বিধানসভায় নাম না-করে দলীয় মন্ত্রী মানস ভুঁইয়াকে ঘরশত্রু ‘বিভীষণ’ বলে মন্তব্য করার জন্য শুক্রবার পরিষদীয় দলের কাছে ‘নিঃশর্ত ক্ষমা’ চাইলেন কংগ্রেস বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়। তবে বৈঠকে বিধায়কদের একাংশ দাবি তোলেন, সভাকক্ষেই নিজের মন্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করে মন্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে রতুয়ার বিধায়ক সমরবাবুকে। কারণ, তিনি ওই মন্তব্য করেন সভার মধ্যে। আপত্তি থাকলেও সতীর্থদের ‘চাপে’ সমরবাবু সিদ্ধান্ত নেন, দু’একদিনের মধ্যে তিনি স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মতিতে ‘পয়েন্ট অফ ইনফর্মেশন’ এনে কক্ষে তাঁর মন্তব্য প্রত্যাহার করে নেবেন। পরিষদীয় দল মনে করছে, এর ফলে গোটা ঘটনাটির উপর আপাতত ‘যবনিকা’ পড়ল।
গত বুধবার মানসবাবুর অনুপস্থিতিতে তাঁকে ‘বিভীষণ’ বলে আক্রমণ করেন সমরবাবু। অভিযোগ করেন, সেচ দফতরের টেন্ডার ডাকা নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে। গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাবের কাছে অভিযোগ করেন কংগ্রেস বিধায়কেরা। ঠিক হয়, কেন তিনি ওই মন্তব্য করেছেন, তা পরিষদীয় দলের বৈঠকে সমরবাবুকে জানাতে হবে। মানসবাবু পরদিন স্পিকারের অনুমতি নিয়ে কক্ষেই সমরবাবুর বক্তব্যের জবাবে লিখিত বিবৃতি দেন। তখন অবশ্য আবার সমরবাবু সভায় ছিলেন না।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, সমরবাবু জানিয়েছেন, ‘আবেগের বশে উত্তেজিত হয়ে’ ওই মন্তব্য তিনি করেন। তার জন্য তিনি ‘অনুতপ্ত’। তিনি ‘ভুল স্বীকারও’ করেছেন। তবুও বিধায়কদের একাংশ দাবি তোলেন, সভায় সমরবাবুর মন্তব্য নথিবদ্ধ হয়েছে। মানসবাবুও সভায় লিখিত বিবৃতি দিয়েছেন। তাই কক্ষেই মন্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে সমরবাবুকে। তবে দেবপ্রসাদ রায়, অসিত মিত্রেরা পরামর্শ দিয়েছিলেন, সভায় বিষয়টি উত্থাপন না-করে নিজেদের মধ্যেই মিটিয়ে নেওয়া হোক। কিন্তু অন্য বিধায়করা চান, কক্ষেই মন্তব্য প্রত্যাহার করে তা ‘রেকর্ড’ করাতে হবে। একই দোষে দু’বার শাস্তি পেতে অস্বীকার করেন সমরবাবু। তখন প্রবীণ বিধায়ক জ্ঞান সিংহ সোহনপালের মধ্যস্থতায় সমরবাবুকে বোঝানো হয়। ঠিক হয়, ‘পয়েন্ট অফ ইনফর্মেশন’ এনে সমরবাবু মন্তব্য প্রত্যাহার করবেন।
বিধানসভা সূত্রের খবর, বৈঠক চলাকালীনই দেবপ্রসাদবাবু প্রস্তাব দেন, রাজ্য সরকারের ঋণের সুদ ৩ বছরের জন্য মকুব করতে পরিষদীয় দলের তরফে কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানানো হোক। প্রস্তাব সমর্থন করে বিধায়কদের একাংশ বলেন, কেন্দ্রের টাকা না পাওয়ায় ফলেই কংগ্রেসের সঙ্গে ‘বৈরিতা’ করছে তৃণমূল। জোট-সম্পর্ক বজায় রাখার ‘দোহাই’ দিয়ে বারবার তৃণমূলনেত্রীর কাছে নতি স্বীকার না করে মূল ক্ষতের (কেন্দ্রীয় অর্থ বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত) চিকিৎসা দরকার। নইলে ‘ক্ষতে প্রলেপের চেষ্টা’র(রাজ্যসভা থেকে প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের মতো ঘটনা) পুনরাবৃত্তি হবে। তাতে অন্যরা আপত্তি তোলেন। তাঁদের যুক্তি, তৃণমূলকে যেচে কেন সাহায্য করবে কংগ্রেস? শেষমেশ পরিষদীয় দলনেতা সোহরাব দেবপ্রসাদবাবুদের প্রস্তাব সমর্থন করেই সিদ্ধান্ত নেন, অবিলম্বে বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে পরিষদীয় দলের বক্তব্য শোনার জন্য আবেদন জানানো হবে। |