলে ওই স্টাইলই পলাশ আর শিমুলের রং ছড়াচ্ছে।
অ্যাটেক জেঙ্ক এবং নিক থিওডোরাকোপৌলুস। টোলগের ফুটবল জীবনকে সূর্যালোকে আনার পিছনে অস্ট্রেলিয়ার এই দুই কোচের অবদান বিশাল। বিশেষত জেঙ্কটোলগের মতোই যিনি আদতে প্রথমে তুর্কি, পরে অস্ট্রেলিয়ান। মর্গ্যানের নামটাও ভবিষ্যতে থাকবে। রবিবার সালগাওকর ম্যাচে টোলগেকে আরও ভয়ঙ্কর সুন্দর করতে পাশে তিনি দুই সিংহকে জুড়ে দিচ্ছেন। বলদীপ এবং রবিন। মানে আক্রমণাত্মক ৪-৩-৩।
প্র্যাক্টিসে গোল করার চেষ্টায় টোলগে। ম্যাচে কি সফল হবেন? ছবি: উৎপল সরকার
উপায়ও নেই। এই ম্যাচ না জেতা মানে আই লিগে দুটো দলেরই বিজয়া দশমী। এবং ইস্টবেঙ্গলের অধিকাংশ মিডফিল্ডার মেঘলা মুখে সারি সারি বসে। মেহতাব, ভাসুম, পাইতে, ম্যাথু...। মাঝমাঠের দুর্বলতা ঢাকতে মর্গ্যান আক্রমণে লোক বাড়াতে চাইছেন। মাঝমাঠে কে থাকলেন? পেন, সঞ্জু প্রধান, হরমনজিৎ খাবড়া।
টোলগে এবং পেনের বোঝাপড়াই করিম বেঞ্চারিফার ফরসা কপালে আরও ভাঁজ তৈরি করছে।
আগে দেখা যাক, কী জায়গায় আছেন ওই দু’জন? টোলগে, দলবদলের বাজারে ঢুকে পড়ছেন কোটি টাকার চৌহদ্দিতে। বিভিন্ন ক্লাব কর্তার ফোনে ফোনে জেরবার। আর পেনকে প্র্যাক্টিসে বিষণ্ণ দেখাচ্ছিল। শুরুর সময় বহুক্ষণ পোস্টের পিছনে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল।
ব্যাপারটা কী? কুয়েতে এ এফ সি কাপের ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখেছিলেন পেন। দেশে ফেরার সময় রেফারি মর্গ্যানকে অভিযোগ করেন, গালাগালির জন্যই কার্ড। এই নিয়ে কোচ জরিমানা করার কথা বলাতেই সাতসকালে তর্কাতর্কি। মাঠে অভিমানী পেন গা ঘামাচ্ছেন না দেখে মর্গ্যান প্রশ্ন করেন, কী হয়েছে? পেন বলেন, “গোড়ালিতে চোট।” ওই জন্যই মর্গ্যান পরে বললেন, “পেন খেলবে কি না সন্দেহ।” আর গোড়ালির চোট নিয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করতে ভদ্র শান্ত পেন রেগে গেলেন। মন ভাল নেই।
মর্গ্যানের যেমন টোলগে-পেনের যোগাযোগ টেলিফোনের কাজ করবে, করিম বেঞ্চারিফার তেমনই ওই রকম টেলিফোন রয়েছে। চিডি-সুয়োকার বোঝাপড়া। করিমের তো বাস্তবেও মোবাইল ফোনই ভরসা। গ্যালারি থেকে কোচিং তো!
শনিবার সকাল আটটা নাগাদ করিম যখন ইস্টবেঙ্গল মাঠে ট্রেনিং করাচ্ছেন, তাঁর দুই পাশের অংশে ইস্টবেঙ্গলের দুই জুনিয়র টিম প্র্যাক্টিস করছে। একটা দলের কোচ তরুণ দে, একটার মনোজিৎ দাস। দু’জনেই ব্যস্ত ছিলেন নিজেদের দল নিয়ে। মর্গ্যান সে সময় তাঁবুতে নিজের ঘরে বসে। নিশ্চয়ই খবর গেছে, প্র্যাক্টিসে শুটিংয়ের উপরে জোর দিচ্ছেন করিম। জোর দিচ্ছেন চিডি-সুয়োকার বোঝাপড়ার উপর। মর্গ্যানের প্র্যাক্টিস শেষে শোনা গেল, চিডি-সুয়োকাকে থামাতে ডাবল কভারিং, জোনাল মার্কিং থাকছে ইস্টবেঙ্গলে। কিন্তু পেন অভিমানী অচল থাকলে কী হবে!
