আশায় হরিপুর নিয়েও
পরমাণু বিদ্যুৎ নিয়ে ‘ভুল’ ভাঙাটাই চ্যালেঞ্জ শক্তি কমিশনের
পূর্ব মেদিনীপুরের হরিপুরে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের আগে নানা রকম জরিপের কাজে নামতে রাজ্য সরকারের ছাড়পত্রের প্রতীক্ষায় বসে আছে পরমাণু শক্তি দফতর। ‘সেন্ট্রাল গ্লাস অ্যান্ড সেরামিক রিসার্চ সেন্টার’-এ বক্তৃতা দিতে এসে শুক্রবার এ কথা জানালেন পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্রীকুমারবাবুর বক্তৃতার বিষয় ছিল বিজ্ঞান-ঘেঁষা। শেষ মুহূর্তে তা পাল্টে যে বিষয় তিনি বেছে নেন, তা হল জনমানসে পরমাণু বিদ্যুৎ সম্পর্কে অহেতুক ভয় দূর করার চ্যালেঞ্জ। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, তাঁর দফতরের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, পরমাণু চুল্লির সংলগ্ন এলাকার সমুদ্রে মৎস্য শিকারের পরিমাণ কমে যায় বলে যে প্রচার রয়েছে, তা একেবারেই ভুল। বরং তাঁর দাবি, “সমীক্ষা প্রমাণ করছে, পরমাণু চুল্লি সংলগ্ন অঞ্চলে বাৎসরিক মৎস্য শিকারের পরিমাণ ঊর্ধ্বমুখী হয়।”
হরিপুরে পরমাণু চুল্লির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে শ্রীকুমারবাবু জানান, কিছু দিন আগেই তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলোচনা হয়েছে। তবে ওই আলোচনা হরিপুরে পরমাণু চুল্লি তৈরি হবে কি না, সে বিষয়ে নয়। তিনি বলেন, “ওই এলাকায় জনকল্যাণে আমরা কী কী কাজ করতে পারি, মুখ্যমন্ত্রী সে বিষয়েই আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন।” হরিপুরে শ্রীকুমারবাবুদের প্রকল্প তা হলে এখন ঠিক কোন জায়গায়? জবাবে তাঁর মন্তব্য, “আমরা রাজ্য সরকারের তরফে কিছু কিছু ছাড়পত্রের অপেক্ষায় আছি। সেগুলো পেলে প্রাথমিক কাজ শুরু করতে পারি।”
বক্তৃতায় শ্রীকুমারবাবু জানালেন, পরমাণু চুল্লি সংলগ্ন সামুদ্রিক এলাকায় মৎস্য শিকার সত্যিই কমে কি না, সেই প্রশ্ন ভাবিয়েছিল তাঁর দফতরকেও। শেষ পর্যন্ত এ ব্যাপারে সমীক্ষা শুরু হয়। তিনি বলেন, “একটা মিথ্যা প্রচার প্রথমেই দূর হওয়া দরকার। সরাসরি পরমাণু বিদ্যুৎজনিত তাপ থেকে সমুদ্রের জলের উষ্ণতা বাড়ে না। চুল্লি থেকে তাপ নিষ্কাশনের জন্য যে জল আলাদা করে ব্যবহার করা হয়, সেই জল সামান্য গরম হয়। যে হেতু ওই জল গিয়ে মেশে সমুদ্রে, তাই যেখানে মেশে সেখানে জলের উষ্ণতা একটু বাড়ে।” শ্রীকুমারবাবু জানান, এই জলের উষ্ণতা কতটা বাড়তে পারে, তারও ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিয়েছে পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “পর্ষদ বলেছে, উষ্ণতা বৃদ্ধি ৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত অনুমোদনযোগ্য। কিন্তু আমরা যে পরমাণু চুল্লিগুলি থেকে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি, সেগুলোতে কোনও ক্ষেত্রেই ৪.৫ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা বাড়ে না। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ওই পরিমাণ উষ্ণতা বৃদ্ধিতে মাছ বেশি ডিম পাড়ে। জলে মাছের খাবারের পরিমাণ বাড়ে। এরই ফলে সংলগ্ন এলাকায় মৎস্য শিকারের পরিমাণ কমে তো না-ই, বরং বাড়ে।” জাপানের ফুকুশিমা পরমাণু চুল্লিতে এক বছর আগেকার দুর্ঘটনার পরে পরমাণু বিদ্যুৎ নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও আশঙ্কা যে বেড়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে জনমানসে ভ্রান্তি নিরসনের কাজটাকে আরও বেশি গুরুত্ব সহকারে করার চেষ্টা করছেন শ্রীকুমারবাবুরা। তামিলনাড়ুর কুড়ানকুলামের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “ওখানে হঠাৎ প্রতিবাদ শুরু হয় তুচ্ছ এক ঘটনা থেকে। পরমাণু চুল্লিতে অতিরিক্ত সতর্কতার বিষয়টা এত গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হয় যে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের আগে নানান সতর্কতা নেওয়া হয়। এরই একটি হল, বিপদকালে মানুষকে স্থানান্তরের মহড়া। আমাদের বিজ্ঞানীরা যখন এ রকমই একটা মহড়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের গাড়ি করে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ায় মহড়া দিচ্ছিলেন, তখনই কেউ রটিয়ে দেয় সত্যি সত্যি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং তার ফলেই লোকজনকে সরানো হচ্ছে। মহড়ায় অংশ নিয়েও পরমাণু চুল্লির বিরুদ্ধে আপত্তি শুরু করে দেন স্থানীয় মানুষ।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.