|
চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১... |
|
ফুটে ওঠে প্রকৃতি ও জীবনের এক অজানা রহস্য |
বিড়লা অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত হল
‘সোসাইটি অব কন্টেম্পোরারি আর্টিস্টস’-এর
সম্মেলক প্রদর্শনী। ঘুরে এলেন মৃণাল ঘোষ। |
সম্প্রতি বিড়লা অ্যাকাডেমিতে ‘সোসাইটি অব কন্টেম্পোরারি আর্টিস্টস’ দলের ৫২তম বার্ষিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল। ১৯৬০-এ প্রতিষ্ঠিত এই দলের শিল্পীদের কাজ নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজকের অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। আধুনিকতাবাদী রূপভাবনাকে তা নানা ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে। এবারের প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন ২২ জন শিল্পী। কাজের নিজস্ব ধরন থেকে সরে আসতে চেষ্টা করেছেন অনেকেই। বিকল্প শিল্প মাধ্যম বা ‘কাটিং এজ আর্ট’ নিয়ে এঁরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। কাগজ বা ক্যানভাসে রং-তুলিতে আঁকা চিত্রপ্রতিমা বহু ব্যবহারে জীর্ণ হয়ে গেছে। প্রকাশের নতুন কোনও অভিমুখ সেখানে আনা দুরূহ। আজকের জীবনের জটিলতাকে তা আর সর্বতোভাবে প্রকাশ করতে পারে না। তাই বিকল্প মাধ্যমের দিকে ঝুঁকছেন এঁরা। এই প্রদর্শনীতে ষাটের দশকের শিল্পীরা অনেকেই নিজস্ব প্রকাশভঙ্গিতে স্থিত থেকেছেন। কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মের অনেকেই বিকল্পের সন্ধান করেছেন। সব ক্ষেত্রে তাঁরা যে অভিনব রূপ তৈরি করতে পেরেছেন, তা বলা যায় না।
নিরঞ্জন প্রধান তাঁর পরিচিত রূপরীতি থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন। ফাইবার গ্লাস ও স্টিল টিউব দিয়ে নির্মিত ‘সাউন্ড পলিউশন হ্যামারিং ইন ব্রেন’ শীর্ষক কাজটিতে প্রথাবিরোধী রীতিতে তিনি যে সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ব্যক্ত করেছেন, তা তীব্র অভিঘাত সৃষ্টি করতে পেরেছে। মানিক তালুকদার রিলিফে ঐতিহ্য-অন্বিত জ্যামিতিক বিমূর্ততা নিয়ে কাজ করেছেন। সুনীলকুমার দাসের পাথর ও ব্রোঞ্জের ‘রূপসী’ শীর্ষক তিনটি রচনা গভীর কোনও ভাবনার উদ্রেক করেনি। বিমল কুণ্ডুর চামড়ার কাজ দু’টি তাঁর নিজস্ব আঙ্গিকের সুষ্ঠু প্রকাশ। সাধন চক্রবর্তী ছবির বদলে এ বার ব্রোঞ্জে ভাস্কর্য করেছেন। ষাটের দশকের প্রকাশভঙ্গির পুনরাবর্তন হলেও তা যথেষ্ট নন্দনসমৃদ্ধ।
|
|
শিল্পী: অতনু ভট্টাচার্য |
ভাস্কর্য করেছেন তরুণতর প্রজন্মের পার্থ দাশগুপ্তও। লোহা ও ইস্পাতে নির্মিত ‘মাই এচিং প্লেট’ বিমূর্তবোধের প্রথাবিরোধী রচনা। অতনু ভট্টাচার্য ইনস্টলেশন ধরনের কাজ করেছেন। কিন্তু তা নতুন কোনও মাত্রা আনেনি। কিশোর চক্রবর্তীর ‘টেররিজম ইনসাইড আউটসাইড’ শীর্ষক ইনস্টলেশনধর্মী দু’টি রচনার একটিতে দেখা যাচ্ছে বড় কড়াইতে লাল রক্ত ফুটছে, আর তা থেকে উঠে আসছে অজস্র কাঁকড়া।
আদিত্য বসাকের ‘ফোক টেলস’ শীর্ষক চিত্রীয় রচনাটি খুবই সমৃদ্ধ ও গভীর রূপরীতির দৃষ্টান্ত। অতীন বসাকের ‘রোড সাইড গড’ শীর্ষক আলোকচিত্র ভিত্তিক তিনটি রচনাতেই তিনি নিজেকে অতিক্রম করতে চেষ্টা করেছেন। প্রবীণ শিল্পীদের মধ্যে সুনীল দাসের সাদার উপর সাদা দু’টি ছাপচিত্রই বিমূর্ত অভিব্যক্তির প্রকাশে অত্যন্ত সমৃদ্ধ রচনা।
বাকি সব শিল্পী নিজস্ব রূপরীতিতে কাজ করেছেন। কেউ কেউ সামান্য পরিবর্তনও এনেছেন। অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্তালিও মাধ্যমে দশটি ছোট ফ্রেমের সমাহারে গড়ে তুলেছেন স্নিগ্ধ লাবণ্যের বড় ছবি। বি.আর.পানেসর অ্যাক্রিলিক মাধ্যমে এঁকেছেন ‘এনভায়রনমেন্ট’ শীর্ষক তাঁর নিজস্ব আঙ্গিকের নিসর্গ। নির্জনতা ভেদ করে এ বারে কিছু মানুষও এসেছে তাতে। দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় এচিং ও মিশ্রমাধ্যমে আধ্যাত্মিকতা আশ্রিত যে রূপরীতি তৈরি করেন তা বিমূর্ত চিত্রচর্চায় নতুন মাত্রা নিয়ে এসেছে। গণেশ হালুই তাঁর তিনটি ড্রয়িংধর্মী রচনায় তাঁর বিমূর্তায়ন পদ্ধতিকে আরও পরিশীলিত করেছেন। লালু প্রসাদ সাউও তাঁর অ্যাক্রিলিকের দু’টি ছবিতে রূপান্তরিত করেছেন তাঁর নিজস্ব রূপপদ্ধতি। কৌতুকদীপ্ত সরস অবয়বী প্রতিমাকল্প থেকে এ বার এসেছেন বর্ণিল বিমূর্ততায়। সনৎ কর টেম্পারায় এঁকেছেন তাঁর নিজস্ব আঙ্গিকের কল্পরূপাত্মক রূপকল্প। শিব ও পার্বতীর অনুষঙ্গ এনেছেন একটি ছবিতে। সুন্দরী নারীর মুখাবয়বের ভিতর সুহাস রায় এনেছেন ‘রাধা’র অনুষঙ্গ।
দেশীয় আঙ্গিক নিয়ে দীর্ঘকাল নিবিষ্ট চর্চা করছেন মনোজ দত্ত। এ বারের পাঁচটি ছবি এঁকেছেন কালি-তুলি ও টেম্পারায়। মনোজ মিত্র তাঁর অনামা তিনটি ছবি কালি-কলম ও মিশ্র মাধ্যমে এঁকেছেন। অবয়বের ভিতর দিয়েই তিনি প্রকৃতি ও জীবনের নানা অজানা রহস্যকে তুলে ধরেন। প্রদীপ মৈত্র জলরঙের নিপুণ শিল্পী। মহাভারতের চরিত্র নিয়ে তিনি এঁকেছেন চারটি ছবি। প্রতিটিই নিবিড় রূপায়ণে উজ্জ্বল। |
|