সরকারি জমিতে পর্যটন-হাব প্রকল্পে বাধা |
‘পর্যটন হাব’ তৈরির জন্য ৯০ একর সরকারি জমি চিহ্নিত হয়েছিল বাম-আমলেই। কিন্তু কাজ এগোয়নি। ওই জমিতেই ‘পর্যটন-হাব’ গড়ার কাজ শুরু করতে গিয়ে এ বার চাষিদের বাধার মুখে পড়ল তৃণমূল নেতৃত্বাধীন সরকার।
ডুয়ার্সের ফালাকাটার কাছে কুঞ্জনগরের ওই জমিতে পাঁচিল দেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার খুঁটি পুঁততে গিয়ে রাতারাতি গড়ে ওঠা ‘কৃষি জমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’র বিরোধিতায় ফিরতে বাধ্য হন ভূমি ও ভূমিসংস্কার বিভাগের অফিসার-কর্মীরা। ঘটনা হল, ওই কমিটিতে সিপিএমের কর্মীরা যেমন আছেন, রয়েছেন তৃণমূলের স্থানীয় সমর্থকেরাও।
এলাকার বাসিন্দা তথা সংশ্লিষ্ট ময়রাডাঙ্গা পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য আলো মল্লিকের দাবি, ১৯৬৯ সালে বন্যার পরে ওই ৯০ একর জমি বুড়ি তোর্সার বালির নীচে চাপা পড়ে যায়। ৮০ একরের বালি ২৫ বছর ধরে সরিয়ে চাষবাস করছে এলাকার ৭১টি পরিবার। আলোদেবী বলেন, “বাম-আমলে জমি চিহ্নিত হওয়ার পরেই আমরা আপত্তি করি। সে যাত্রায় কাজ এগোয়নি। এখন হঠাৎ আমাদের জীবিকার পথ বন্ধ করলে মানতে পারব না। তাই কমিটি গড়তে হয়েছে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে যদি কমিটি গড়ে উচ্ছেদ রোখা যায়, তা হলে আমরা পারব না কেন?” আলোদেবীর বক্তব্য, “জীবিকা ও বাসস্থানের বিকল্প ব্যবস্থা হলে তবেই জমি ছাড়া হবে।”
ফালাকাটা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল ভদ্রেরও বক্তব্য, “জমির মালিক রাজ্য সরকার। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা ওই জমিতে দীর্ঘ দিন চাষাবাদ করছেন। চাষিদের দাবির কথা রাজ্য সরকারকে ভাবতে হবে।” তিনি জানান, দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনায় না গিয়ে প্রশাসনের কাজে বাধা দিলে, এলাকার অর্থনীতি বিপর্যস্ত হওয়ার দায় আন্দোলনকারীদের উপরে বর্তাবে।
তবে বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীদের তরফ থেকে জীবিকা ও বিকল্প বাসস্থানের দাবি সংবলিত স্মারকলিপি পেয়ে চিন্তিত রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যেই রাজ্যের তরফে জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্রকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করতে বলা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটাতে হবে। আশা করি, সমস্যা মিটেও যাবে।” জলপাইগুড়ির জেলাশাসক বলেন, “কুঞ্জনগরের সরকারি জমিতে খুঁটি পুঁততে গিয়ে কৃষকদের বাধার মুখে পড়ে অফিসারদের ফিরতে হয়েছে। যাঁরা ওই জমিতে চাষ করছেন, তাঁদের দাবি শোনা হবে।”
রাজ্যে নতুন সরকার গঠনের পরে সরকারি জমিতে প্রকল্পের কাজে বাধা পড়ার ঘটনা উত্তরবঙ্গে অবশ্য এ-ই প্রথম নয়। আলিপুরদুয়ারের সোনাপুরে বিদ্যুতের সাব-স্টেশনের জন্য প্রশাসন জমি অধিগ্রহণ করতে গেলে, বাসিন্দারা প্রতিরোধ কমিটি গড়ে আন্দোলনে নামেন। ওই কাজ থমকে যায়। শিলিগুড়ির কাছে কাওয়াখালিতে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতায় রাজ্য সরকারের ইএসআই হাসপাতাল তৈরির কাজ আটকে গিয়েছে। একই ভাবে ধূপগুড়িতে চার লেনের জাতীয় সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজও একই ধরনের জটিলতার জেরেই আটকে রয়েছে।
দীর্ঘ দিন ধরেই স্থানীয় বাসিন্দারা ওই জমিতে চাষবাস করলেও বাম-জমানায় কেন তাঁদের জমির পাট্টা দিতে তৎকালীন শাসক দলের নেতারা উদ্যোগী হলেন না? সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সদস্য মৃণাল রায়ের বক্তব্য, “আমরা উদ্যোগী হয়েছিলাম। নানা কারণে ব্যাপারটা হয়নি। তা বলে কোনও আলোচনা ছাড়া, চাষিদের বিপাকে ফেলাটা মেনে নেওয়া যাবে না।”
বস্তুত, বুড়ি তোর্সার একেবারে গা ঘেঁষে থাকা ওই জমির একাংশে (৫০ হেক্টর) ১৯৯৬ সালে একটি প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র গড়া হয়েছে। সেখানে এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের কর্মসংস্থানও হয়েছে। এখন ‘পর্যটন-হাব’ হলে কমিটির সদস্য ৭১ জন চাষির পরিবারের সদস্যদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে প্রশাসনের বক্তব্য। কমিটির সদস্য তথা এলাকায় তৃণমূল সমর্থক বলে পরিচিত হরেন দাস বলেন, “আমাদের (তৃণমূল) সরকার চাষির জমি কাড়ে না। আশা করছি, আলোচনায় সমস্যা মিটে যাবে।”
|