কাঁচের ভারি দরজা ঠেলতেই, হালের আসবাবের আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে কম্পিউটার, এলসিডি স্ক্রিন। রিনরিনে স্পিল্ট এসি-তে ঝিম মেরে আছে ভারি পর্দার ঘরটা। হালের পোশাকে সদ্য তরুণীর ‘কর্পোরেট’ হাসি। টেবিলের ওপারে যিনি উঠে দাঁড়িয়ে ‘ইয়েস, কী সাহায্য করতে পারি বলুন’, ভঙ্গিতে যথেষ্ট ভরসা।
বহররুমপুর শহরে দোতলার সাজানো ফ্ল্যাটের ওই দফতরে গিয়ে প্রথমে একটু অস্বস্তিতেই পড়েছিলেন লালবাগের এসডিপিও।, ‘ঠিক জায়গায় এলাম তো!’ মিনিট পনেরোর কথা বার্তায় অবস্য ভুলটা ভেঙে গিয়েছিল তাঁর। যখন টেবিলের ওপার থেকে ঝুঁকে পড়ে ভদ্রলোক জানিয়ে ছিলেন, “রাজ্য পুলিশে কনস্টেবল হতে চাইলে সাড়ে তিন আর কলকাতা পুলিশে পাক্কা চার লাখ পড়বে কিন্তু। তবে চাকরি নিশ্চিত, চোখ বুজে ভরসা করতে পারেন!”
বহরমপুরের চুঁয়াপুর এলাকায় ‘ইউনিক রুর্যাল ডেভলপমেন্ট সোসাইটি’, যে ‘ঠিক জায়গা’ বুঝতে আর দেরি হয়নি লালবাগের মহকুমা পুলিশ অফিসার তন্ময় সরকারের। চাকুরি প্রার্থী সেজে ওই সংস্থার অফিস্ েগিয়ে তাঁকে শুনতে হয়েছিল রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল পদের জন্য সাড়ে তিন লক্ষ এবং কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল পদের জন্য ৪ লক্ষ টাকা দিলেই চাকরি পাকা।
এ ছাড়াও রাজ্য ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর থেকে আধা সামরিক জওয়ান পদেও নিয়োগের জন্যও বাড়তি অর্থ চাওয়া হয় ওই পুলিশ অফিসারের কাছ থেকে। শুধু তাই নয়, চাকরি পেতে হলে তাঁদের দফতরে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে সংস্থায় নাম নথিভুক্তও যে আবশ্যক, জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল তা-ও।
চাকরি দেওয়ার নামে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে ওই সংস্থার চার যুবককে শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যায় বহরমপুরের চুঁয়াপুর এলাকা থেকে ওই প্রতারণা চক্রের মূল পাণ্ডা বরুণ মণ্ডল, দেবজ্যোতি দে, ইনারুল শেখ ও সাজারুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের মঙ্গলবার বহরমপুরের সিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক শ্যামসুন্দর দাস তাদের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “বিভিন্ন সরকারি দফতরে চাকরি দেওয়ার নাম করে ভূয়ো কর্মসংস্থান কেন্দ্র খুলে বসেছিল ওই চার জন। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়েও চাকরি দেয়নি ওই সংস্থার সদস্যরা। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। শেষ পর্যন্ত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ওই সংস্থায় হানা দিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। সংস্থার কার্যালয় থেকে নগদ ৪ লক্ষ টাকাও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।”
মাস ছয়েক আগে নামে একটি ভূয়ো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা খোলে লালবাগ সাহানগরের বরুণ মণ্ডল। যদিও স্বেচ্ছাসেবী ওই সংস্থার স্বপক্ষে কোনও সরকারি নথি তারা পুলিশকে দেখাতে পারেনি। পরে ওই সংস্থার সদস্য হিসেবে বহরমপুর লাগোয়া ভাকুড়ির দেবজ্যোতি দে এবং ইনারুল শেখ ছাড়াও লালবাগের মুলোডাঙার বাসিন্দা সাজারুল ইসলাম যোগ দেয়। সংস্থার তরফে সরকারি বিভিন্ন দফতরে নিশ্চিত চাকরি দেওয়ার প্রলোভনও দেওয়া হত। চাকরির আশায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তের চাকুরি প্রার্থীরা ওই সংস্থায় নাম লেখাতে থাকেন। ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে নাম নথিভুক্ত করার পরে বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে ছ-মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়ারও বন্দোবস্ত করে তারা। হুমায়ুন বলেন, “ওই সংস্থার খাতায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ৯৫ জন চাকুরি প্রার্থীর নাম নথিভুক্ত রয়েছে।”
এর পরে গত ১৫ দিন ধরে ওই সংস্থার উপরে নজরদারি চালানোর পরে পুলিশ সোমবার সন্ধ্যায় ওই ভূয়ো সংস্থার কার্যালয়ে হানা দিয়ে চার জনকে গ্রেফতার করে। পুলি শ জানান, চাকুরিপ্রার্থী ৯৫ জনের কাছ থেকে ধৃত ব্যক্তিরা ১৮ লক্ষ টাকা হাতিয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমনা। তবে ওই টাকার পরিমাণ আরও বাড়বে। |