মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগের ‘প্রমাণ’ থাকা সত্ত্বেও ‘রাজনৈতিক কারণে’ অধুনা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিশির অধিকারী ও তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে বাম সরকারের আমলে গ্রেফতার করা হয়নি বলে মন্তব্য করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর আরও বক্তব্য, “আমরা ওঁদের বলেছিলাম, মাওবাদীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করুন। ওঁরা আমাদের বলেছিলেন, মাওবাদীরা যাতে ঘাঁটি গড়তে না-পারে তা দেখবেন। কিন্তু সে কথা তাঁরা রাখেননি!”
সূর্যবাবুর ওই মন্তব্যে স্বভাবতই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী দলনেতার ওই বক্তব্যে এই ইঙ্গিত স্পষ্ট যে, শিশির-শুভেন্দুর সঙ্গে নন্দীগ্রাম-পর্বে তাঁদের ‘যোগাযোগ’ ছিল। তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ যে নন্দীগ্রামে মাওবাদীদের ‘সাহায্য’ করেছিল, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-সহ সিপিএম নেতারা বার বার সে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু যে ভাবে এ দিন প্রকাশ্যে সূর্যবাবু শিশির-শুভেন্দুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন, তা আগে হয়নি। মাওবাদীদের কেউ সাহায্য করলে স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশ তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। সে ক্ষেত্রে শিশির-শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না-নেওয়া কি তৎকালীন সরকারের ‘দুর্বলতা’ নয়? জবাবে সূর্যবাবু বলেন, “ওঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না-নেওয়া আপনারা (সংবাদমাধ্যম) দুর্বলতা বলতে পারেন। কিন্তু গণতন্ত্রে এটা প্রয়োজন। সব কিছু কেবল আইন-আদালতের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা উচিত নয়।”
দিল্লি থেকে শিশিরবাবু বলেন, “সব বানানো কথা! আমি বা শুভেন্দু কাউকে কোনও কথা দিইনি! কেন দেব? ওরা আমার আর শুভেন্দুর নামে বহু মিথ্যা মামলা সাজিয়েছিল। কিন্তু তার একটাও ধোপে টেকেনি। বরং আমাদের হারাতে পশ্চিম মেদিনীপুরে ওরাই মাওবাদীদের সাহায্য নিয়েছে। ভোটের ফলাফলেই তা স্পষ্ট।” সূর্যবাবুকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ করে শিশিরবাবু বলেন, “নন্দীগ্রামে মাওবাদীদের সাহায্য করার ব্যাপারে যদি বাম সরকারের হাতে প্রমাণ থাকত, তা হলে তখন ওঁরা ব্যবস্থা নেননি কেন? এখন কেন সূর্যবাবু এ সব বলছেন?”
ঘটনার সূত্রপাত লক্ষ্মণ শেঠ-সহ সিপিএম নেতাদের গ্রেফতারের বিরোধিতা করে সূর্যবাবুর ডাকা মঙ্গলবারের সাংবাদিক বৈঠকে। বিধানসভার মিডিয়া-সেন্টারে সর্বসমক্ষেই তিনি বলেন, বাম আমলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বহু নেতা-নেত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারযোগ্য অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁদের গ্রেফতার করা হয়নি। শিশির-শুভেন্দুর নাম না-করে সূর্যবাবু বলেন, “পূর্ব মেদিনীপুরের নেতৃস্থানীয় প্রাক্তন বিধায়ক, বর্তমান সাংসদরা মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। নন্দীগ্রামে মাওবাদীদের সাহায্যও করেছিলেন। পুলিশের কাছেও সেই অভিযোগ ছিল। কিন্তু তাঁদের গ্রেফতার করা হয়নি।” কেন হয়নি? সূর্যবাবু বলেন, “তৃণমূলের ওই নেতৃস্থানীয়দের আমরা রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করতে চেয়েছি। রাজনৈতিক কারণেই তাঁদের গ্রেফতার করা হয়নি।”
নাম না-করলেও সূর্যবাবু যে শিশির-শুভেন্দুর দিকেই আঙুল তুলেছেন, তা স্পষ্ট ছিল। সেই প্রেক্ষিতেই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, শিশির-শুভেন্দুর সঙ্গে মাওবাদীদের যোগাযোগের প্রমাণ বামফ্রন্ট সরকারের হাতে থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁদের তখন গ্রেফতার করা হয়নি? জবাবে সূর্যবাবু জানান, “নন্দীগ্রামে মাওবাদীদের সাহায্য করলেও হত্যাকাণ্ড বা লুণ্ঠনের সরাসরি কোনও অভিযোগ তাঁদের বিরুদ্ধে ছিল না। রাজনৈতিক কারণেই তাঁরা মাওবাদীদের সাহায্য করেছিলেন। সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে মাওবাদীদের সাহায্য না করার ব্যাপারে আশ্বাসও দিয়েছিলেন।”
বাম আমলে তাঁরা কি রাজ্য সরকারকে এমন কোনও ‘আশ্বাস’ দিয়েছিলেন? যে কারণে পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি? শিশিরবাবু বলেন, “এ সব হাস্যকর কথার কী জবাব দেব? বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক চলাকালীন একটি খুন হয়। আমি ছিলাম সেই বৈঠকে বিধানসভায়। অথচ, আমার বিরুদ্ধে সেই খুনের মামলা করা হয়েছিল। যারা এ কাজ করতে পারে, তারা যা খুশি তাই বলতে পারে!” |