পির সাহেবের মেলায় দুই গোষ্ঠীর গোলমালের জেরে কেতুগ্রামে খুন হলেন সালারের এক যুবক। মঙ্গলবার ওই ঘটনার জেরে রাত পর্যন্ত পুলিশ ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদের সালারে পিলখুণ্ডি গ্রামে পির সাহেবের মেলা কারা পরিচালনা করবে, তা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই গোলমাল চলছিল। এ দিন বিকেলে বর্ধমানের কেতুগ্রামে বহড়ান রেলস্টেশনের কাছে ওই পিলখুণ্ডিরই বাসিন্দা শাহেনশা শেখকে (২২) গুলি করে দুষ্কৃতীরা। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “মেলা পরিচালনা নিয়ে গোলমালের জেরেই ওই যুবক খুন হয়েছেন। ধৃতদের কাছ থেকে একটি স্টেনগান, ৮ রাউন্ড কার্তুজ ও বোমা পাওয়া গিয়েছে। ধৃতদের বর্ধমান জেলা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে।” মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা সাংসদ অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, শাহেনশা তাঁদের কর্মী, সিপিএমের লোকেরা তাঁকে খুন করেছে। তবে সিপিএম তা অস্বীকার করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বিকেলে বহড়ান স্টেশনের পূর্ব দিকে একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন শাহেনশা ও তাঁর এক বন্ধু। সালারের দিক থেকে আট জন হেঁটে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীরা ঘিরে ধরলে দু’জন পালানোর চেষ্টা করে। শাহেনশাকে পরপর তিনটি গুলি করে দুষ্কৃতীরা। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁর সঙ্গী কোনও ক্রমে কাটোয়ার দিকে পালিয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচান। পরে কেতুগ্রাম থানার আইসি আব্দুল নস্কর বাহিনী নিয়ে গিয়ে মৃতদেহ তুলে আনেন।
সালার থানা সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার পির সাহেবের মেলায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বচসা হয়। তার জেরে সোমবার দুপুরে সালার কলেজ মোড়ে এক গোষ্ঠীর হাতে আক্রান্ত হন পিলখুণ্ডি গ্রামের মানোয়ার শেখ, আহসান শেখ ও মহম্মদ হানিফ। দু ’জন কান্দি মহকুমা হাসপাতাল এবং এক জন বহরমপুর নিউ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ওই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন শাহেনশা শেখ। ওই গোলমালের পর থেকে তিনি মুর্শিদাবাদেরই পুনুষি গ্রামে লুকিয়ে ছিলেন। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার বলেন, “শাহেনশাকে ধরার জন্য সালার থানার ওসি সুব্রত মজুমদার অভিযান চালাচ্ছিলেন। সেই সময়েই খবর আসে, আট দুষ্কৃতী পিলখুণ্ডি গ্রামের দিকে আসছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্যে পুলিশ তাদের ধরে ফেলে।” ধৃতেরা হল পিলখুণ্ডি গ্রামের বিল্লাল শেখ, টিটু শেখ, ক্যালেন্ডার শেখ, মিঠু শেখ, স্থানীয় কুলুড়ি গ্রামের নিরজ শেখ, নুর ভোদা শেখ, খিদির শেখ ও কদর শেখ। দক্ষিণখণ্ড ও পুনুষি গ্রামের মাঝে হন্যের মাঠে তাদের ধরা হয়। কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, “নিহত যুবক আমাদের কর্মী। ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করত। সে কারণেই সিপিএমের দুষ্কৃতীরা প্রকাশ্যে তাকে খুন করেছে।” সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য পাল্টা বলেন, “কংগ্রেস-তৃণমূল এবং মেলা কমিটির দ্বন্দ্বেই ওই যুবক খুন হয়েছে। এর সঙ্গে সিপিএমের কোনও সম্পর্ক নেই।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি মহম্মদ আলি বলেন, “ওই খুনে আমাদের কেউ জড়িত নয়।” |