স্পঞ্জ আয়রন কারখানার বিষ-ধোঁয়ায় বাতাস ভারী। ব্যবস্থা নেবে কে?
তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণ সৃষ্টিকারী উপজাত ‘ফ্লাই-অ্যাশ’ ব্যবহারে গা করছে না ইটভাটা। চাপ দেবে কে?
পরিবেশ ট্রাইবুন্যালে গয়ংগচ্ছ ভাব। সক্রিয় করবে কে?
সব প্রশ্নেরই উত্তর একটাই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। অথচ দূষণরোধের গুরুদায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাটিরই কাজকর্ম কার্যত শিকেয় উঠেছে। পরিবেশে নজরদারিতে তার সক্রিয় ভূমিকা গত ক’বছরে আমজনতার মধ্যে যে প্রত্যাশা তৈরি করেছিল, বর্তমানে তার সর্বব্যাপী নিষ্ক্রিয়তাই সেই প্রত্যাশার বেলুনকে দ্রুত চুপসে দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন পরিবেশকর্মীরা। বিশেষত স্পঞ্জ আয়রন কারখানায় নজরদারি তো প্রায় শূন্য! কী রকম?
পরিবেশ দফতর সূত্রের খবর: দূষণ না-ছড়িয়ে যাতে কারখানা চালানো হয়, সে জন্য কয়েকটি বিধি তৈরি হয়েছিল ২০০৮-এ। সেই বিধি অমান্যের দায়ে পর্ষদ হামেশাই বিভিন্ন স্পঞ্জ আয়রন কারখানাকে জরিমানা করত, এমনকী অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদন বন্ধও করে দিত। এতে কারখানা-কর্তৃপক্ষকে খানিকটা তটস্থ করে রাখা যেত। কিন্তু গত ক’মাস হল, সেই নজরদারিতে ছেদ পড়েছে। দূষণকারী বিভিন্ন কারখানার বিরুদ্ধে কার্যত হাত গুটিয়ে রয়েছে পর্ষদ। কেন এই নিষ্ক্রিয়তা?
রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার বলেন, “আমরা চাইনি, পুজোর আগে কোনও কারখানা বন্ধ হোক। এ বার ব্যবস্থা নেব।”
ঘটনা হল, দূষণের দায়ে কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিকদের পুরো বেতন দেওয়ার নিয়ম পর্ষদই চালু করেছিল। ফলে মানুষের রুজি-রোজগার বন্ধ হওয়ার প্রশ্ন নেই। নিজের তৈরি নিয়ম পর্ষদ নিজেই এ ভাবে ‘বিস্মৃত’ হওয়ায় বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। পরিবেশকর্মী নব দত্তের আক্ষেপ, “স্পঞ্জ আয়রনের দূষণে মাটির নীচের জলে টান পড়ছে, গ্রামে গ্রামে চাষ-আবাদ লাটে উঠছে। পর্ষদের কাছে মানুষের যেটুকু প্রত্যাশা ছিল, তা বিলীন হতে বসেছে।” |
এখানেই শেষ নয়। কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন শহর-শিল্পাঞ্চলের প্রতি দিনের বায়ু-দূষণ মাত্রা জানানোর যে ব্যবস্থা পর্ষদ করেছিল, তা-ও ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ। বস্তুত, গত ডিসেম্বর থেকে পর্ষদের ওয়েবসাইটে বায়ু-দূষণ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ বন্ধ ছিল। সম্প্রতি তা আবার চালু হয়েছে বটে, কিন্তু আংশিক ভাবে। উল্লেখ্য, এই কাজে সিংহভাগ অর্থ বরাদ্দ করে কেন্দ্র। তা হলে ব্যবস্থাটি পূর্ণাঙ্গ ভাবে চালু রাখতে অসুবিধে কোথায়?
পর্ষদ-সূত্রের খবর: যে সংস্থাকে দিয়ে কাজটা করানো হচ্ছিল, পর্ষদের নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার পরে তাদের বাতিল করা হয়েছে। অথচ নতুন কোনও সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়নি। তাতেই বিভ্রাট। নতুন চেয়ারম্যান বিনয়কান্তি দত্ত অবশ্য এমনটা মানেন না। তাঁর দাবি, “অনেক দিন আগেই সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। আমি তো দেখতে পাই!”