অভিমান করিমের দলেও হানা দিয়েছে। সালগাওকরে সবচেয়ে দামি ভারতীয় ফুটবলার মেহরাজউদ্দিনের সঙ্গে কোচের ঝামেলা গোয়া ফুটবলে সবচেয়ে বড় খবর। পারফরম্যান্স ভাল নয় বলে মেহরাজকে বসিয়েই রেখেছেন করিম। দুটো মাত্র অর্ধেক ম্যাচ খেলেছেন আই লিগে। মেহরাজের জীবনযাত্রা ও চেহারা পাল্টে গিয়েছে। “ফুটবলটা ছাড়ব না। ফুটবলই আমার প্রাণ। আমার অনেক বলার আছে। এখন কিছু বলছি না। বাকি ম্যাচ হোক।” গোয়া থেকে ফোনে মেহরাজ। করিমের ওপর অসন্তোষ তীব্র।
করিমের সঙ্গে যুদ্ধ বলে কি বাড়তি চাপ? কুয়েতে তিন গোলে হারের প্রভাব কি এখানে পড়বে? এ বার সালগাওকরের কাছে দুটো হেরেছেন বলে কি বেশি টেনশন? তিনটি প্রশ্নই মর্গ্যান উড়িয়ে দিলেন। তাঁর যুক্তি, “এএফসি কাপ, আই লিগ আলাদা। সালগাওকরের কাছে আগে চার গোলে হারার প্রভাব পড়বে না এ বার।” যাই বলুন, সকালেই কিন্তু লাল হলুদ তাঁবুতে মনোবিদের গাড়ি ঢুকতে দেখা গেল। মর্গ্যান তাঁর সাহায্য চান। গোলকিপার গুরপ্রীত সিংহের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সেও লাল হলুদ কোচ খুশি নন একটুও।
গোলকিপারদের সোনার রাজ্য বাংলায় খেলতে নামার আগে দুই বিদেশি কোচেরই হাতে পঞ্জাবি গোলকিপার। গুরপ্রীত, না সন্দীপ, টানাপোড়েনে আছেন মর্গ্যান। করিমের এ নিয়ে টানাপোড়েন নেইতাঁর হাতে সুব্রত পালের পরে দেশের সেরা কিপার করণজিৎ সিংহ। মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে জুড়ি নেই করিমের। বলছিলেন, “আমাদের টিম ব্যক্তিগত তারকার উপর নির্ভর করে না। টিম গেমের উপর নির্ভর করে। আগে চার গোল দিয়েছি, ওটা অতীত।” জীবনে এই প্রথম গ্যালারিতে বসে কোচিং। প্রসঙ্গ শুনে মন্তব্য, “কী করব! আমি ফোনে নির্দেশ দেব সহকারী মারিও সোরেসকে। মাঠ দেখবে টিডি পিটার ভালেস।” ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা প্র্যাক্টিস শুরু করার আগেই করিম দ্রুত বেরিয়ে গেলেন ইস্টবেঙ্গল মাঠ থেকে। পা চালিয়ে ভাই!
লাল-হলুদের এ সি টিম বাসটা করিমের ছাত্রদের নিয়ে স্টার্ট নিচ্ছিল ক্লাবতাঁবুর সামনে থেকে। ও দিকে তখন একে একে হাজির হচ্ছে শক্রপক্ষ। ট্যাক্সিতে এডমিলসন। গাড়িতে নির্মল ছেত্রী, সঞ্জু প্রধান। বাইকে সন্দীপ। নানা গতির যানে ছেয়ে গেল ক্লাব তাঁবুর সামনের চত্বর।
আজ টোলগে বনাম চিডি রণক্ষেত্রে কারা কোন গতির যানে চেপে শুরু করেন, দেখা যাক! টোলগে পায়ে বল পড়লে শুরুতেই গতি বাড়ান। চিডি একটু হেলতে দুলতে শুরু করে গতি বাড়ান শেষ মূহূর্তে। দুটো গতির দৌড়ই যে ভয়ঙ্কর সুন্দর!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.