পেটে গাঁথা একটি ছুরি। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটছে। দুপুর তিনটের ভিড়ে-ঠাসা হাওড়া স্টেশনে ওই অবস্থায় ছুটছেন এক ব্যক্তি। ছুটতে ছুটতে প্ল্যাটফর্ম ইনস্পেক্টরের ঘরের সামনে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন তিনি। পেটে ছুরিটা তখনও বিঁধে রয়েছে। না, কোনও সিনেমার শ্যুটিং নয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে হাওড়া স্টেশন-চত্বরে জলজ্যান্ত দেখা গেল এই দৃশ্য। |
পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই ব্যক্তির নাম সুবোধচন্দ্র রায় (৪৮)। তিনি মালদহের গাজল থানার জামডাঙা এলাকার বাসিন্দা। দিনেদুপুরে পেটে ছুরি বেঁধা অবস্থায় এক জনকে পড়ি-মরি করে ছুটে আসতে দেখে হাওড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ইনস্পেক্টরের ঘরের সামনে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পর গোটা চত্বরে শোরগোল পড়ে যায়। সঙ্গে-সঙ্গে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায় রেল পুলিশ। সেখানে অস্ত্রোপচার করে তাঁর পেট থেকে ইঞ্চিছ’য়েক লম্বা ছুরিটি বের করা হয়। অবশ্য রাত পর্যন্ত সুবোধবাবুর জ্ঞান না-ফেরায় তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারেনি পুলিশ। অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকেরা জানান, ওই ব্যক্তি মাদকাসক্ত ছিলেন।
হাওড়া জিআরপি থানার ওসি অশোককুমার দত্ত বলেন, “সুবোধবাবুকে কারা খুন করার চেষ্টা করল তা স্পষ্ট নয়। ওঁর সঙ্গে কথা বললে বিষয়টি বোঝা যেতে পারে। আমরা অপেক্ষা করছি উনি কখন হুঁশ ফিরে পান।” সুবোধবাবুর পকেটে তাঁর মোবাইল ফোনটি পেয়েছে পুলিশ। ওই মোবাইল থেকেই তাঁর বাড়িতে খবর দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকেই পুলিশ জানতে পেরেছে, সুবোধবাবু পেশায় চাষী। উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে একটি মেলায় যাবেন বলেই তিনি মালদহ থেকে হাওড়া স্টেশনে এসেছিলেন। পুলিশি তদন্তে প্রকাশ, এ দিন দুপুরে তিনি সাবওয়ের দিক থেকে আসার সময় কেউ বা কারা তাঁর পেটে ফল কাটার ছুরিটি ঢুকিয়ে দেয়।
তবে কেন এমন ঘটল পুলিশের কাছে এখনও তার উত্তর নেই। হাওড়া স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে সাবওয়ে দিয়ে বাইরে চলে না-গিয়ে সুবোধবাবু কেন ফের হাওড়া স্টেশনের দিকেই যাচ্ছিলেন তা নিয়েও ধোঁয়াশায় পুলিশ। তবে হাওড়া স্টেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ভিড়েঠাসা সাবওয়েতে এ ভাবে দিনেদুপুরে ছুরিকাহত হওয়ার ঘটনায় সামগ্রিক ভাবে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। |