প্রায় ছ’ হাজার বছর আগের কথা। হঠাৎ পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেল ম্যামথরা। কিন্তু কেন? সভ্য মানুষেরা ভুলে যায়নি অনেকটা হাতির মতো দেখতে, লোমশ, লম্বা দাঁতের বিশালাকার এই প্রাণীদের। কারণ খুঁজতে বিশ্বের নানা প্রান্তে গবেষণা চলছিলই। জানা গেল, যাঁরা তার অন্তর্ধান-রহস্য সমাধানে নেমেছেন, সেই ‘সভ্য’ মানুষই এদের নিখোঁজ হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। ব্রিটেন ও সুইডেনের এক দল বিজ্ঞানী এ রকমই দাবি তুলেছেন। ‘মলিকিউলার ইকোলজি’ নামের পত্রিকায় তাঁদের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।
এত দিন মনে করা হত ম্যামথরা নিজেদের গোষ্ঠীর মধ্যেই প্রজননে লিপ্ত হওয়ায় (অন্তঃপ্রজনন) তাদের দেহে জিন বৈচিত্র ক্রমশ কমে যেতে শুরু করে। ফলে পৃথিবীর ক্রমাগত পরিবর্তিত পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতাও কমে যেতে থাকে তাদের। এবং এক সময় তারা পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায়। কিন্তু সম্প্রতি ব্রিটিশ এবং সুইডিশ বিজ্ঞানীদের গবেষণা বদলে দিয়েছে পুরনো সব ‘সংজ্ঞা’।
গবেষণার কাজে বিজ্ঞানীরা বেছে নিয়েছিলেন রাশিয়া থেকে দেড়শো কিলোমিটার দূরে সুমেরু মহাসাগরের রাঙ্গেল দ্বীপকে। পুরনো গবেষণা বলে প্রায় ১০ হাজার বছর আগে ইউরেশিয়া ও উত্তর আমেরিকা থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায় ম্যামথরা। এ সময় তাদের জিনের বৈচিত্র প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। শুধু হাজার খানেক ম্যামথ নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে র্যাঙ্গেল দ্বীপে। তাই এ বার এই দ্বীপটিকেই বেছে নিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। |
র্যাঙ্গেল সুমেরু মহাসাগরের একটা ছোট্ট দ্বীপ। ফলে এই দ্বীপের মধ্যেই আটকে পড়া ম্যামথরা নিজেদের মধ্যেই প্রজননে লিপ্ত হতে বাধ্য হয়েছিল। গবেষকদের ধারণা ছিল অন্তঃপ্রজননই র্যাঙ্গেল থেকে ম্যামথদের অস্তিত্ব মুছে দেওয়ার কারণ। কিন্তু সেখান থেকে উদ্ধার হওয়া নমুনাই বদলে দিল ধারণা।
দ্বীপে পাওয়া ম্যামথের দেহাবশেষ, দাঁত, হাড়গোড়ের ডিএনএ-গঠন সাইবেরিয়ার চুকোৎকা থেকে পাওয়া নমুনার সঙ্গে মিলিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেন ইউরেশিয়ার মতো র্যাঙ্গেলে ম্যামথের জিন বৈচিত্র ক্রমশ ফুরিয়ে যায়নি। ফলে অন্তঃপ্রজনন তাদের মৃত্যু কারণ হতে পারে না বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তা হলে নিশ্চয় অন্য কোনও কারণ ছিল? এই কারণই এখন হন্যে হয়ে খুঁজছেন গবেষকরা।
মুখ্য গবেষক লাভ ডেলেনের কথায়, “গবেষণার ফল বলছে পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তন, বিশেষ করে পৃথিবীতে মানুষের রাজত্ব বা আবহাওয়ার বদল এদের অস্তিত্ব লোপের প্রধান কারণ।” যদি মানুষই এদের শিকার করে, তা হলে মানুষই তার প্রমাণ খুঁজে বার করবে, দাবি ডেলেনের। |