শিবপ্রসাদের সঞ্চিত অর্থ তাঁরই ভূগোল বিভাগকে
ভূতত্ত্বে স্নাতকোত্তর করার পরে সারা জীবন ভূগোল ও ভূবিদ্যা নিয়েই গবেষণা করেছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা তিনিই।
শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।
শুধু বিভাগের প্রতিষ্ঠা করাই নয়। ভূগোলের প্রতি ভালবাসা এতটাই গভীর ছিল যে, তাঁর মৃত্যুর পরেও যাতে পঠনপাঠন ও গবেষণার কাজ এগোতে পারে, সে জন্য কিছু টাকা রেখে গিয়েছিলেন শিবপ্রসাদবাবু। ৩০ বছর আগে জমানো সেই টাকার পরিমাণ এখন বেড়ে ৪০ লক্ষ। শিবপ্রসাদবাবুর মেয়ে-জামাই সম্প্রতি সেই টাকা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে তুলে দিয়েছেন। তার থেকেই শুরু করা হবে ভূগোল বিভাগের একটি বিশেষ ফেলোশিপ।
শিবপ্রসাদবাবুর মেজো মেয়ে ও জামাই ইল্লিকা ও অনিলকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকেন। গত বছর পুজোর পরে ওঁরা কলকাতায় এসেছেন বাবার জমানো টাকা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়ার জন্যই। সল্টলেকের বাড়িতে বসে এক পড়ন্ত বিকেলে স্মৃতিচারণ করছিলেন সত্তরোর্ধ্ব ইল্লিকাদেবী। জানালেন, ১৯০৩ সালে শান্তিপুরে জন্ম শিবপ্রসাদের। সেখানকার স্কুলেই পড়াশোনা। পরে কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজে স্নাতক হয়ে স্নাতকোত্তর পড়তে যান বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি। পরে লন্ডন থেকে গবেষণা শেষ করে ফিরে আসেন কলকাতায়।
শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের (বাঁ দিকে) মেজো মেয়ে ইল্লিকা।-নিজস্ব চিত্র
১৯৪১-এর অগস্টে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন শিবপ্রসাদ। ইল্লিকাদেবী বলেন, “আমিও ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে বাবার কাছেই জিওমর্ফোলজি পড়েছি।” ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের একটি রাজ্যের নামকরণও করেছিলেন এই বঙ্গসন্তান মেঘালয়। ওই অঞ্চলের মালভূমি নিয়ে গবেষণা রয়েছে তাঁর। এ ছাড়া কাজ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের নদী-মৃত্তিকা, কলকাতা ও ২৪ পরগনার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, রাঁচির মালভূমি ইত্যাদি বহু বিষয়ে। বিভিন্ন অঞ্চলের মানচিত্র নিয়েও গবেষণা রয়েছে তাঁর। শিবপ্রসাদের লেখা ‘বেঙ্গল ইন ম্যাপস’ এ রাজ্যের মানচিত্র বোঝার জন্য এখনও বহুল ব্যবহৃত। আন্তর্জাতিক ভূগোল ইউনিয়নের সভাপতিও ছিলেন শিবপ্রসাদ। ১৯৮৯ সালে কলকাতাতেই মারা যান তিনি।
ইল্লিকাদেবী বলেন, “বাবার ইচ্ছে ছিল, ওঁর নামে একটা গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হোক। সেটা করতে পারলাম না। তবে যে বিভাগ ওঁর নিজের হাতে গড়া, সেখানেই যাতে ওঁর নামটা স্মরণীয় করে রাখা যায়, সে জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাবার সঞ্চয়টা দিলাম।” ওই টাকায় আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ‘এস পি চ্যাটার্জি মেমোরিয়াল ফেলোশিপ’ চালু করা হবে বলে জানান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বাসব চৌধুরী।
বিদ্যালয়কে নিজের সঞ্চিত অর্থ দান করে গিয়েছেন শিক্ষক, এমন ঘটনা অনেক আছে। কিন্তু উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এমন নজির কিন্তু বেশি নেই। বাসববাবু বলেন, “শিক্ষকদের তরফে এমন অনুদান দেওয়ার নজির বিশ্ববিদ্যালয়ে খুবই কম। কিছু বছর আগে জৈব রসায়ন বিভাগের প্রয়াত অধ্যাপক বীরেশচন্দ্র গুহর নামে ওঁর স্ত্রী ফুলরেণু গুহ কয়েক কোটি টাকা অনুদান দিয়েছিলেন। হাতে গোনা এমন কিছু উদাহরণই রয়েছে মাত্র।”
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে টাকাটা তুলে দিতে পেরে খুবই খুশি ইল্লিকাদেবী। তার যথাযথ ব্যবহার হবে জেনে আশ্বস্তও। তিনি বলেন, “বাবার এই ইচ্ছাকে পূর্ণ করার জন্যই এখানে এসেছিলাম। এখন আমরা নির্ভার।” শিবপ্রসাদের হাতে তৈরি বিভাগে তাঁরই সঞ্চিত অর্থে তাঁর নামাঙ্কিত ফেলোশিপ শিক্ষাব্রতীকে স্মরণ করার এর চেয়ে ভাল উপায় আর কীই বা হতে পারত!
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.