আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডে দু’টি পৃথক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল এক রিকশাচালকের, আহত হন আরও চার জন। যার জেরে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর দেড়টার মধ্যে দফায় দফায় পথ অবরোধ করে উত্তেজিত জনতা। উত্তর ও পূর্ব কলকাতার বিভিন্ন এলাকা শহরের অন্য অংশ থেকে কার্যত বিছিন্ন হয়ে পড়ে। প্রায় ঘণ্টা তিনেক রাজাবাজার থেকে শিয়ালদহ উড়ালপুল পর্যন্ত রাস্তা অবরুদ্ধ থাকে। দুর্ভোগে নাকাল হতে হয় নিত্যযাত্রী এবং পরীক্ষার্থীদের।
পুলিশ জানায়, বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ শিয়ালদহমুখী একটি বাস রাজাবাজার ট্রাম ডিপোর কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টো দিকের লেনে গিয়ে একটি ট্যাক্সিকে ধাক্কা মারে। ট্যাক্সিটি গিয়ে পড়ে এক মোটরবাইকের উপরে। আহত হন চার ব্যক্তি। তাঁদের তিন জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। |
এর পরে দুপুর সওয়া একটা নাগাদ ইএসআই হাসপাতালের কাছে ফের দুর্ঘটনা। যে রেকার দিয়ে ঘাতক বাসটিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেটিরই ধাক্কায় জখম হন আনোয়ার হোসেন (৫৬) নামে এক রিকশাচালক। আশঙ্কাজনক অবস্থায় এনআরএসে ভর্তি করা হলে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। এর পরে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। আশপাশে দাঁড়ানো বাস ও গাড়ির উপরে শুরু হয় ইটবৃষ্টি। যার জেরে বিপদে পড়ে স্কুল-ফেরত পড়ুয়ারাও।
প্রথম দুর্ঘটনার পরেই স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে রাজাবাজার মোড় অবরোধ করেন। ফুলবাগান থেকে রাজাবাজারমুখী রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ে সব গাড়ি। উল্টো দিকে রাজাবাজার মোড় থেকে টাকী স্কুলের মোড় পর্যন্ত রাস্তাও বন্ধ থাকে। ফলে মানিকতলা থেকে শিয়ালদহের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এক দিকে মৌলালি, অন্য দিকে খন্না পর্যন্ত সব গাড়ি থমকে যায়। বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে গেলে উত্তেজিত জনতা তাদের ঘিরেও বিক্ষোভ দেখায়।
এ দিন উচ্চ মাধ্যমিক, আইসিএসই এবং আইএসসি পরীক্ষা ছিল। দীর্ঘ ক্ষণ উত্তর কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা অবরুদ্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়ে পরীক্ষার্থীরা। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মহাত্মা গাঁধী রোড থেকে মানিকতলার মধ্যে থাকা সমস্ত কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়ে। তাদের অনেকটা হেঁটে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে হয়েছে। উত্তরমুখী গাড়িগুলিকে মহাত্মা গাঁধী রোড ও আমহার্স্ট স্ট্রিট দিয়ে এবং দক্ষিণমুখী গাড়িগুলিকে বিবেকানন্দ রোড, আমহার্স্ট স্ট্রিট দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কেউ কেউ চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ দিয়েও গাড়ি ঘোরান।
দুর্ভোগের অবশ্য এখানেই শেষ নয়। অসুস্থদের নিয়ে যাওয়া ট্যাক্সি বা গাড়িও অবরোধকারীরা আটকে দেন বলে অভিযোগ। কলকাতা পুলিশের কর্তারা গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শেষে লাঠিও চালাতে হয় পুলিশকে। এ দিকে, দুর্ঘটনার পরেই ওই এলাকায় পৌঁছন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। তাঁকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়েরা। অভিযোগ, গত এক মাসে ওই এলাকায় তিনটি দুর্ঘটনায় একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনা ঠেকাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। |