|
|
|
|
বিধানসভা ভোট |
উপনির্বাচনে হারের কারণ খুঁজে নয়া প্রস্তুতি মোদীর |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
বিধানসভা ভোটের কয়েক মাস আগে উপনির্বাচনে হার! অশনিসঙ্কেত দেখছেন নরেন্দ্র মোদী। তাই দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে এখন থেকেই ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী।
বাইশ বছর ধরে গুজরাতের যে মানসা আসনটি বিজেপির দখলে ছিল, উপনির্বাচনে সেটাই ‘অপ্রতিরোধ্য’ মোদীর হাত থেকে ফস্কে গেল। উন্নয়নের হাত ধরে গোটা দুনিয়ায় স্বীকৃতি, জাতীয় রাজনীতিতে পা বাড়ানোর হাজারো চেষ্টা, রাজ্যের ২৬টি জেলায় অনশন, সংখ্যালঘুর মন জয় করা, পুরভোটে একশোর বেশি সংখ্যালঘু প্রার্থীকে জিতিয়ে আনা, সর্বোপরি গোটা গুজরাত জুড়ে ‘মোদীত্বে’র বন্দনা কোনও কিছুই কাজে এল না! মোদীর খাসতালুকে তাঁর নাকের ডগা দিয়ে রেকর্ড মার্জিনে আসনটি ছিনিয়ে নিল কংগ্রেস। গুজরাত থেকে নির্বাচিত সাংসদ অরুণ জেটলির কথায়, “গুজরাতে হার দলের কাছে নিঃসন্দেহে বড় ধাক্কা।”
এই ধাক্কা সামলাতেই এখন থেকে কোমর বেঁধে ভোটের গুটি সাজাতে নেমে পড়লেন মোদী। বিজেপির শীর্ষ সূত্রের মতে, হারের পরেই তার ময়নাতদন্তে নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। আলোচনায় চারটি বিষয় উঠে এসেছে। এক, এই আসনটিতে প্রাক্তন স্পিকার মঙ্গলদাস পটেল প্রয়াত হওয়ার পরে প্রার্থী নির্বাচন সঠিক হয়নি। দুই, দলের ভিতরেও কোন্দল রয়েছে। তিন, যে ভাবে মোদী হিন্দুত্ব ‘এজেন্ডা’ থেকে সরে এসে সংখ্যালঘুদের তুষ্ট করার দিকে যাচ্ছেন, নির্বাচনে তারও খেসারত দিতে হয়েছে। চার, খুব বেশি শহর কেন্দ্রিক উন্নয়নে গ্রামীণ এলাকা মনে করছে, তাদের উপেক্ষা করা হচ্ছে।
গত বিধানসভা নির্বাচনে মোদীর নেতৃত্বে ১৮২টি আসনের মধ্যে ১২২টিতেই জয়ী হয়েছিল দল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে সাবরমতী দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার কলঙ্ক মুছে মোদী যতই এগোনোর চেষ্টা করুন, দাঙ্গার ভূত এখনও তাঁকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। দলের নানান বিষয়ে বিজেপি নেতৃত্ব, এমনকী সঙ্ঘেরও রোষের মুখে পড়েছেন। সঙ্ঘের পছন্দের বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীর সঙ্গে সরাসরি সংঘাত বাধিয়ে বসে আছেন, অথচ বিধানসভা নির্বাচনের পর জাতীয় রাজনীতিতে পা-ও রাখতে চান। গুজরাতে বসেই তা নিয়ে নিয়মিত অঙ্ক কষছেন তিনি। কিন্তু মোদী নিজেকে যে ভাবে ‘দলের ঊর্ধ্বে’ ভাবতে শুরু করেছেন, তাতে সঙ্ঘ রুষ্ট। ফলে এ বছরের শেষে বিধানসভা নির্বাচন একার জোরেই জিততে হবে তাঁকে। এই নির্বাচনের ফলাফলের উপরেই মোদীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। ফলে উপনির্বাচনের হারের পরে কোনও ঝুঁকিই আর নিতে চাইছেন না মোদী।
মোদী ঘনিষ্ঠ নেতা পুরুষোত্তম রূপালার বক্তব্য, “এই হারকে মাথা পেতে স্বীকার করছি। কিন্তু এই ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে, তার জন্যও সতর্ক থাকছি।” আসন পুনর্বিন্যাসের পর এই প্রথম গুজরাতে বিধানসভা নির্বাচন হচ্ছে। তাতে বিভিন্ন শহর এলাকায় মোট ২৮টি কেন্দ্র বাড়ছে, যেখানে ভাল ফল করার সম্ভাবনা দেখছেন মোদী। কিন্তু উপনির্বাচনে হার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, গ্রামীণ এলাকার ক্ষোভও কমাতে হবে। মোদী সরকারের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, “গ্রামীণ এলাকাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী ৩৬টি স্থানে ‘সদ্ভাবনা মিশন’ করেছেন। তার মধ্যে শহর ছিল মাত্র ৮টি। বাকিগুলি গ্রাম। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও প্রকল্প করা হয়েছে।”
মোদীর কাছে উন্নয়ন সমস্যা নয়। সংখ্যালঘুর মন জয় করতে গিয়ে হিন্দু ভোট হাতছাড়া হচ্ছে কি না, সেটাই এখন গুরুত্ব দিয়ে পর্যালোচনা করছেন তিনি। পাশাপাশি কেশুভাই পটেলের মতো ব্যক্তিরা মোদীর উপরে অনেক দিন ধরেই অসন্তুষ্ট। উপনির্বাচনে পটেল সমাজের ভোট যে ভাবে কংগ্রেসের ঝুলিতে গিয়েছে, তা দেখে দলে বিক্ষুব্ধদের পাশে টানা প্রয়োজন বলে মনে করছেন রাজ্য নেতৃত্ব। মোদীর রাজ্যে উপনির্বাচনে জয়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব খুশি। কিন্তু নির্বাচনের প্রায় আট মাস আগে মোদী যে এর ফলে সতর্ক হয়ে গেলেন, সেই চিন্তাও রয়েছে কংগ্রেসে। তবে মোদী শিবিরের এক নেতার কটাক্ষ, “কংগ্রেসের পক্ষে রাজ্য দখল করা অসম্ভব। গত নির্বাচনে মোদীকে ‘মত কা সওদাগর’ বলে সনিয়া গাঁধী বিজেপিরই সুবিধা করেছিলেন। এ বারে রাহুল গাঁধী কবে গুজরাত যাবেন, তার অপেক্ষায় রয়েছি।” |
|
|
|
|
|