চেয়ারম্যান ‘দেখতে পেলেও’ পর্ষদের সাইটে বায়ু-দূষণের মাত্রা সম্পর্কে অসম্পূর্ণ তথ্যই মিলছে। নিষ্ক্রিয়তার নমুনা আরও আছে। যেমন, ইটভাটাকে ফ্লাই-অ্যাশ ব্যবহারে বাধ্য করার কেন্দ্রীয় আইন কার্যকর হচ্ছে কি না, পর্ষদেরই তা দেখার দায়িত্ব। কিন্তু রাজ্যের পরিবেশ-সচিব সংশ্লিষ্ট নির্দেশটি ক’মাস আগে আচমকা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এ বিষয়ে নজরদারি এবং ভাটা-মালিকদের উপরে চাপ সৃষ্টির প্রক্রিয়া থমকে গিয়েছে। পাশাপাশি শব্দ-দূষণ, প্লাস্টিক-দূষণ, গঙ্গা-দূষণ বা বায়ু-দূষণ নিয়ন্ত্রণে তদারকি ও আদালতকে সহায়তার লক্ষ্যে কলকাতা হাইকোর্টের গড়ে দেওয়া বিভিন্ন কমিটিও ঠুঁটো। কেন?
পর্ষদ-সূত্রের ব্যাখ্যা: কমিটিগুলোয় পরিবেশকর্মী ও বিশেষজ্ঞ ছাড়াও আহ্বায়ক হিসেবে রাখা হয়েছিল পর্ষদের মুখ্য আইন-আধিকারিককে, রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে যিনি দীর্ঘ ছুটিতে চলে গিয়েছেন। তার পরে কোনও কমিটির কোনও বৈঠক হয়নি। কারণ জানতে চাওয়া হলে বিনয়বাবু বলেন, “একটা কমিটিতেও তো আমি নেই! তাই কিছু বলতে পারব না। তবে খোঁজ নিয়ে দেখব।” কয়েকটি কমিটির অন্যতম সদস্য, পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত অবশ্য বলছেন, “পর্ষদেরই অস্তিত্ব টের পাই না! কমিটি থাকবে কী করে?”
বেহাল আপিল-আদালতও। পর্ষদের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করার জায়গা এই আদালত, যেখানে পর্ষদের তরফে নিযুক্ত থাকেন হাইকোর্টের এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও দু’জন পরিবেশবিদ। পুরনোদের সরিয়ে নতুনদের নিয়োগ করার পর থেকে, গত চার মাস কোনও ‘অজ্ঞাত কারণে’ আপিল-আদালত বন্ধ। জমছে আপিলের পাহাড়। যদিও চেয়ারম্যানের মতে, এতে সমস্যার কিছু নেই। “নতুন প্যানেল তৈরি হয়েছে। এ বার কোর্ট বসবে।” আশ্বাস দিচ্ছেন বিনয়বাবু।
একই ভাবে সাধারণ মানুষের মুখ থেকে দূষণ সংক্রান্ত অভিযোগ শুনে নিষ্পত্তির যে প্রক্রিয়া পর্ষদ বছরভর চালিয়ে যাচ্ছিল, তা-ও প্রায় শিকেয়। পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য: পর্ষদের প্রতি আমজনতার আস্থা জন্মানোর একটা বড় ভিত্তি ছিল এই ‘গণশুনানি।’ অথচ তারই গুরুত্ব কমিয়ে পর্ষদ ভরসার জায়গাটা হারাতে বসেছে।
এমন অবস্থা কেন? সরকারি ভাবে পর্ষদের কোনও অফিসার মন্তব্য করতে চাননি। কারণ, আধিকারিক-ইঞ্জিনিয়ারেরা যাতে সংবাদমাধ্যমে মুখ না-খোলেন, সে জন্য নোটিস জারি করে দিয়েছেন নতুন চেয়ারম্যান!
|
এলাকার বাসিন্দাদের তাড়ায় মৃত্যু হয়েছে একটি হরিণের। শনিবার সকালে দক্ষিণ পাটকাপাড়ার ভগতপাড়া গ্রামের ঘটনা। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের পশ্চিম বিভাগের এডিএফও শেখর মজুমদার জানান, এ দিন পূর্ণবয়স্ক পুরুষ হরিণটি গ্রামে ঢুকে পড়ে। বনকর্মীরা রাজাভাতখাওয়ার জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার সময় সেটির মৃত্যু হয়। প্রচন্ড দৌড়ঝাপ এবং মানুষ দেখে ভয় পেয়ে হরিণটি সম্ভবত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে বনকর্মীরা মনে করছেন। |