হাওড়ায় প্রাথমিক স্কুলশিক্ষা সংসদের সভাপতি অপসারিত
পসারিত হলেন হাওড়া জেলা প্রাথমিক স্কুলশিক্ষা সংসদের সভাপতি পুলক দেব। রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতরের সঙ্গে হাওড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের ‘বিবাদের জেরে’ এই সিদ্ধান্ত বলে রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। নতুন সভাপতি হয়েছেন হাওড়া জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা তথা তৃণমূল নেতা অজয় ভট্টাচার্যকে। বৃহস্পতিবার তাঁকে নিয়োগপত্র দেয় রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতর। শুক্রবার তিনি কার্যভার গ্রহণ করেছেন বলে অজয়বাবু নিজেই জানান।
২০১১ সালের মে মাসে রাজ্যে বামফ্রন্টকে হারিয়ে ক্ষমতা আসার পরেই কংগ্রেস-তৃণমূল জোট সরকার জেলা শিক্ষা সংসদের বামফ্রন্ট মনোনীত সভাপতি স্মৃতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে দেয়। তাঁর জায়গায় সভাপতি করা হয়েছিল তৃণমূলের শিক্ষা সেলের নেতা পুলককান্তি দেবকে। কিন্তু হাওড়া জেলায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে পুলকবাবুর সঙ্গে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতরের বিবাদ চরমে পৌঁছেছিল।
কী সেই বিবাদ?
হাওড়া জেলায় ২০০৯ সালে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেয় জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদ। ২০১০ সালে চাকুরিপ্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা এবং সাক্ষাৎকার হয়ে যায়। প্যানেল প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। কিন্তু নির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় প্যানেল প্রকাশিত হয়নি।
এরপরে সংসদের সভাপতি হয়ে আসেন পুলকবাবু। তিনি আসার পরেই বামফ্রন্ট আমলের তৈরি প্যানেলে ‘দুর্নীতি’ হয়েছে বলে তৎকালীন স্কুল শিক্ষামন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে রিপোর্ট দেন। মন্ত্রীর নির্দেশে ২৯ হাজার পরীক্ষার্থীর খাতা পুনর্মূল্যায়ণ করা হয়। সেই কাজ করে রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতর। মূল্যায়ণের পরে তাদের সুপারিশ সম্বলিত রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হয় জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদের কাছে। একই সঙ্গে রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতর জেলা শিক্ষাসংসদকে জানিয়ে দেয়, অবিলম্বে তারা যেন আগের প্যানেল সংশোধন করে পাঠিয়ে দেয়।
গত অগস্ট মাস থেকে রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতর বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও হাওড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষাসংসদ ওই প্যানেল পাঠায়নি বলে অভিযোগ। ফলে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াই আটকে যায়। এক দিকে যেমন চাকুরীপ্রার্থীরা অথৈ জলে পড়েন, অন্য দিকে, বহু স্কুলে শিক্ষকের অভাব তীব্র আকার নেয়। নিয়োগের দাবিতে চাকুরিপ্রার্থীদের বিভিন্ন সংগঠন রাজ্য সরকারের উপরে চাপ বাড়াতে থাকে। তার মধ্যে ছিল তৃণমূল অনুমোদিত পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষণ ছাত্র ইউনিয়নও। এই সংগঠনটির পক্ষ থেকে রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতরের সামনে বিক্ষোভ, অনশন প্রভৃতি করা হয়। স্কুলশিক্ষা দফতর সাফ জানিয়ে দেয়, প্রাথমিক শিক্ষাসংসদ থেকে প্যানেল তৈরি করে না পাঠালে তাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। এই অবস্থায় সব ক্ষোভ এসে পড়ে শিক্ষা সংসদের সভাপতি পুলকবাবুর উপরে। বিভিন্ন মহল থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি ওঠে।
পুলকবাবু বলেন, “বামফ্রন্টের আমলে তৈরি প্যানেলটি ছিল দুর্নীতিতে ভরা। সে কারণেই প্যানেলটি সংসদে আমি অনুমোদন করাতে চাইনি। এ কথা জানানো সত্ত্বেও রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতর থেকে আমাকে বার বার বলা হচ্ছিল প্যানেল পাঠাতে।” তাঁকে অপসারণের ‘পদ্ধতি’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পুলকবাবু। তাঁর কথায়, “আমাকে সরিয়ে দেওয়ার আগে শো-কজ করা হয়নি। সরিয়ে দেওয়ার আগে আমাকে আমার যুক্তি পেশ করার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। যাইহোক, তৃণমূলের এক জন অনুগত সৈনিক হিসাবে সরকারের এই সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিচ্ছি। কী আর করব?” অন্য দিকে, তৃণমূল অনুমোদিত পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষণ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পিন্টু পাড়ুই বলেন, “তিন বার উত্তরপত্র মূল্যায়ন হয়েছে। তারপরে রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতর পুলকবাবুকে প্যানেলটি তাদের কাছে পাঠাতে বলে। কিন্তু পুলকবাবুর নিজের জেদ বজায় রাখতে গিয়ে চাকুরীপ্রার্থীদের হতাশায় ফেলে দিয়েছিলেন। তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি আমরাও করেছিলাম। সরকার আমাদের দাবি মেনেছেন। আমরা কৃতজ্ঞ।” সদ্য নিযুক্ত সভাপতি অজয়বাবুর কথায়, “প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক নিয়োগকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.