অসংসদীয় মন্তব্য
ক্লাসের অনুরোধ উদ্বিগ্ন স্পিকারের
বিধায়কেরা যাতে সভার মধ্যে অসংসদীয় মন্তব্য না করেন, সে জন্য বিধায়কদের নিয়ে ‘ক্লাস’ নিতে সব রাজনৈতিক দলের কাছেই অনুরোধ জানাতে চান বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিতর্ক চলাকালীন বা ভাষণে অসাংবিধানিক মন্তব্য নিয়ে শীতকালীন অধিবেশনেই শাসক-বিরোধী দলের সম্পর্কে ‘কাঁটা’ বিঁধেছিল। বাজেট অধিবেশনে এখনও পর্যন্ত সেই সম্পর্কে ‘সৌজন্য-প্রলেপ’ লাগল না! উল্টে দু’তরফের বিধায়কদেরই একাংশের অসংসদীয় মন্তব্যের ঘটনাপ্রবাহে ‘অসন্তুষ্ট’ স্পিকারকে শনিবার সভার মধ্যেই বলতে হল, “যতটুকু কথা বলার দরকার, ততটুকুই বলা হোক। আমি সব পক্ষের সদস্যদের কাছেই আবেদন করছি, ভাষা ব্যবহারে আপনারা সংযত হোন। সচেতন হোন।” তিনি জানান, বিধায়ক বা মন্ত্রী কাউকেই ব্যঙ্গ বা আক্রমণ করে মন্তব্য করা সংসদীয় রীতিবিরুদ্ধ। তাই পরিস্থিতির নিরিখে তাঁর অনুরোধ, সব দলই তাদের বিধায়কদের সংসদীয় বক্তব্য পেশ করা শেখাতে ক্লাস নিক।
এ দিন বাজেট-বিতর্কে অংশ নিয়ে উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ার ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক আলি ইমরান রামজ (ভিক্টর) বলেন, “চাপরাশি থেকে মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত কাজের দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রী একাই পালন করছেন।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কে এই মন্তব্য শুনেই ট্রেজারি বেঞ্চ হইচই শুরু করে দেয়। রামজের ওই মন্তব্য কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেন স্পিকার। তৃণমূলের পরিষদীয় নেতা তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তখন স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, “কয়েকজন সদস্য নিজেদের ইচ্ছামতো অনেক মন্তব্য করে যাচ্ছেন। আপনি পরে হয়তো আপত্তিকর শব্দগুলো বাদ দিচ্ছেন। কিন্তু বলা তো হয়ে যাচ্ছে!” শাসকদলের আপত্তি ‘অমূলক’ দাবি করে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র পাল্টা বলেন, “স্পিকার যেগুলি মনে করছেন, সেগুলি বাদ দিয়েছেন। তা নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু আমি দেখিয়ে দিতে পারি, এমন অনেক শব্দ রেকর্ড থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে, যেগুলি করা যায় না। কোন কোন শব্দে সংসদীয় রীতিনীতি ভঙ্গ হয়, তা দেখিয়ে দিতে হবে। কোনটি অসংসদীয় শব্দ বলে দিতে হবে। এর কি কোনও তালিকা আছে?”
স্পিকার বিমানবাবু পরে জানান, এমন কোনও তালিকার কথা তাঁর জানা নেই। তবে বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আবদুল হালিম বলেন, “অসংসদীয় শব্দের তালিকা কিন্তু বিধানসভার লাইব্রেরিতেই আছে। ভারতীয় সংসদেও আছে। লাইব্রেরিতে গেলেই দেখতে পাবেন।” তিনি অধ্যক্ষ থাকাকালীন ওই তালিকা নিয়মিত পরিমার্জিত হত বলেও জানিয়েছেন হালিম।
সূর্যবাবুর আরও প্রশ্ন, “চাপরাশি শব্দটি কি অসংসদীয়! কেন? চাপরাশিরা কি মানুষ নন।” পরে সভার বাইরেও একই কথার পুনরাবৃত্তি করে সূর্যবাবু বলেন, “চাপরাশি শব্দটিকে অসংসদীয় বলার অর্থ চাপরাশিদের অপমান করা। ওটা তো একটা পদের নাম! স্পিকারের ব্যাগ যাঁরা বহন করেন বা অন্যান্য কাজ করেন, তাঁদের পদের কি কোনও মর্যাদা নেই?” বিধায়ক রামজকে ‘তিরস্কার’ না-করে সমর্থন করায় ক্ষুব্ধ পার্থবাবু সভায় বলেন, “বিতর্ক যাতে সংসদীয় রীতি মেনে চলে, সেই অনুরোধ করি। আশা করেছিলাম বিরোধী নেতা সহমত হবেন। ৩৪ বছর ধরে আপনারা বিরোধীদের কিছুই বলতে দেননি। এখন বলার সুযোগ পাচ্ছেন বলে যা খুশি বলে যাবেন?” সূর্যবাবুকে কটাক্ষ করে পার্থবাবু বলেন, “রামজের মন্তব্য সমর্থন করলেন বিরোধী নেতা। এটা কলঙ্কের সামিল!”
রামজের মন্তব্য নিয়ে কক্ষে বাদানুবাদ অবশ্য প্রথম নয়। দু’দিন আগে তাঁর বক্তৃতায় ইকবালের একটি ‘শের’ উদ্ধৃত করায় আপত্তি তুলে তৃণমূল দাবি করে, বিরোধী দলনেতার উচিত ওই তরুণ বিধায়ককে সহবত শেখানো। মুখ্যমন্ত্রী-সহ বিধায়কদের অপমান করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। কিন্তু সূর্যবাবুর জবাব ছিল, “ইকবাল-রবীন্দ্রনাথের কবিতা বললে কেন আপত্তি করতে যাব।” সেদিনই ডেপুটি স্পিকার সোনালি গুহর সঙ্গেও বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন রামজ। পক্ষান্তরে, রাজ্যপালের ভাষণের উপর বিতর্কে বিরোধী দলের সুশান্ত ঘোষের বক্তৃতার সময় শাসকপক্ষ তাঁর নাম করে নাগাড়ে ‘অশালীন’ মন্তব্য করতে থাকে। এ ছাড়াও রাজ্যের সমবায়-ব্যবস্থা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্কে সিপিএম বিধায়ক এমএস সাদির ‘অমর্যাদাকর’ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখায় শাসকপক্ষ। সাদিকে তিরস্কার করে তাঁর মন্তব্য কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেন স্পিকার। স্বাধিকারভঙ্গের নোটিসও ধরানো হয় সাদিকে।
এই ঘটনাপ্রবাহে এবং একের পর এক অসংসদীয় বক্তব্যে সভায় ‘গঠনমূলক’ আলোচনা বা বিতর্ক যে হচ্ছে না, তার ইঙ্গিত দিয়ে এ দিন নিজের ঘরে স্পিকার বলেন, “এক পক্ষের বক্তব্যের সময় অন্য পক্ষ বাধা দেবে বা প্রতিবাদ করবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু তাতে অনেকটা সময় নষ্ট হচ্ছে। গঠনমূলক আলোচনা বোধহয় হচ্ছে না।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.