|
|
|
|
আরও ৪ দিন সিআইডি হেফাজতে |
প্রাক্তন ডিজিকে প্রশ্ন করতে পারেন গোয়েন্দারা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও হলদিয়া |
নন্দীগ্রাম নিখোঁজ-কাণ্ডে রাজ্য পুলিশের তৎকালীন ডিজি অনুপভূষণ ভোরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে সিআইডি। ২০০৭-এর নভেম্বরে সিপিএমের ‘পুনর্দখল-অভিযান’ শুরুর ঠিক আগে নন্দীগ্রামের তেখালি থেকে পুলিশ ফাঁড়ি ও ক্যাম্প সরানোর সিদ্ধান্ত কেন হয়, তা জানতেই ডিজি-র সঙ্গে কথা বলা হতে পারে বলে জানান গোয়েন্দারা।
এই মামলায় ধৃত তমলুকের প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ এবং অন্য দুই সিপিএম নেতা অমিয় সাউ ও অশোক গুড়িয়াকেও আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফের ৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে পেয়েছে সিআইডি। শুক্রবারই হলদিয়ার এসিজেএম আদালতে ওই তিন নেতাকে হাজির করানো হয়। সিআইডি ৭ দিনের জন্য অভিযুক্তদের হেফাজতে চাইলেও এসিজেএম সর্বাণী মল্লিক চট্টোপাধ্যায় ৪ দিন মঞ্জুর করেন।
নন্দীগ্রামের জমি-রক্ষা আন্দোলনের সমর্থকদের ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ঘটনার তদন্তে সিআইডি-র ডিআইজি (অপারেশনস) কারিয়াপ্পা জয়রামন বলেন, “ওই সময়ের সব ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দরকারে প্রাক্তন ডিজিকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” ইতিমধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুরের তৎকালীন এসপি-সহ একাধিক পুলিশকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইডি। পুলিশ সূত্রের খবর, সিপিএমের নন্দীগ্রাম পুনর্দখল অভিযান শুরুর মাত্র কয়েক দিন আগে ৬ নভেম্বর মহাকরণ থেকে তৎকালীন ডিজি ভোরা তেখালির পুলিশ ফাঁড়ি ও ক্যাম্প সরানোর নির্দেশ দেন। নন্দীগ্রাম থানায় একটি জেনারেল ডায়েরি নথিভুক্ত করে (নম্বর ২৯৪, ৬ নভেম্বর ২০০৭, রাত ১১টা ১৫) জেলা পুলিশ সেই নির্দেশ কার্যকর করে। সে সময়ে জমিরক্ষা আন্দোলনের নেতৃত্বের অভিযোগ ছিল, খেজুরির দিক থেকে তেখালি সেতু পেরিয়ে নন্দীগ্রামে ঢুকে সিপিএম সমর্থকদের ‘পুনর্দখলে’র সুযোগ করে দিতেই তেখালি থেকে পুলিশ সরানো হয়েছিল। |
|
হলদিয়া আদালতে ঢোকার আগে লক্ষ্মণ শেঠ। ছবি: আরিফ ইকবাল খান। |
সিআইডি জানাচ্ছে, ফাঁড়ি-ক্যাম্প সরানো সংক্রান্ত ডিজি-র নির্দেশের ঠিক দু’দিন আগেই (৪ নভেম্বর) কলাগাছিয়ায় সিপিএমের অফিসে লক্ষ্মণবাবু-সহ পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের কিছু সিপিএম নেতা বৈঠকে বসেছিলেন। ওই বৈঠকেই ‘আক্রমণে’র সিদ্ধান্ত হয় বলে চার্জশিটেও জানিয়েছে সিআইডি। এক সিআইডি-কর্তার বক্তব্য, “৪ নভেম্বর কলাগাছিয়ায় সিপিএম অফিসে লক্ষ্মণবাবুদের বৈঠক, ৬ নভেম্বর ডিজির নির্দেশের পরেই ৮ ও ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রামে সর্ংঘষ হয়। কীসের ভিত্তিতে ডিজি ওই নির্দেশ দেন, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।”
নিকোঁজ-কাণ্ডে ধৃত তিন সিপিএম নেতাকে জেরা করে ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে বলে দাবি সিআইডি-র। ৮ ও ১০ নভেম্বর সংঘর্ষের সময়ে নন্দীগ্রামে ২৫-৩০ জন বহিরাগত ছিলেন বলেও তদন্তে জেনেছে সিআইডি। ওই বহিরাগতরা কোন নেতার নির্দেশে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল তা জানতেই লক্ষ্মণবাবুদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ দরকার বলে শুক্রবার হলদিয়া আদালতে সিআইডি-র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। লক্ষ্মণবাবুদের আইনজীবীরা অবশ্য অভিযোগটি ‘সাজানো’ এবং ধৃতদের অযথা ‘হয়রান’ করা হচ্ছে দাবি করে জামিনের আবেদন করেন। আদালতে সেই আবেদন নাকচ হয়ে যায়। মঙ্গলবার লক্ষ্মণবাবুদের হাজির করার সময়ে বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছিল হলদিয়ার আদালত-চত্বর। এ দিন অবশ্য তেমন গোলমাল হয়নি। নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা, পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আবু তাহেরের নেতৃত্বে কিছু লোক অবশ্য আদালত-চত্বরে কঙ্কাল সেজে ঘুরে ঘুরে বিক্ষোভ দেখান। মঙ্গলবার কোর্ট-লকআপে লক্ষ্মণবাবুর স্ত্রী-পরিজনেদের দেখা করতে দেওয়ার ক্ষেত্রে মহকুমা পুলিশের বিরুদ্ধে ‘বাড়তি সুবিধা দেওয়া’র অভিযোগ উঠেছিল। সেই বিতর্কের প্রেক্ষিতে এ দিন কোর্ট-লকআপের কাছে যেতে দেওয়া হয়নি প্রাক্তন সাংসদের স্ত্রী তমালিকা পণ্ডাশেঠ বা অন্য আত্মীয়দের। অগত্যা দিনভর অপেক্ষা করে তাঁরা ফিরে যান। লক্ষ্মণবাবুর আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, মক্কেলের সঙ্গে তাঁদেরও কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। এসিজেএমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তাঁরা। তার পরেই লক্ষ্মণবাবুদের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পান আইনজীবীরা। |
|
|
|
|
|